নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেটে দুর্দান্ত এক টেস্ট জয়ে যখন বাংলাদেশ ক্রিকেটে আনন্দ উৎসব, তখন এই সংস্করণের আঁতুরঘরখ্যাত টুর্নামেন্ট জাতীয় লিগে (এনসিএল) ঘটে যাওয়া কিছু অনিয়মের অভিযোগ উঠে এসেছে দৈনিক কালবেলার অনুসন্ধানে। সিন্ডিকেটে জিম্মি দল কিংবা অর্থের অনিয়ম থেকে শুরু করে শৃঙ্খলার নামে যোগ্য খেলোয়াড়কে বাদ দিয়ে চলছে দায়সারার জাতীয় লিগ। যেনতেনভাবে যাকে-তাকে খেলিয়ে লিগ শেষ করতে চায় বিভাগগুলো। অথচ টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতির জন্য এই টুর্নামেন্টের পেছনে
বছরে কোটি কোটি টাকা অর্থ ব্যয় করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বোর্ডের অর্থায়নে হওয়া টুর্নামেন্টে এমন অনিয়ম
নিয়ে কালবেলার ক্রীড়া প্রতিবেদক ওমর ফারুকের ধারাবাহিক চার পর্বের প্রতিবেদনের আজ প্রথমটি...
এনসিএলের সর্বশেষ দুই মৌসুমে টায়ার-২ থেকে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে বরিশাল বিভাগ। ২০২২ সালে দুই ম্যাচ জিতলেও এবার মাত্র একটিতে জিতেছে তারা। এর মধ্যে দুবারই দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬ ও ৫৪ রানে গুঁড়িয়ে যাওয়ার লজ্জা আছে দলটির। একই সঙ্গে এ মৌসুমে একবারও আড়াইশ পেরোনো ইনিংস খেলতে পারেনি তারা; দুইশর নিচে গুঁড়িয়ে যাওয়ার রেকর্ড আছে দুবার। দলটির ব্যাটিং-বোলিং অন্যান্য দলের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় ব্যাপক ভারসাম্যহীনতা। গত কয়েক বছরে অন্য বিভাগের খেলোয়াড়দের মাধ্যমে সেটা পূরণ করা গেলেও এবার ঘটেছে পুরো ভিন্ন ঘটনা।
বরিশাল ও পিরোজপুরের ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে , নামমাত্র প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে খেলেই জায়গা হয়ে যাচ্ছে এনসিএল দলে। জানা গেছে, প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ থেকে এনসিএল পর্যন্ত আট মাসের যে বিরতি ছিল; সেই সময়টাতে খেলা নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন কয়েকজন ক্রিকেটার। প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট সামনে রেখে কোনো ধরনের প্রস্তুতির সঙ্গে ছিলেন না তারা—এমন অভিযোগের আঙুল উঠেছে দলের দুই ক্রিকেটার জাকারিয়া মাসুদ ও আবু সায়েম চৌধুরীর বিরুদ্ধে। কয়েক বছর না খেলা জাকারিয়া নাকি শুধু প্রথম বিভাগ খেলেই সুযোগ পান এনসিএলে। এ ছাড়া পুরো ফিট না থেকেও ছয় ম্যাচের পাঁচটিতে বরিশালের একাদশে ছিলেন সালমান হোসেন। আর প্রিমিয়ার লিগে মাত্র এক ম্যাচ খেলা নুরুজ্জামানেরও সুযোগ মিলেছে দুই ম্যাচের একাদশে। ২০২২-২৩ মৌসুমে প্রথম বিভাগে দুই ম্যাচে ২২ রান করা শচী চৌধুরীও ছিলেন দলের সঙ্গে। একটি বিভাগীয় দলে এত অনিয়ম কীভাবে সংঘটিত হয়েছে? কেন এমন দায়সারা দল করে খেলা চালিয়ে গিয়েছিল বরিশাল? টেস্ট খেলোয়াড় তৈরিতে যে টুর্নামেন্ট মূল ভূমিকা পালন করে, সেই টুর্নামেন্টের বিভাগীয় দল নির্বাচনে এত অবহেলার আসল কারণ ঠিক কোথায়—এসব জানতে পিরোজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা নকীবের সঙ্গে কথা বলেছে কালবেলা। তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন, ‘যে ছেলে গত বছর কোনো লিগে অংশগ্রহণ করেনি, সেই ছেলে কীভাবে বরিশাল দলে সুযোগ পেল? এতে আমাদের বহু প্রতিভাবান ছেলে বাদ পড়ে। ডিভিশনকে জিজ্ঞেস করলে বলে এটা ক্রিকেট বোর্ড করে, আবার বোর্ডকে জিজ্ঞেস করলে বলে ডিভিশন করে। মানে আমাদের জেলাগুলো নষ্ট করে দিয়েছে।’ শুধু তাই নয়, দল গঠনের আগেই বিসিবির নির্বাচকদের সতর্কতামূলক বার্তা দিয়েছিলেন বরিশাল জেলার বিসিবির কাউন্সিলর প্রদীপ কুমার গাঙ্গুলী। কালবেলাকে তিনি বলেন, ‘বরিশাল দলটা হচ্ছে একটা সিন্ডিকেট টিম। এটা আমি ক্রিকেট বোর্ডে একটা বৈঠক করে বলেছিলাম নান্নুকে (জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক); এ বছরই বলেছিলাম, এটা সিন্ডিকেট টিম। আপনারা এটাকে পুনরায় তৈরি করে একটা সুন্দর শেপ দেন (গুছিয়ে দেন)। কিন্তু উনি (প্রধান নির্বাচক) আমার কথা শোনেন নাই। কামরুল রাব্বি ও অন্যরা (নাম উল্লেখ করেননি) যে খেলোয়াড় বাজে খেলে তাকেও নিয়মিত খেলিয়েছে।’ সেই আরও কয়েকজন কারা? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মিলেছে বরিশাল বিভাগের অধিনায়ক ফজলে মাহমুদ রাব্বির নাম। অভিযোগগুলো এসেছে কয়েকজন ক্রিকেটারের কাছ থেকেও। আগামীকাল দ্বিতীয় পর্বে জানা যাবে অভিযুক্তদের মন্তব্য। (চলবে)