আজহার ইমাম, বিরামপুর (দিনাজপুর)
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৫০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সংসার চালাতে ঘাস বেচেন ‘মাস্টার’ হামিদ

ঘাস বিক্রি করছেন শিক্ষক আবদুল হামিদ। ছবি : কালবেলা
ঘাস বিক্রি করছেন শিক্ষক আবদুল হামিদ। ছবি : কালবেলা

দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে কলার বাগান এলাকা। ব্যস্ত সড়কের ধারে ঘাস ও কাঁঠাল পাতার স্তূপ সাজিয়ে বসে আছেন এক প্রৌঢ়। ক্রেতাদের ভিড়ে প্রায়ই শোনা যায় পরিচিত সেই ডাক— ‘হামাক এক বোঝা ঘাস দেও, মাস্টার।’ ক্রেতার চাহিদা শুনে স্তূপ থেকে টেনে তা বের করে দেন আবদুল হামিদ। ঘাস বুঝে পেয়ে বিক্রেতাকে সালাম দিয়ে চলে যান সেই ক্রেতা।

যিনি এই ঘাস-পাতা বিক্রি করছেন, তিনি কোনো সাধারণ বিক্রেতা নন। তিনি আবদুল হামিদ (৫৮)। পেশায় একজন স্কুলশিক্ষক। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ে কৃষি বিষয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করছেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করেও তিনি সরকারি খাত থেকে এক টাকাও বেতন পাননি। জীবন ও জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে এই শিক্ষক বেছে নিয়েছেন ঘাস বিক্রির পেশা।

শিক্ষক আবদুল হামিদ জানান, ২০০২ সালের ১ জুন তিনি দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ে কৃষি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। যোগদানের পর থেকে প্রায় দুই যুগ ধরে তিনি ওই বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে পাঠদান করে যাচ্ছেন। সংসার চালানোর জন্য তিনি দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে বসে ঘাস ও কাঁঠাল পাতার ব্যবসা করেন। এই ব্যবসা থেকে তার প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়, যা দিয়ে কোনোমতে চলে তার সংসার।

সরকারি কোষাগার থেকে বেতন না পেলেও বিদ্যালয়, শ্রেণিকক্ষ আর কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতি ভালোবাসার টানে তিনি এখনো বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান করেন বলে জানান।

এমপিওভুক্তির অন্তহীন বিড়ম্বনা শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর গত ২৩ বছরে আবদুল হামিদ এমপিওভুক্তির (মান্থলি পে-অর্ডার) জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ৯ বার আবেদন করেছেন। তবে প্রতিবারই কোনো না কোনো জটিলতা দেখিয়ে তার আবেদন বাতিল হয়েছে।

শিক্ষক আবদুল হামিদ কালবেলাকে বলেন, ১৯৯৭ সালের ৬ অক্টোবর তিনি অফিস সহকারী হিসেবে দুর্গাপুর উচ্চবিদ্যালয়ে যোগ দেন। পরে বিএজিএড ডিগ্রি সম্পন্ন করে ২০০২ সালে কৃষি শিক্ষক হন। ২০০৭ সালে আবেদন করলে বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ৩০ শতাংশ নারী কোটা পূরণ না হওয়ার কারণে এবং পরবর্তীতে এনটিআরসিএ নিয়োগবিধির জটিলতায় তার আবেদন বারবার বাতিল হয়।

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, এমপিওর জন্য যতবার আবেদন করেছি, ততবারই কোনো না কোনো কারণ দেখিয়ে আমার আবেদন বাতিল করা হয়েছে। প্রায় দুই যুগ ধরে বেতন পাচ্ছি না।

অবসরের আগে শেষ আশা আর মাত্র দুই বছর পর চাকরি থেকে অবসরে যাবেন আবদুল হামিদ। শেষ সময়ে একজন শিক্ষকের স্বীকৃতিস্বরূপ বেতন পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন তিনি। গত অক্টোবর মাসে শেষবারের মতো উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি আবারও এমপিওভুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছেন।

এ বিষয়ে বিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শমসের আলী মণ্ডল কালবেলাকে বলেন, গত অক্টোবর মাসে আবদুল হামিদের সব কাগজপত্র যাচাই করে অনলাইনে আবেদন পাঠানো হয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে আশা করা যায়, এবার তার চাকরি এমপিওভুক্ত হবে।

একজন মানুষ গড়ার কারিগর জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যেন তার প্রাপ্য মর্যাদাটুকু পান— এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসী ও সুধীমহলের।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আইসিসি র‍্যাঙ্কিংয়ে কোহলির বড় লাফ

ছাত্রশিবির নেতার বাবাকে গুলি করে হত্যা

দুটি বিষয়ের অনুমোদন পেল নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়

পে-স্কেলের গেজেট প্রকাশ নিয়ে যা বললেন অর্থ উপদেষ্টা

অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সচিবালয়ে অবরুদ্ধ অর্থ উপদেষ্টা, উত্তেজনা চরমে

লালমাটিয়ায় এভেরোজ স্কুলে হামলা, শিক্ষক-কর্মচারী আহত

সুখবর পেলেন প্রাথমিকের ৬৫,৫০২ প্রধান শিক্ষক

ব্যারিস্টার ফুয়াদের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল

তারেক রহমানের আসনে যাকে প্রার্থী করল এনসিপি

১০

বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি, ২ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

১১

উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ পদত্যাগ করেছেন

১২

বাংলাদেশ ১৬ বছর ধরে কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল : তারেক রহমান 

১৩

তেজগাঁও কলেজে সংঘর্ষে আহত এইচএসসি শিক্ষার্থী রানা মারা গেছেন

১৪

আইফোনের জন্য বন্ধুকে খুন!

১৫

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস / মানবাধিকারের মানদণ্ড যেন অদৃশ্য নির্দেশনায় বাধা 

১৬

হত্যাযজ্ঞের বেদনায় এক বীর মুক্তিযোদ্ধার ভয়ংকর প্রতিশোধ এবং স্বাধীনতার গল্প

১৭

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অটুট থাকবে : আইন উপদেষ্টা

১৮

কূটনৈতিক পাসপোর্ট জমা দিয়ে যা বললেন আসিফ মাহমুদ

১৯

বিশ্লেষণ / ইউক্রেন সেনাবাহিনীতে রেকর্ড সংখ্যায় পলায়ন, চরম সংকটে ফ্রন্টলাইন

২০
X