নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৫, ০৯:০৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিচারে তাড়াহুড়া চান না ত্বকীর বাবা রাব্বি

ত্বকী হত্যার এক যুগ
বিচারে তাড়াহুড়া চান না ত্বকীর বাবা রাব্বি

নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার এক যুগ আজ ৮ মার্চ। ২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকেলে শহরের সুধীজন পাঠাগারে যাওয়ার পথে মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী নিখোঁজ হন। এর দুদিন পর ৮ মার্চ সকালে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় থেকে পুলিশ ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে।

বিগত সরকারের উচ্চমহলের ইশারায় ১২ বছর ধরে ত্বকী হত্যার বিচার আটকে আছে। সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে রাজপথে এক যুগ ধরে সক্রিয় রয়েছেন ত্বকীর বাবা সংস্কৃতজন রফিউর রাব্বি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গতি আসে ত্বকী হত্যা মামলায়। র‌্যাব এরই মধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে।

এ বিষয়ে র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, মামলাটি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। এ মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ঘটনায় ত্বকীর বাবার সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তিনিও আমাদের সহযোগিতা করছেন। তদন্ত শেষ হলে আমরা চার্জশিট দিয়ে দেব।

বর্তমানে র‌্যাবের কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন নিহত ত্বকীর বাবা ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি। তিনি বলেন, ‘র‌্যাব ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ১২ বছর বিচারের জন্য অপেক্ষা করেছি। এখন তাড়াহুড়া করে ত্রুটিপূর্ণ অভিযোগপত্র হোক, তা চাই না। আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই।’

২০১৩ সালের ৬ মার্চ লাশ উদ্ধারের পর ওইদিন রাতেই ত্বকীর বাবা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেন। প্রথমে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হলেও ১৮ মার্চ জেলা পুলিশ সুপারের কাছে ত্বকী হত্যার জন্য এমপি শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, যুবলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগ সহসভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাত বিন ওসমানের নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অবগতি পত্র দেন। তবে ২৪ মার্চ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমান সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ত্বকী নিখোঁজ ও লাশ উদ্ধারের সময় তিনি ও তার ছেলে অয়ন দেশের বাইরে ছিলেন।

ওই সময় অভিযুক্ত রিফাত বিন ওসমানকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তবে নিহতের বাবা রফিউর রাব্বির আবেদনে হাইকোর্টের নির্দেশে ওই বছরের ২০ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে র‌্যাবের কাছে মামলা হস্তান্তর করা হয়। র‌্যাব পরে ইউসুফ হোসেন লিটন, সুলতান শওকত ভ্রমর, তায়েব উদ্দীন জ্যাকি ও সালেহ রহমান সীমান্তকে গ্রেপ্তার করে। এ চারজনের মধ্যে ইউসুফ হোসেন লিটন ও শওকত হোসেন ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা সবাই এখন জামিনে আছেন।

ওই বছরের ৭ আগস্ট ওই সময়ের র‌্যাব কর্মকর্তা আরিফ হোসেন, এম এম রানাসহ র‌্যাবের কয়েকজন শহরের আল্লামা ইকবাল রোডে আজমেরী ওসমানের মালিকানাধীন ‘উইনার ফ্যাশন’-এ অভিযান চালায়। অভিযানের সময় অফিসের দেয়াল, সোফা, আলমারিসহ আসবাবে অসংখ্য বুলেটের দাগ পাওয়া যায়।

২০১৪ সালের ৬ মার্চ তৎকালীন র‌্যাবের সহকারী মহাপরিচালক (এডিজি) জিয়াউল আহসান ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে করে জানান, তদন্তে সন্দেহভাজন হিসেবে ওসমান পরিবারের সদস্য আজমেরী ওসমানসহ ১১ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। ত্বকী হত্যায় অংশ নেওয়া বাকি ১০ জন হলেন রাজীব, কালাম শিকদার, মামুন, অপু, কাজল, শিপন, জামশেদ হোসেন, ইউসুফ হোসেন ওরফে লিটন, সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর ও তায়েব উদ্দিন ওরফে জ্যাকি। কে কখন কীভাবে ত্বকীকে অপহরণ করে হত্যা করেছে, র‌্যাব তার বর্ণনা দিয়েছিল। এরপর নাটকীয়ভাবে থমকে যায় মামলার তদন্ত।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর র‌্যাব আবার নড়েচড়ে বসে। আজমেরীর সহযোগী সাফায়েত হোসেন শিপন, মামুন মিয়া, আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে জামাই মামুন, কাজল হাওলাদার, আজমেরীর গাড়িচালক মোহাম্মদ জমশেদ ও পারভেজ গ্রেপ্তার হন। এর মধ্যে মামুন মিয়া হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। বাকিরা জেলে। কাজল হাওলাদার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

ত্বকীর মামলার আইনজীবী প্রদীপ ঘোষ বাবু বলেন, শুরুতে র‌্যাব তদন্ত শুরু করলে মামলার পুরো বিষয়টি থমকে যায়। এর ফলে ২০১৮, ২০২০, ২০২১, ২০২৩ সালে আদালতে দরখাস্ত দিয়েছিলাম, ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে যাদের নাম এসেছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং অভিযোগপত্র দাখিলে তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবকে নির্দেশ দেওয়ার জন্য। তখন আদালত তাগিদ দিয়েছিলেন। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দিষ্ট কোনো সময় দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ফলে এই মামলায় কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।

দীর্ঘ ১২ বছর ধরে প্রতি মাসের ৮ তারিখ ত্বকী হত্যার বিচার দাবিতে মোম প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছেন নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের নেতৃবৃন্দ ও ত্বকীর স্বজনরা। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ও সংগঠনের উপদেষ্টা ভবানী সংকর রায় বলেন, ‘আজমেরী ওসমানের টর্চারসেলে ত্বকীকে কারা হত্যা করেছে, এটা সবাই জানে। বিচারের দাবিতে এখনো আমরা প্রতিবাদ করে আসছি। আশা করছি, অচিরেই ত্বকী হত্যার বিচারকাজ শুরু হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণা নিয়ে সাদিক কায়েমের পোস্ট

বিটিভি চট্টগ্রামের বিশেষ নাটক ‘জিনের বাদশা’

লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সাক্ষাৎ

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৪৭০ জন

ব্যবসায়ী হত্যার দায়ে দুজনের মৃত্যুদণ্ড, একজনের যাবজ্জীবন

ড্রেনে গ্যাস জমে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, কেঁপে উঠল আশপাশের এলাকা

আমিরকে নিয়ে এশিয়া কাপের জন্য দল ঘোষণা ওমানের

গাইবান্ধায় কবরস্থান থেকে ৩০টি কঙ্কাল চুরি

কাতারে জুমার নামাজের সময় দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ

বরগুনায় অবৈধ ডায়গনস্টিক সেন্টারে অভিযান

১০

নির্বাচন বয়কটকারীরা মাইনাস হয়ে যাবে : সালাহউদ্দিন

১১

অনেক সাংস্কৃতিক কর্মী স্বৈরাচারের জন্য মায়াকান্না করছে : সেলিমা রহমান

১২

চাকসু নির্বাচনে তপশিলের তারিখ ঘোষণা

১৩

অজু শেষে যে দোয়া পড়লে জান্নাতের ৮টি দরজা খুলে যায়

১৪

ম্যাচ চলাকালে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ফুটবলারের মৃত্যু

১৫

লন্ডনে বোরকা পরে চুরির সময় ধরা ভারতীয় নাগরিক লক্ষ্মণ লাল

১৬

বন বিভাগের সামনেই অবাধে আসছে শিকার করা পণ্য

১৭

ধামরাইয়ে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ

১৮

শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা, যুবকের মৃত্যুদণ্ড

১৯

জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

২০
X