বিএনপির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে পরিচিত তিন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের একটি জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনকে প্রস্তুত করার পাশাপাশি নিজেদের সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করছে তারা; যাতে ভোট ছাড়াও বিএনপির পাশে থেকে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ৪০টি জেলা সফর করেছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। দ্রুততম সময়ে বাকি জেলাগুলোও সফর সম্পন্ন করবেন। সংগঠনের শীর্ষ নেতারা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে নির্বাচনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার বার্তা দিচ্ছেন। তাদের দাবি, স্বেচ্ছাসেবক দল সাংগঠনিকভাবে এরই মধ্যে একটা শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সে কারণে হামলা-মামলা, গুম-খুন উপেক্ষা করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। কৌশলের অংশ হিসেবে সাংগঠনিক পরিচয় গোপন রেখে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ ছিল।
এদিকে সংগঠনকে প্রস্তুত করার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ নেতারাও আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে সংগঠনের সভাপতি এস এম জিলানী, বরিশাল-৪ থেকে সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, লক্ষ্মীপুর-১ থেকে সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াছিন আলী, গোপালগঞ্জ-২ থেকে সহসভাপতি সরদার মো. নুরুজ্জামান, ঝিনাইদহ-৪ থেকে সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সিরাজগঞ্জ-২ থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসানসহ সংগঠনের আরও কিছু নেতা ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তারা নিজ এলাকায় গণসংযোগের পাশাপাশি সাংগঠনিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে জনগণের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছেন।
২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর এস এম জিলানীকে সভাপতি ও রাজীব আহসানকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক দলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী সময়ে ছয় মাস পর ২০২৩ সালের ২০ এপ্রিল সংগঠনের ২৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে তখন ২৫১ সদস্যের মধ্যে ২১৩ সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। বিভাগীয় পদসহ বাকি পদ পরে ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হলেও পরবর্তী সময়ে সেগুলো আর ঘোষিত হয়নি।
অবশ্য আংশিক কমিটি ঘোষণার পর সংগঠনকে গতিশীল ও শক্তিশালী করতে জেলা কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয় স্বেচ্ছাসেবক দল। ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলা ও মহানগরে কর্মিসভার মধ্য দিয়ে এ সাংগঠনিক পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০২৩ সালের ১২ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকার পতনের একদফার আন্দোলন শুরুর আগ পর্যন্ত ৮১টির মধ্যে ৬৬টি সাংগঠনিক জেলায় কর্মিসভা সম্পন্ন করে। অবশ্য ২০২৩ সালের জুনে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের সমন্বয়ে দেশব্যাপী ‘বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশ’ শুরু হলে কমিটি পুনর্গঠনের এ প্রক্রিয়া কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। পরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ প্রক্রিয়া আবার শুরু হয়।
সংগঠন থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৮১টি সাংগঠনিক জেলা ইউনিটের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় এরই মধ্যে ৬৯টিতে ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাকি ১২টি জেলা কমিটির পুনর্গঠনও দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করতে চায় সংগঠনটি। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের সারা দেশে ৯৪৯টি উপজেলা ও পৌর ইউনিট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে মাত্র ১৬টি ছাড়া বাকিগুলোয় কর্মিসভার মধ্য দিয়ে নতুন কমিটি হয়েছে। শিগগির এই ইউনিট কমিটিগুলোও করার পরিকল্পনা নিয়েছে সংগঠনটি। ৪ হাজার ৬০৯টি ইউনিয়ন কমিটির মধ্যে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি ইউনিয়নে কমিটি করেছে স্বেচ্ছাসেবক দল। বাকি কমিটিগুলো আগামী এক মাসের মধ্যে করতে চায় সংগঠনটি। আর ইউনিয়নের অধীন ওয়ার্ড কমিটিগুলোর মধ্যে ৭৫ শতাংশ এরই মধ্যে গঠিত হয়েছে বলে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানিয়েছে।
তিন বছর মেয়াদি স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ আগামী ৪ সেপ্টেম্বর পূর্ণ হবে। তবে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হওয়ায় বিএনপির দৃষ্টি এখন ভোটের দিকে। দল এখন প্রার্থী যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এমন অবস্থায় নির্বাচনের আগে স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।
জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী কালবেলাকে বলেন, বিএনপি সবসময় নির্বাচনমুখী একটি রাজনৈতিক দল। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশের নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে শুধু ভোট নয়, যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিও মোকাবিলা করার জন্য নেতাকর্মীরা যাতে সাংগঠনিকভাবে প্রস্তুত থাকেন— সেটাকে বেইজ করেই আমরা সারা দেশে সংগঠনকে গুছিয়েছি। আর ভোট তো একটা মুখ্য বিষয়।
আগামী মাসে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ পূর্ণ হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জিলানী বলেন, দলের হাইকমান্ড চাইলে যে কোনো সময় যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্তই নেবে, সেটা মেনেই তারা কাজ করবেন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি: স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৮০ সালের এই দিনে দলের অন্যতম এ অঙ্গসংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সংগঠনটি। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল ৭টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এরপর বেলা ১১টায় শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতিহা পাঠ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এতে প্রধান অতিথি থাকবেন। পরে বিকেলে আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিতব্য আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এ ছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী দুদিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সংগঠনটি। আজ মঙ্গলবার দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, জেলা সদরের সরকারি হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ডাস্টবিন স্থাপন ও ফলদ-বনজ বৃক্ষরোপণ করা হবে। আগামীকাল বুধবার দেশব্যাপী থানা, উপজেলা ও পৌর শাখায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ডাস্টবিন স্থাপন ও ফলদ-বনজ বৃক্ষরোপণ করা হবে।
মন্তব্য করুন