গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে সিলেটের চার উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। পানিবন্দি হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ। এ ছাড়া নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে পাহাড়ি ঢল ও টানা অতিবৃষ্টিতে নদনদীর পানি বাড়ছে। এতে জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সুনামগঞ্জের দিড়াই ও ধনু নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় কর্ণফুলীর নদীভাঙন ঠেকাতে দেওয়া সিসি ব্লক ধসে পড়তে শুরু করেছে। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে পাড়ের বাসিন্দাদের।
সিলেটে জলাবদ্ধতার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরের বাসিন্দারা। সড়ক, অলিগলি ডুবে গিয়ে পানি ঢুকে পড়েছে বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
এদিকে, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জরুরি যোগাযোগের জন্য কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছে সিটি করপোরেশন। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫৮২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, পানি দ্রুত নামিয়ে দিতে ড্রেনের ছিদ্র বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
শনিবার (৩১ মে) টানা বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন নিচু এলাকায় সড়ক তলিয়ে যায়। আবাসিক এলাকা, বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকে পড়ে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবন ও কলেজ ভবনের নিচতলার অফিস ও ক্লাসরুম ডুবে যায়। এতে ব্যাহত হয় স্বাস্থ্যসেবা। ভোগান্তিতে পড়েন ডাক্তার-নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং রোগী ও তাদের স্বজনরা।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, সুরমা-কুশিয়ারাসহ সিলেটের সব নদ-নদীর পানি বেড়েছে। তবে কোনো নদীর পানি এখনো বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদ বলেন, বন্যা যদি হয় তার জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। এ ছাড়া শুকনো খাবার ও ত্রাণসামগ্রী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলাসহ হাওরাঞ্চলে পাহাড়ি ঢল এবং টানা অতিবৃষ্টির ফলে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এতে জেলার নিম্নাঞ্চলগুলোয় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসাইন জানান, হাওর রক্ষাবাঁধ অক্ষত রয়েছে। তবে উজান থেকে পানি আসা অব্যাহত থাকায় নদ-নদীর পানি সমতল দ্রুত বাড়ায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ভূমিরখীল গ্রামে কর্ণফুলী নদীভাঙন রোধে দেওয়া সিসি ব্লক ধসে পড়তে শুরু করেছে। গোডাউন ব্রিজ থেকে পূর্বদিকে আড়াই কিলোমিটার পর্যন্ত বাঁধের মধ্যে বিভিন্ন স্পটে এক কিলোমিটার পর্যন্ত অংশে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। এতে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের। নদীভাঙন ঠেকাতে দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
নদীভাঙন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমান জানান, কর্ণফুলীতে পানি বেড়ে যাওয়ার পর স্রোতের টানে ব্লকগুলো নেমে যাচ্ছে। এ ছাড়া নদী ড্রেজিংয়ের ফলে পাড় ঘেঁষে বালি সরে গিয়ে গভীর হয়ে যাওয়ায় এ ধস হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাঙামাটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, এরই মধ্যে বেশ কিছু অংশে মেরামত করা হয়েছে। সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। যেখানে ব্লক ধসে গেছে সেখানেও দ্রুত মেরামত হয়ে হবে।
কুমিল্লায় বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন লক্ষাধিক পরিবার: কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ঝড়ে সঞ্চালন লাইনের ওপর গাছ পড়ে লক্ষাধিক পরিবার বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে টেলিযোগাযোগ সেবাও। উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় বন্ধ রয়েছে মোবাইল ইন্টারনেটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার খিলা, হাসনাবাদ, নাথেরপেটুয়া, ঝলম দক্ষিণ, মৈশাতুয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুর্ণিঝড়ে প্রভাবে প্রায় তিনশ স্থানে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের ওপর গাছপালা ভেঙে পড়েছে। এতে বিদ্যুতের পাঁচটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। একটি ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে।
মনোহরগঞ্জ জোনাল অফিস পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ (ডিজিএম) এ কে এম আজাদ জানান, কাজ চলছে। আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
(প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা)
মন্তব্য করুন