কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:০৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন

নতুন দিগন্তে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ

নতুন দিগন্তে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ

অবসান হলো দীর্ঘ অপেক্ষার। সড়ক যোগাযোগে উন্মোচিত হলো নতুন দিগন্ত। যানজট এড়াতে দ্রুতগতির এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যুগে প্রবেশ করল দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরের কাওলা প্রান্তে টোল প্লাজায় গাড়িপ্রতি ৮০ টাকা টোল দিয়ে প্রথম যাত্রী হিসেবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফলক উন্মোচন মঞ্চে যান। সেখানে রাখা বোতাম চেপে উড়াল সড়কটির উদ্বোধন করেন তিনি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নানা রঙের পতাকা আর বেলুন দিয়ে সাজানো হয় সড়কের উভয় পাশ। জাতীয় পতাকা নেড়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান প্রকল্প নির্মাণে নিয়োজিত শ্রমিকরা। এ সময় আকাশে ছড়ানো হয় বর্ণিল রং।

এরপর গাড়িবহর নিয়ে প্রথম যাত্রী হিসেবে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ১৪ মিনিটে পাড়ি দিয়ে ফার্মগেট অংশে নামেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে পুরোনো বাণিজ্য মেলার মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশস্থলে যান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেতু সচিব মনজুর হোসেন এবং প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার প্রমুখ। গতকাল শনিবার বিকেল ৩টা ৪৪ মিনিট ৪০ সেকেন্ডে দক্ষিণ কাওলা প্রান্ত থেকে ফার্মগেটের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর রওনা হয়। বিকেল ৩টা ৫৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডে ফার্মগেট প্রান্তে এসে পৌঁছান তিনি।

যানজট নিরসনে সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক এই প্রকল্প উদ্বোধনের খবরে রাজধানীবাসীর মধ্যে বাড়তি উচ্ছ্বাস ও উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। বিশেষ করে উদ্বোধন হওয়া অংশের নিচের রাস্তায় ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। তা ছাড়া বাড়ির ছাদ ও বাসা থেকে অনেকেই উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখেন। নগরবাসী বলছেন, এ পথেই সবচেয়ে বেশি যানবাহনের চাপ। ১১ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে কত সময় লাগত, তা বোঝা কঠিন। কখনো কখনো দুই ঘণ্টায়ও পাড়ি দেওয়া কঠিন হতো।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাওলা থেকে ফার্মগেট প্রান্ত পর্যন্ত অংশটুকুই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রকল্পের বাদবাকি অংশ আগামী বছরের জুনে উদ্বোধন করার কথা জানিয়েছেন সেতু সচিব মনজুর হোসেন। আজ সকাল ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়া হবে। দ্রুতগতির এই উড়াল সড়কের দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে কাওলা থেকে রেললাইন ধরে তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর হয়ে যাত্রাবাড়ীর কাছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে গিয়ে শেষ হবে এই উড়াল সড়ক। পুরো সড়কে ৩১টি স্থান দিয়ে যানবাহন ওঠানামা (র‌্যাম্প) করার ব্যবস্থা থাকছে। র‌্যাম্পসহ উড়াল সড়কের দৈর্ঘ্য হবে ৪৬.৭৩ কিলোমিটার। উড়াল সড়কে ১১টি টোল প্লাজা থাকছে। পুরো পথ চালু হলে তা যানবাহনে পাড়ি দিতে ২০ মিনিট লাগবে বলে প্রকল্প প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কাওলা থেকে তেজগাঁও অংশ পাড়ি দিতে লাগবে ১০ মিনিট। যানবাহনের গতি হবে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার আর র‌্যাম্প দিয়ে চলবে ৪০ কিলোমিটার গতিতে।

উদ্বোধন হওয়া অংশে ১৫টি র‌্যাম্পের মধ্যে মহাখালী ও বনানীর র‌্যাম্প দুটি পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়ায় ১৩টি খুলে দেওয়া হবে আজ। মোট র‌্যাম্পের মধ্যে বিমানবন্দরে দুটি, কুড়িলে তিনটি, বনানীতে চারটি, মহাখালীতে তিনটি, বিজয় সরণিতে দুটি ও ফার্মগেটে একটি রয়েছে। এই অংশে মূল লাইনের সঙ্গে র‌্যাম্পের দৈর্ঘ্য ১১ কিলোমিটার। র‌্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক ৫ কিলোমিটার।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এক্সপ্রেসওয়েতে দুই ও তিন চাকার যানবাহন (থ্রি হুইলার, মোটরবাইক, বাইসাইকেল) এবং পথচারী চলাচল, যানবাহন দাঁড়ানো, যানবাহন থেকে নেমে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষেধ।

এক্সপ্রেসওয়েতে উত্তর-দক্ষিণমুখী যানবাহন বিমানবন্দরের কাওলা, প্রগতি সরণি এবং আর্মি গলফ ক্লাব অংশ নিয়ে উঠবে। নামার স্থান, বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে এবং ফার্মগেট প্রান্তে ইন্দিরা রোডের পাশে। দক্ষিণ থেকে উত্তর অভিমুখী যানবাহনের ওঠার স্থান, বিজয় সরণি ওভারপাসের উত্তর এবং দক্ষিণ লেন ও বনানী রেলস্টেশনের সামনে। নামার স্থান, মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে, বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউর সামনে বিমানবন্দর সড়ক, কুড়িল বিশ্বরোড এবং বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনালের সামনে।

মূলত দূরপাল্লার যানবাহনকে রাজধানী ঢাকার এক প্রান্ত থেকে সরাসরি অন্য প্রান্তে চলাচলের ব্যবস্থা করে দিতে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। লক্ষ্য শহরের ভেতরে সড়কে গাড়ির চাপ কমানো। সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক ৪৬ কিলোমিটারের এ প্রকল্পের পুরো কাজ শেষে হলে দিনে ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে চার ক্যাটাগরিতে টোল আদায় করা হবে। ক্যাটাগরি-১-এ কার, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিক্যাল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) এবং হালকা ট্রাক (৩ টনের কম) ৮০ টাকা, ক্যাটাগরি-২-এ মাঝারি ট্রাক (৬ চাকা পর্যন্ত) ৩২০ টাকা, ক্যাটাগরি-৩ এ ট্রাক (৬ চাকার বেশি) ৪০০ টাকা, ক্যাটাগরি-৪ এ সব ধরনের বাস (১৬ সিট বা তার বেশি) ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২০ বছরের ব্যবসা বাঁচাতে ছাড়লেন চেয়ারম্যান পদ

তাসনিম অনন্যার অনুসন্ধানে মহাবিশ্বের চাঞ্চল্যকর রহস্য উন্মোচন

২০২৬ বিশ্বকাপে কবে মুখোমুখি হতে পারে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল?

বিশ্বকাপের গ্রুপ অব ডেথে ফ্রান্স

নুরুদ্দিন অপুর হাত ধরে আ.লীগ নেতার বিএনপিতে যোগদান

২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠিত: দেখে নিন কোন গ্রুপে কোন দল

২০২৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ যারা

রাতে আবার হাসপাতালে গেলেন জুবাইদা রহমান

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পরিধি বাড়ছে, তালিকায় ৩০টির বেশি দেশ

খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি সম্পন্ন, বন্ধ হয়েছে রক্তক্ষরণ

১০

‘বাঁধের মাটি বড় বড় খণ্ড হয়ে ঝুপঝাপ শব্দে ভেঙে পড়ে’

১১

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

১২

দেড় হাজার দৌড়বিদের অংশগ্রহণে হাফ ম্যারাথন

১৩

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ফ্রি যাত্রীসেবা

১৪

বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা, প্রতিবাদে বিক্ষোভ 

১৫

যুবদল নেতা সুমনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

১৬

দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, একজন গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০

১৭

গণতন্ত্র মঞ্চের নতুন সমন্বয়ক সাইফুল হক

১৮

পুরোনো রাজনীতি পরিহার করে নতুন রাজনীতি করতে চাই : মঞ্জু

১৯

খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা দেখার জন্য শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন : স্বপন

২০
X