রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটা ঘিরে শিক্ষার্থীদের হাতে লাঞ্ছিতের ঘটনায় তাদের কার্যক্রমে অনির্দিষ্টকালীন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো একাডেমিক ও প্রশাসনিক সব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে সকাল ৯টায় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহীদ বুদ্ধজীবী চত্বরে চেয়ার পেতে অবস্থান নেন দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এদিকে বিভাগগুলোর ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ থাকায় পুরো ক্যাম্পাস প্রায় নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে সামনের সপ্তাহ থেকে পূজার ছুটি হওয়ায় ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেছেন অনেক শিক্ষার্থী।
সরেজমিন দেখা গেছে, প্রশাসন ভবনে বেশিরভাগ দপ্তরে তালা ঝুলছে। তবে কিছু কিছু অফিস খোলা রয়েছে। এ ছাড়া ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ উপেক্ষা করে ক্লাস নিয়েছেন আরবি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর নিজাম উদ্দিন।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি বন্ধ পেয়ে সামনের ফটকে জড়ো হয়ে আন্দোলন করেন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। তাদের অভিযোগ, চাকরির প্রস্তুতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্লাস ও পরীক্ষার পড়াশোনার জন্য লাইব্রেরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এর আগে কোনো আন্দোলনে কখনো গ্রন্থাগার বন্ধ হয়নি। পরে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে কিছু সময়ের মধ্যে লাইব্রেরি খুলে দেয় কর্তৃপক্ষ।
বুদ্ধিজীবী চত্বর অবস্থান কর্মসূচি পালন করা ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত ২০ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ অনেককে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। গোটা বাংলাদেশের শিক্ষকরা আজ স্তম্ভিত। যতক্ষণ পর্যন্ত এর সুষ্ঠু বিচার না হবে, ততক্ষণ আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’
একাডেমিক শাখার উপ-রেজিস্টার আবু মো. তারেক বলেন, ‘আমাদের দাবি সুস্পষ্ট—আমাদের উপ-উপাচার্য লাঞ্ছিত হয়েছেন। সেটার সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই কাজে ফিরব না।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাতিল হয়ে যাওয়া পোষ্য কোটা ১০ শর্তে ফিরিয়ে আনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের একপর্যায়ে গত শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এরই জেরে গত সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাকসু নির্বাচন কমিশনার জরুরি সভা করে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেন। এতে আগামী মাসের ১৬ অক্টোবর ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
সাবেক সমন্বয়ক আম্মারকে প্রতিহতের ঘোষণা: এদিকে শিক্ষক-কর্মকর্তা লাঞ্ছিতের সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মারকে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয়রা। গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেটে ‘মতিহারের সচেতন এলাকাবাসী’ ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ করে এ ঘোষণা দেন তারা। সমাবেশে বলা হয়, ‘প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে স্থানীয়রাই আম্মারকে প্রতিহত করবে।’
আম্মার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি আসন্ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে স্বতন্ত্র জিএস ও সিনেট সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সালাহউদ্দিন আম্মার অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মাঈন উদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও ছাপাখানা কর্মকর্তা রবিউল ইসলামকে লাঞ্ছিত করেছেন।
কাজলা কেডি ক্লাবের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস ডলার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কেউ যা খুশি করতে পারবে না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে কলুষিত করার চেষ্টা হলে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।’
ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল বাবু বলেন, ‘শিক্ষক লাঞ্ছনার পরও অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রয়োজনে আমরা নিজেরাই বিচার করব। আমরা ঘুমন্ত বাঘ, আমাদের জাগাবেন না।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কর্মচারী আলমগীর হোসেন। পরিচালনা করেন হায়দার আলী। এর আগে সোমবার বিকেলেও প্রধান ফটকে একই কর্মসূচি পালিত হয়। মঙ্গলবার বিকেলেও বিনোদপুর বাজারে কর্মসূচি পালন করা হয়।
এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। স্থানীয়রা কেন জড়াচ্ছেন, বুঝতে পারছি না। কী উদ্দেশ্যে এটি হচ্ছে, তদন্ত হওয়া উচিত।’
মন্তব্য করুন