রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২
রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৫৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

নির্বাচনের দিন গণভোট নিয়ে বিএনপির পাশে মিত্ররা

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন
নির্বাচনের দিন গণভোট নিয়ে বিএনপির পাশে মিত্ররা

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তির জন্য জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। তবে এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দুটি দলই জাতীয় নির্বাচনের আগে পৃথকভাবে গণভোট চায়। এ অবস্থায় জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে বিএনপির পাশে দাঁড়িয়েছে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্ররা। গত মঙ্গলবার রাজধানীর হাতিরপুলে গণসংহতি আন্দোলনের কার্যালয় ভবনে ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট নেতাদের সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে এ সিদ্ধান্ত হয়। এরপর সেই সিদ্ধান্তের আলোকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বুধবার অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সর্বশেষ বৈঠকে তারা সনদ বাস্তবায়নে সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট নেওয়ার পক্ষে মতামত দেন।

জানা গেছে, এই ইস্যুতে ঐকমত্য কমিশনের বাইরেও সোচ্চার থাকবে বিএনপির মিত্ররা। কেন জাতীয় নির্বাচনের দিনে একই সঙ্গে গণভোট প্রয়োজন—জনমত গঠনে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এর পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরবেন তারা। মিত্ররা মনে করেন, একই দিনে দুটি বিষয়ে ভোট হলে একই আয়োজন, একই অর্থ ব্যয়, একই লজিস্টিকস এবং একবার ভোট সেন্টারে যাওয়ার সুবিধা পাওয়া যাবে। আগে গণভোট করার প্রস্তাব আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার প্রয়াসও হতে পারে।

এদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বড় দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার পথ খোঁজার উদ্যোগের অংশ হিসেবে গত ১৮ সেপ্টেম্বর এনসিপি, এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে এবং ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশ জাসদ ও জাতীয় গণফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠক করে গণতন্ত্র মঞ্চ। এরপর গত মঙ্গলবার ১২ দলীয় জোট ও সমমনা জোট নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করে ছয় দলীয় এই জোট। এই বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী জনশক্তি পার্টির আবু ইউসুফ সেলিম ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন; ১২ দলীয় জোটের পক্ষে বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, জমিয়তের গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম ও কল্যাণ পার্টির শামসুদ্দিন পারভেজ এবং সমমনা জোটের পক্ষে আহ্বায়ক ও এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, গণদলের গোলাম মওলা চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

যদিও জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের সময় ও পদ্ধতি নিয়ে বড় দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক মতবিরোধ রেখেই দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ ছাড়া গণভোটের প্রশ্ন কী থাকবে, ভিন্নমত থাকা (নোট অব ডিসেন্ট) প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে—এসব প্রশ্নেরও সুরাহা হয়নি। এ অবস্থায় ঐকমত্য কমিশন বলেছে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সমন্বয় করে দু-একদিনের মধ্যে তারা সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ দেবে।

ছয়টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। তবে এই সনদ যাতে গণভোটে পাস হয়, সেজন্য এ পক্ষের সব অংশীজনকে এক হয়ে কাজ করা উচিত বলে মনে করেন ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্ররা। তাদের অভিমত, পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চাইবে না। তাই মিত্রদের শঙ্কা, সনদ বাস্তবায়নে গণভোট ইস্যুতে ফ্যাসিবাদবিরোধী অংশীজনের মধ্যে মতবিরোধ প্রকট হলে এমনকি পুরো প্রক্রিয়াটি ভণ্ডুলও হয়ে যেতে পারে, যা জাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে না।

এদিকে একই দিনে দুটি ভিন্ন বিষয়ে (জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট) দুটি ব্যালট দিলে জনগণ বিভ্রান্ত হতে পারে বলে অনেকের ধারণা। তাই মিত্রদের বৈঠকে ভোটাররা যাতে বিভ্রান্ত না হন, সেজন্য গণভোটের প্রশ্ন ও ব্যালটকে সহজ করার কথা বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক কালবেলাকে বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বড় দলগুলোর মধ্যে যাতে মোটা দাগে একটা বোঝাপড়া গড়ে ওঠে, সেজন্য আমরা বিএনপি, ১২ দল, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও বাম প্রগতিশীল দলগুলোর সঙ্গে যেমন আলোচনা করেছি; তেমনি এনসিপি, এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমরা মনে করি, সেটা কিছুটা ফল দিয়েছে। সেখানে কিছু প্রশ্নে এখনো কিছুটা মতপার্থক্য থাকলেও বড় দাগে মতৈক্যের জায়গাটা এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে বলে আমাদের ধারণা।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলগুলো বিশেষ করে বড় দলগুলোর মধ্যে মতৈক্যের অভাবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ঝুলে গেলে কিংবা আটকে গেলে পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে, যারা আমাদের মধ্যে বিভক্তি ও বিভাজন দেখতে চায়। পরাজিত শক্তিকে সেই সুযোগটা দেওয়া নিশ্চয় রাজনৈতিক দল বা জনগণের উচিত হবে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অসুস্থ বিএনপি নেতা ডা. রফিকের খোঁজ নিতে বাসায় জোনায়েদ সাকি

আফগানদের কাছে নাস্তানাবুদ হয়ে বাংলাদেশের সিরিজ হার

যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবল ম্যাচ শেষে এলোপাতাড়ি গুলি, নিহত ৪

চট্টগ্রামে কনসার্টে গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ ১

চিহ্নিত ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠানের ওপর দেওয়া উচিত নয় : বিএনপি

জবি তরুণ কলাম লেখক ফোরামের নেতৃত্বে ইমন-সোহান

এনসিপির ‘পলিসি ও রিসার্চ উইং’ গঠন, দায়িত্ব পেলেন যারা

নড়াইলে সাংবাদিকদের মিলনমেলা

‘তিন মাসের মধ্যে ৬ লেনের কাজ দৃশ্যমান হবে’

শাবিপ্রবির ২৫ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ বাতিলের সিদ্ধান্ত

১০

ওমরজাইয়ের বোলিং তোপে বিপদে বাংলাদেশ

১১

প্রবীণদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে : টুকু

১২

শুধু বক্তব্যে নয়, বাস্তব কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে বিএনপি মানুষের পাশে রয়েছে : আনোয়ারুজ্জামান

১৩

গুম-খুনে জড়িতদের সঙ্গে আপস নেই : আখতার হোসেন

১৪

বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান দুলুর

১৫

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার

১৬

গুম-দুর্নীতি বন্ধে ধানের শীষে ভোট দিন : আশিক

১৭

গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণ, ভাইয়ের পর চলে গেল বোনও

১৮

ইতিহাস গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাল নামিবিয়া

১৯

জিয়া পরিবারের ত্যাগ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য : কফিল উদ্দিন

২০
X