শেখ হারুন
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১২ এএম
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৬ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আয়-ব্যয়ের তথ্য দিতে গড়িমসি করছে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো

অর্থনৈতিক শুমারি-২০২৪
আয়-ব্যয়ের তথ্য দিতে গড়িমসি করছে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো
পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অফিস। ছবি: সংগৃহিত

দেশের অর্থনীতির সঠিক চিত্র তুলে আনতে দেশব্যাপী অর্থনৈতিক শুমারি করছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। প্রতি ১০ বছরে একবার অনুষ্ঠিত হওয়া এই শুমারি দেশের আর্থিক পরিস্থিতি এবং জনগণের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। তবে সেই শুমারিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের তথ্য দিতে গড়িমসি করছে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো, যা তথ্য সংগ্রহকারীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে অর্থনৈতিক শুমারিতে সঠিক তথ্য পাওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

শুমারির তথ্য সংগ্রহকারীদের অভিযোগ, মাঠপর্যায়ে জনগণ তাদের আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব দিতে ভয় পাচ্ছে, যা শুমারির সঠিক ফল পেতে বাধা সৃষ্টি করছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে বারবার যাওয়ার পরও তথ্য পেতে সমস্যা হচ্ছে। অনেকেই কিছু তথ্য দিলেও আয়-ব্যয়ের তথ্য দিতে চাচ্ছেন না। সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা সঠিক তথ্য না দিলে শুমারির মূল উদ্দেশ্য হাসিল হবে না এবং সরকারও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। তবে বিবিএসের জরিপ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চ্যালেঞ্জ থাকলেও সঠিক তথ্য তুলে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

গতকাল শনিবার ঢাকার আশুলিয়ার কয়েকটি এলাকায় সরেজমিন তথ্য সংগ্রহকারীদের সঙ্গে ঘুরে ও তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে। বিবিএস চতুর্থবারের মতো এই অর্থনৈতিক শুমারি পরিচালনা করছে। এবারের অর্থনৈতিক শুমারি-২০২৪ শুরু হয়েছে ১০ ডিসেম্বর, চলবে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর মাধ্যমে সরকার দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করছে, যা ভবিষ্যতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনায় কাজে লাগবে।

সাভারের আশুলিয়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অর্থনৈতিক শুমারির জন্য তথ্য সংগ্রহকারীরা ট্যাব হাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন। কাজের প্রতি তাদের আগ্রহ এবং আন্তরিকতা চোখে পড়ার মতো। তথ্য সংগ্রহকারীরা মাঠে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলেও তারা পরস্পরকে সহযোগিতা করছেন এবং সমস্যা সমাধানে সক্ষম হচ্ছেন। কিন্তু গার্মেন্টসসহ বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।

তথ্য সংগ্রহকারীদের সঙ্গে আশুলিয়া এলাকার বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে তথ্য সংগ্রহকারীদের অভিযোগের প্রমাণও পাওয়া যায়। দেখা গেছে, জরিপকারীদের সব প্রশ্নের উত্তর দিলেও তারা তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে গড়িমসি করছেন। তথ্য সংগ্রহকারীরা জানান, আশুলিয়ায় বেশিরভাগই গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান। অন্যরা সব প্রশ্নের উত্তর দিলেও গার্মেন্টস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। কিছু কিছু গার্মেন্টসে চার-পাঁচ দিন যাওয়ার পরও কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। আয়-ব্যয়ের তথ্য পেতে সবচেয়ে বেশি বেগ পেতে হচ্ছে।

আশুলিয়ার সুপারভাইজার আমিরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, মাঠে তথ্য সংগ্রহের সময় প্রায়ই দেখা গেছে লোকেরা আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব দিতে ভয় পাচ্ছে। তারা ভাবছেন তাদের আয়ের ওপর কর ধার্য করা হবে কি না। তবে যখন তাদের বোঝানো হয় যে এই তথ্য আয়কর সংক্রান্ত নয়, এসব তথ্য সরকারি নীতিনির্ধারণের কাজে ব্যবহার হবে। তখন তারা সহযোগিতা করছেন।

তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে আয়-ব্যয়ের তথ্য না পাওয়ার চ্যালেঞ্জের বিষয়ে অর্থনৈতিক শুমারির উপপ্রকল্প পরিচালক মিজানুর ইসলাম জানান, মাঠ পর্যায় থেকে এমন তথ্য তুলে আনা খুবই চ্যালেঞ্জিং। আমরাও তথ্য সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ শুনেছি। নিয়মিত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, যাতে তারা সঠিক তথ্য তুলে আনতে পারে। আয়-ব্যয়ের তথ্য অনেকে দিতে চায় না। তবে সঠিক তথ্য পেতে বারবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক এস এম শাকিল আখতার কালবেলাকে বলেন, এরই মধ্যে শুমারির তথ্য সংগ্রহের কাজ প্রায় ৭৩ শতাংশ শেষ হয়েছে এবং তারা সঠিক সময়ে এটি শেষ করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তিনি বলেন, এবারের শুমারিতে দেশের আর্থিক অবস্থা, কর্মসংস্থান, ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ইত্যাদি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সঠিক ও নির্ভুল তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলছি আপনাদের তথ্য গোপন থাকবে। এ তথ্য ব্যাংক, এনবিআর পাবে না। এটা গোপনীয়। আসলে সবাই তো সঠিক তথ্য দেবে না। আমরা কাছাকাছি হিসেবে যাচ্ছি। একটা ধারণা পাব দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বছরে কী পরিমাণ লেনদেন করে। এটা কাছাকাছি জানতে পারলে সরকার উপকৃত হয়।

বিষয়টি অবহিত করে মন্তব্য জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, আর্থিক শুমারি ২০২৪-এর মাধ্যমে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা তৈরি করা সম্ভব। যদি সঠিক তথ্য সংগ্রহ না করা যায়, তাহলে এই তথ্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা যাবে না। শুমারি সফল হলে তা দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে এবং মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতিতে সাহায্য করবে।

সারা দেশে ৯৫ হাজার তথ্য সংগ্রহকারী এবারের শুমারিতে তথ্য সংগ্রহ করছেন। শুমারির মাধ্যমে প্রায় ৭০টি প্রশ্ন উঠে আসবে। এবারই প্রথম ট্যাবের মাধ্যমে ক্যাপি পদ্ধতিতে এই শুমারির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে লিস্টিংয়ের মাধ্যমে ১ কোটি ২২ লাখ ইউনিট চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখান থেকে এবং এর বাইরে থেকেও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এবার শুমারিই প্রথমবারের মতো দেশে কতজন বিদেশি কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন, তারা কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে কোন ধরনের পদে কর্মরত এবং নারী-পুরুষ কতজন, সেসব তথ্য তুলে ধরা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মদ পানে মহা সর্বনাশ, ৬ জনের মৃত্যু

বড় ভাই মির্জা ফখরুলের মতোই কবিতা দিয়ে শুরু করলেন মির্জা ফয়সল

সোনারগাঁয়ে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন

মা ইলিশ রক্ষায় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার টহল

ন্যাশনাল পিপলস যুব পার্টির মাদকবিরোধী আলোচনা সভা

নিউমার্কেটে চুরির কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম, নগদ টাকাসহ গ্রেপ্তার ১

আন্দোলনরত শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করায় ছাত্রশিবিরের নিন্দা

শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংকের বিবৃতি

কক্সবাজার আদালতে বিচারকের মোবাইল-মানিব্যাগ চুরি

পাঠ্যপুস্তক ছাপার দায়িত্ব হস্তান্তর ‘মাথাব্যথায় মাথা কাটার মতো সিদ্ধান্ত’ : টিআইবি

১০

বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়ে ভারতকে হারাল অস্ট্রেলিয়া

১১

মৌসুমি বায়ুসহ আগামী ৪ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস

১২

চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা

১৩

এবার উপদেষ্টাদের নিয়ে মুখ খুললেন সামান্তা শারমিন

১৪

ঢাকায় আসছেন জাকির নায়েক

১৫

ছক্কা মেরে ইতিহাস গড়লেন স্মৃতি মান্ধানা!

১৬

উপদেষ্টা রিজওয়ানাকে এনসিপি নেতার হুঁশিয়ারি

১৭

একটি দল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় : কফিল উদ্দিন 

১৮

চাকসু নির্বাচনে নতুন প্রত্যয়ে ছাত্রদল

১৯

বন্দর ব্যবসায়ী নেতারা / মাশুল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধের ষড়যন্ত্রের অংশ

২০
X