দেশের সর্বদক্ষিণের জনপদ বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সাগরকন্যা কুয়াকাটার ছবি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই সৈকতের পরিচিতি বিশ্বজুড়ে। তবে সৈকতকে ভাঙন থেকে রক্ষা করতে ব্যবহৃত বালুভর্তি জিও ব্যাগ দূরদূরান্ত থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সৈকতের জন্য রক্ষাকবচ হলেও এসব জিও ব্যাগে জমে থাকা পলি মাড়িয়ে হাঁটতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে আঘাত পাচ্ছেন অনেক পর্যটক।
শুধু জিও ব্যাগই নয়, বিস্তীর্ণ সৈকতজুড়ে উঁচু-নিচু গর্তের পাশাপাশি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পুরোনো স্থাপনা বা কংক্রিটের অসংখ্য ভাঙা টুকরা সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট করছে। এ ছাড়া লোনা জলে ডুবে থাকা এসব ভাঙা টুকরায় আঘাত লেগেও প্রতিনিয়ত আহত হচ্ছেন ঘুরতে আসা ভ্রমণপিপাসুরা। ফলে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা কুয়াকাটার নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলেও এসব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, দিচ্ছেন অভিযোগও।
এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারের পক্ষ থেকে সৈকতের সুরক্ষাসহ সংস্কার পদক্ষেপের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই তারা কাজ শুরু করতে পারবেন।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে পরিবার নিয়ে কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা পর্যটক হাসান মাহমুদ ক্ষোভ প্রকাশ করে কালবেলাকে বলেন, ‘শুক্রবার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কুয়াকাটায় এসেছি। কিন্তু শান্তিতে এক পা ফেলারও জো নেই। ঢেউয়ের তোড়ে বালু সরে গিয়ে নিচে থাকা কংক্রিটসহ বিভিন্ন ভাঙা বস্তুর ধারালো টুকরো বেরিয়ে আছে, যা বাচ্চাদের ছোটাছুটিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। আমিও হাঁটতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গেছি।’
বরগুনা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক বশির উদ্দিন জানান, বন্ধুদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার কুয়াকাটায় ঘুরতে এসে তিনি জিও ব্যাগে পা পিছলে পড়ে যান। সমুদ্রে গোসল করতে নেমে তার বন্ধু শাওনসহ আরও দুজন পানির নিচে লুকিয়ে থাকা কংক্রিটের মতো শক্ত বস্তুর আঘাতে পা কেটেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব ভাঙা টুকরা ও জিও ব্যাগ অপসারণের দাবি জানান তিনিসহ অনেক পর্যটক।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, এরই মধ্যে পুরোনো স্থাপনার কিছু অংশ অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। জিও ব্যাগের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) জানানো হয়েছে।
কলাপাড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহ-আলম বলেন, সৈকতের অব্যাহত ভাঙন ঠেকানোর জন্য দ্রুত জিও ব্যাগ ব্যবহারের বিকল্প ছিল না। জিও টিউব ব্যবহারের ফলে ভাঙন রোধ হয়েছে।
শাহ-আলম বলেন, ‘আমরা পর্যটকদের চলমান সমস্যা তুলে ধরে সৈকত সংস্কারের লক্ষ্যে দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে আবেদন পাঠিয়েছি। আশা করছি খুব দ্রুতই অর্থ বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করতে পারব।’
মন্তব্য করুন