

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ ময়না বেগম হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বাসার বিদ্যুতের বিল ও সুদের টাকার জের ধরে নিজ স্ত্রীর গলায় রশি দিয়ে হত্যার পর রেললাইনের উপর ফেলে রাখে ঘাতক স্বামীসহ ৩ জন। পিবিআইয়ের হাতে আটক স্বামীসহ ৩ জন আদালতে ১৪৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করেছে আসামিরা।
বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় দিনাজপুর পিবিআই কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পিবিআইয়ের অ্যাডিশনাল ডিআইজি মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- নিহত গৃহবধূ ময়না বেগমের স্বামী জাহিদুল ইসলাম, তার ভায়রা আব্দুস সালাম ও চাচাত ভাই রুবেল।
ব্রিফিংয়ে মাহফুজ্জামান আশরাফ জানান, গত ২২ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামের দিনাজপুর-পঞ্চগড় রেললাইনের ধার থেকে গৃহবধূ ময়না বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ। এ সময় পিবিআইয়ের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরিদর্শনকালে ময়না বেগমের জখম, গলায় পেঁচানো নাইলনের দড়ি ও রেললাইনের স্লিপারের সঙ্গে বাঁধা দেখে সন্দেহ হয়।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা লাল মিয়া বাদী হয়ে গত ২ নভেম্বর জামাইসহ অজ্ঞাত ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে রেলওয়ে জিআরপি থানায় একটি মামলা করেন। পরে পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে। মামলাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে পিবিআই স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি অধিগ্রহণের জন্য আদালতে আবেদন করে। আদালত মামলাটি পিবিআই তদন্তের জন্য দেন।
তিনি আরও জানান, মামলাটি তদন্তকালে নিহতের স্বামীসহ ৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করে। পরে তারা জানায়, ময়না বেগমকে হত্যার পর রেললাইনে মরদেহ ফেলে রাখা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে নিহতের স্বামী জাহিদুল ইসলাম জানান যে, ময়না বেগম স্বামীর অনুমতি না নিয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধার-কর্জ ও সুদের টাকা নেওয়ার জের ধরে তাদের মধ্যে প্রায় সময় ঝগড়া-বিবাদ চলতে থাকে। যার কারণে আসামি জাহিদুল ইসলাম তার স্ত্রীকে একাধিকবার মারধর করে। ঘটনার দিন ২১ সেপ্টেম্বর স্ত্রী ময়না বেগমকে বিদ্যুৎ বিলের জন্য ২০০০ হাজার টাকা সংগ্রহ করতে বলে, অন্যথায় তাকে মেরে ফেলবে বলে রাগ দেখিয়ে বাড়ি থেকে বাইরে যায়।
পরে সেই টাকা সংগ্রহ করতে না পারায় বিকেলে জাহিদুল ময়না বেগমকে মারধর করে। এ সময় ময়না রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পরে রাতে পৌনে ১০টায় ঘটনাস্থলে আসামিরা তাকে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে হত্যার পর আত্মহত্যা চালানোর জন্য রেললাইনের উপর ফেলে রাখে।
গ্রেপ্তাররা আদালতে ১৪৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন বলে তিনি জানান। শিগগিরই মামলার তদন্ত শেষে আদালতে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করা হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর মো. মোস্তাফিজ, মো. মহসীন আলী, প্রদীপ কুমার ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নাজিমুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন