পাল্টা শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৃতীয় দফায় আলোচনার জন্য ডাক পেয়েছে বাংলাদেশ। এই আলোচনায় অংশ নিতে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে একটি দল যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই প্রতিনিধি-দলে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী রয়েছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কার্যালয়ে আজ মঙ্গল ও কাল বুধবার সরাসরি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এসব বৈঠক চলবে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান।
এর আগে শুল্ক বিষয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এর আগে আমাদের চূড়ান্ত অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছি। এরপর তাদের কাছে নতুন করে সময় চেয়েছি। সময় চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কার্যালয় ২৯ ও ৩০ জুলাই সরাসরি বৈঠকের জন্য সময় দিয়েছে। এখন বৈঠকে শুল্ক কমানো নিয়ে সরাসরি আলোচনা হবে।’ আলোচনায় প্রত্যাশা কতটুকু জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘শুল্ক কমবে, আমরা আশাবাদী।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬০টি দেশের জন্য পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। পরে ৯ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন পাল্টা শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করে। তিন মাসের শেষ সময় ছিল ৯ জুলাই। তার আগের দিন ৮ জুলাই ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে ঘোষণা দেন, বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্কহার হবে ৩৫ শতাংশ, যা আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। বর্তমানে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। নতুন হার কার্যকর হলে তখন মোট শুল্ক দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ। ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর এ নিয়ে এরই মধ্যে দুই দফায় দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তরের (ইউএসটিআর) সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দল।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তৃতীয় দফায়ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলটি যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিআর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে। আলোচনায় থাকবে উচ্চ শুল্কহার, বাজারে প্রবেশাধিকার এবং আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য নিয়ে সরাসরি দর কষাকষি। পাল্টা শুল্ক কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে রাজি করাতে বাংলাদেশ এরই মধ্যে দেশটি থেকে প্রতি বছর ৭ লাখ টন গম আমদানির চুক্তি করেছে। পাশাপাশি গম, তুলা ও সয়াবিন আমদানিতে আগাম চুক্তি হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু কৌশলগত প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানি থেকে ২৫টি বিমান কেনা এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভোজ্যতেল আমদানি ৩০ কোটি ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি শুধু কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়, সরবরাহ চেইন নিরাপদ রাখতে এবং বিকল্প বাজার গড়ে তুলতে এই সিদ্ধান্ত।
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু সম্প্রতি কালবেলাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বহাল থাকলে অনেক ছোট ছোট কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের রপ্তানি খাতে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ যে অবস্থানে রয়েছে, তা ধরে রাখতে ভারত ও ভিয়েতনামের মতো প্রতিযোগীদের মতো শুল্কছাড় দরকার। তা না হলে এই বাজার হারানোর ঝুঁকি তৈরি হবে।
মন্তব্য করুন