ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০২:৪৫ এএম
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০৭:৫৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির রং বদল

ড. ইউনূস প্রসঙ্গ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির রং বদল

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় ড. মুহম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলাকে কেন্দ্র করে ‘মহল বিশেষের অশুভ তৎপরতার’ অভিযোগ তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সংগঠনটি বলেছিল, ১৯৭৮ সালের অবৈধ সামরিক স্বৈরশাসকের সঙ্গে ড. মুহম্মদ ইউনূসের সম্পর্ক রয়েছে এবং তিনি শান্তিতে নোবেল পেলেও আইনের ঊর্ধ্বে নন। তাকে বিচারিক প্রক্রিয়ায় আসতে হবে। এ ছাড়া, তার বিরুদ্ধে চলমান মামলা স্থগিত চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৬০ জনের খোলা চিঠির প্রতিবাদে মানববন্ধনও করেছিল এ সংগঠন। এমনকি এতে অংশ নিয়ে ঢাবির এক অধ্যাপক ড. ইউনূসের নোবেল পুরস্কার স্থগিতের দাবিও জানান। তবে এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার পর তাকে অভিনন্দন ও স্বাগত জানিয়েছে সংগঠনটি।

সোমবার ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই অভিনন্দন জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। এই সরকারে আমাদের একজন সম্মানিত সহকর্মী, অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম (আসিফ নজরুল) ও দুজন শিক্ষার্থী উপদেষ্টা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আমরা আনন্দিত। বৈষম্যবিরোধী, সমতাভিত্তিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এই সরকারের পাশে থাকবে।

শিক্ষক সমিতিকে ড. ইউনূসের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে একটি মহল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চরিত্র হননের মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। এর একটি অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখের একটি মানববন্ধনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছবির মাধ্যমে শিক্ষক সমিতিকে ড. ইউনূসের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে। মূলত, সত্য এই যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মানববন্ধনটি ছিল বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ওপর বিদেশি হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে। ওই মানববন্ধনে একজন শিক্ষক যিনি শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদের সদস্য নন, তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল পুরস্কার স্থগিতের দাবি করেছিলেন। এটি ছিল তার নিজস্ব বক্তব্য, যা শিক্ষক সমিতির বক্তব্য নয়। যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত আছেন তারা সবাই জানেন যে, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা, প্রতিবাদ সভা কিংবা মানববন্ধনে দলমত নির্বিশেষে যে কোনো শিক্ষক স্বাধীনভাবে তার মত প্রকাশ করতে পারেন। শুধুমাত্র কার্যকর পরিষদ ও সাধারণ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।

এর আগে, গত বছরের ৩১ মে শিক্ষক সমিতির এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমের মাধ্যমে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন। কিন্তু আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন। সুতরাং ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তা অবশ্যই বিচারিক প্রক্রিয়ায় আসতে হবে। এটিই সভ্য সমাজের রীতি। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে প্রাপ্ত অভিযোগের বিষয়ে দুদক তদন্ত করে ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত না হলে নিশ্চয়ই আইনি প্রক্রিয়ায় সেটি প্রমাণিত হবে। তথাকথিত কিছু সংগঠন বিবৃতির মাধ্যমে যে প্রতিবাদ করেছে তা আইনের শাসনের পরিপন্থি ও দুরভিসন্ধিমূলক বলে আমরা মনে করি।

তাছাড়া ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলা স্থগিত চেয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৬০ জনের খোলা চিঠির প্রতিবাদে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির এক মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেছিলেন, যেহেতু আমাদের রাষ্ট্রীয় আইনে তার (ড. ইউনূস) বিরুদ্ধে করফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং শ্রম আইনে যেহেতু তার বিচার প্রক্রিয়া চলছে, তাই নোবেল কমিটির কাছে আমাদের অনুরোধ, এই বিচার প্রক্রিয়া চলাকালে নোবেল পুরস্কারের সম্মানার্থে ড. ইউনূসের এই পুরস্কার যেন স্থগিত করা হয়।

মানববন্ধনে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ড. ইউনূস ইস্যুতে বিচার প্রক্রিয়াধীন একটি বিষয় নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ১৬০ জন নীতি জ্ঞানবিবর্জিত মানুষ। তারা লবিস্ট হিসেবে ভূমিকা পালন করছেন। তাদের হয়তো কোনো গোষ্ঠী, কোনো সম্প্রদায়, কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন অথবা কোনো ব্যক্তি হায়ার করেছেন কিছু অর্থের বিনিময়ে। সে কারণেই তারা দুর্নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল বলেন, নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, নোবেল পুরস্কারের অর্থ তিনি গরিবদের জীবন মানের উন্নয়ন এবং শিক্ষার জন্য ব্যয় করবেন। আমার প্রশ্ন হলো, শিক্ষার জন্য তিনি কোন জায়গায় ব্যয় করেছেন। তিনি গরিব মানুষের জন্য এই টাকা দিয়ে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছেন, এমন নজির আমার জানা নেই।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জিয়াউর রহমানের মাজারে বিএনপির শ্রদ্ধা

বিএনপিকে ধ্বংস করতে বারবার চেষ্টা হয়েছে: মির্জা ফখরুল 

টিকটকে এবার যেসব সুবিধা যোগ হলো

মোবাইলে যেভাবে দেখবেন বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস টি-টোয়েন্টি ম্যাচ

হত্যা মামলায় সাবেক সিনিয়র সচিব জিয়াউল গ্রেপ্তার 

শুটিং শেষ করে শাহিদ কাপুরের আবেগঘন স্ট্যাটাস

৬০০ বিঘার এই বিলে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সাদা শাপলা 

ভূমিকম্পে ভয়াবহ বিপর্যয়ে আফগানিস্তান, নিহত বেড়ে ৫০০

নুরের নিরাপত্তা বিবেচনায় বিদেশে চিকিৎসার দাবি জানালেন রাশেদ 

কে এই লিভারপুলের ২০০০ কোটি টাকার স্ট্রাইকার?

১০

অনার্স চতুর্থ বর্ষের ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার সূচি পরিবর্তন

১১

বিশ্বের মুসলিমদের উদ্দেশে ইরানের প্রেসিডেন্টের বার্তা

১২

সুসজ্জিত গাড়িতে পুলিশ সদস্যের রাজকীয় বিদায়

১৩

বিদ্রোহী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিহত, ইয়েমেনের পক্ষে ইরানের হুংকার

১৪

চোখের পাতা লাফানো কি অশুভ, নাকি কোনো রোগের লক্ষণ

১৫

সিডনিতে রুশ কনস্যুলেটের গেটে গাড়ির ধাক্কা, অতঃপর...

১৬

চবি ক্যাম্পাসে সুনসান নীরবতা

১৭

মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ওসমানীর ১০৭তম জন্মবার্ষিকী আজ

১৮

ফাইনালে হারের পর সুয়ারেজের বিতর্কিত কাণ্ড!

১৯

হাত-পায়ের ৫ লক্ষণে বুঝে নিন লিভারে সমস্যা ভুগছেন কি না

২০
X