শনাক্তকরণের পরীক্ষা: চিকুনগুনিয়ার লক্ষণগুলো দেখে খুব সহজেই রোগ শনাক্ত করা যায়। ৫-৭ দিন পর রক্তে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা ৫-৭ দিন পর রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। এই সময়ের আগে পরীক্ষাটি করলে পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনা কম। আরটি পিসিআর এবং সেরোলজির মাধ্যমে ভাইরাস শনাক্ত করা যায়। তবে কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট করা উচিত জ্বরের ৪-৫ দিন পর।
চিকিৎসা: চিকিৎসা মূলত উপসর্গভিত্তিক। জ্বরের জন্য শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধই যথেষ্ট। একটি বা দুটি ট্যাবলেট তিন বেলা অথবা সাপোজিটরি ব্যবহার করা যায়। পানি দিয়ে শরীর স্পঞ্জ করা এবং রোগীকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। প্রচুর পানি, ডাবের পানি, শরবত, গ্লুকোজ, স্যালাইন, স্যুপ জাতীয় তরল খাদ্য এবং স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে: পাঁচ দিনের বেশি জ্বর থাকলে, শরীরে বেশি র্যাশ উঠলে, অস্থিসন্ধির তীব্র ব্যথা থাকলে, প্রেশার দ্রুত ওঠা-নামা করলে, প্রস্রাব অনেক কমে গেলে, শরীরের কোথাও রক্তপাত এবং মস্তিষ্কে সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।
অ্যান্টিবায়োটিক: চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দিলে রোগীর অবস্থা খারাপ হবে—এমন ভুল ধারণা অনেকের মধ্যে আছে। যেহেতু এই রোগ ভাইরাসজনিত, তাই অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই। তবে অন্য কোনো রোগ, যেমন টাইফয়েড, প্রস্রাবের বা বুকের ইনফেকশন বা সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে প্রয়োজনে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন। এতে চিকুনগুনিয়ায় কোনো জটিলতা হবে না।
স্টেরয়েড দেওয়া যাবে কি: স্টেরয়েডের ব্যবহার নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন দীর্ঘস্থায়ী, এমনকি মারাত্মক ব্যথায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শর্ট কোর্স স্টেরয়েড দেওয়া যেতে পারে।
ভাইরাসটি কতদিন থাকে: চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস সাধারণত এক সপ্তাহ পর্যন্ত শরীরে বা রক্তে বিদ্যমান থাকে। এ সময় এডিস মশা রোগীকে কামড় দিলে সেই মশার মাধ্যমে অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারে। অর্থাৎ সংক্রমিত মশা থেকে অন্যদের মধ্যে ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ৫-৭ দিন পর রক্তে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এরপর শরীরে আর ভাইরাস থাকে না।
প্রতিরোধের উপায়: চিকুনগুনিয়া জ্বরের কোনো প্রতিষেধক বা টিকা এখনো আবিষ্কার হয়নি। এই রোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রতিরোধের গুরুত্বটাই বেশি। রোগ থেকে উদ্ধার পাওয়ার একটাই উপায়—মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ।
ইমেরিটাস অধ্যাপক
ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ
মন্তব্য করুন