২০২২ সালে আতশবাজি-পটকা আর ফানুসে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করেছিল নগরবাসী। পটকা-আতশবাজির বিকট শব্দে যখন অন্যরা উল্লাস করছিল, তখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়ে চার মাস বয়সী শিশু তানজীম উমায়ের। তার পরিবার থাকত রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। জন্মগতভাবে হৃদযন্ত্রে ছিদ্র ছিল তার। সেই থার্টিফার্স্টে মধ্যরাতে টানা আতশবাজির বিকট শব্দে ভয় পেয়ে বারবার কেঁপে উঠছিল শিশুটি। এর মধ্যে শুরু হয় শ্বাসকষ্টও। কোনোমতে রাত পার করে পরদিন তাকে ভর্তি করা হয় হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে। সেখান থেকে প্রথমে আইসিইউ, পরে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সব চেষ্টা ব্যর্থ করে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে যায় উমায়ের।
তিন বছর আগের সেই রাতের কথা ভোলেননি উমায়েরের বাবা ইউসুফ সরকার। চার মাস বয়সী নিজের সন্তানকে হারিয়ে তিন বছর পর আবারও আতঙ্কে আছেন তিনি। বুনো উদযাপনের জন্য আতশবাজি আর পটকার ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে ফেসবুকে একাধিক পোস্টও করেছেন তিনি। আতশবাজির শব্দে মেয়ে হারানোর স্মৃতিও লিখেছেন তিনি। রাত ১২টার দিকে ইউসুফ সরকার তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন, ‘বড় ছেলেটাকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে আছি। আর বাহিরে চলছে দানবীয় উল্লাস! প্রচণ্ড ঘৃণা হচ্ছে এই প্রজন্মের ওপর। আহ! যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।’ শিশু মেয়ের একটি ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, ‘বুনো উল্লাসে মেতে উঠেছে পুরো দুনিয়া। আমার বুকের ভেতরটা চৌচির হয়ে যাচ্ছে।’
এবারও দগ্ধ শিশুসহ ৫ জন: নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই পটকা ও আতশবাজি পোড়ানোর মধ্য দিয়ে রাজধানীতে উদযাপিত হয়েছে থার্টিফার্স্ট নাইট। এতে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে শিশুসহ পাঁচজন। মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর বিভিন্ন সময়ে তারা দগ্ধ হয়ে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিতে যায়। এক শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দগ্ধরা হলো ফারহান (৮), শিফান মল্লিক (১২), সম্রাট (২০) শান্ত (৪৩) ও তাফসির (৩)। তাদের মধ্যে ফারহানের শরীরের ১৫ শতাংশ পুড়ে গেছে; বাকিদের ১ থেকে ২ শতাংশ।
গতকাল বুধবার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শাওন বিন রহমান বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইটে আতশবাজি ও পটকা পোড়ানোর সময় তারা আগুনে দগ্ধ হয়েছে। তাদের একজন শরীরের ১৫ শতাংশ বার্ন নিয়ে এসেছে। বয়স্ক হলে তেমন আশঙ্কা ছিল না, শিশু তাই তার অবস্থা কিছুটা আশঙ্কাজনক। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
থার্টিফার্স্ট ঘিরে পটকা-আতশবাজির বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কয়েকদিন আগেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকেও বারবার অনুরোধ করা হয়েছে, পটকা ফাটিয়ে যেন শব্দ ও বায়ুদূষণ করা না হয়।
ঢাকার বাসিন্দারা এই নিষেধাজ্ঞা মানেনি। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই পাড়ামহল্লার চারপাশে পটকা, আতশবাজি পোড়ানো শুরু করে। বিকট শব্দ ভেসে আসে চারদিক থেকে। রাত ১২টার সময় আতশবাজি, পটকার বিকট শব্দে প্রকম্পিত হতে থাকে শহরের অলিগলি। আতশবাজির ঝলকানিতে আলোকিত হয়ে ওঠে আকাশ। সঙ্গে যুক্ত হয় রং-বেরঙের ফানুস।