

কুমিল্লা-চাঁদপুরগামী আইদি পরিবহনের রুট পারমিট নেই—এমন অভিযোগ এনে পরিবহন ধর্মঘট করেছে কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া এই ধর্মঘটে কুমিল্লা-ঢাকা, কুমিল্লা-চট্টগ্রামসহ সব আন্তঃজেলা ও অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রী, চালক ও সংশ্লিষ্টরা।
দুপুরের পর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও হাইওয়ে পুলিশ সুপারের আশ্বাসের পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এরপর বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়। সমঝোতা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যতদিন পর্যন্ত আইদি পরিবহন অনুমতিসহ চলাচলের কাগজপত্রাদি আপডেট না করবে, ততদিনে তারা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকা থেকে চলাচল করবে। জাঙালিয়া টার্মিনাল থেকে চলাচল করতে পারবে না। আটকে পড়া যাত্রীরা জানান, ধর্মঘটের সময় কুমিল্লার শাসনগাছা, জাঙালিয়া ও চকবাজার—এ তিনটি বাস টার্মিনাল থেকে কোনো বাস ছাড়েনি। যাত্রীরা টার্মিনালে এসে ফিরে গেছেন।
পরিবহন নেতারা বলেন, কুমিল্লা নগরের জাঙ্গালিয়া, শাসনগাছা ও চকবাজার—এই তিনটি প্রধান বাস টার্মিনাল থেকে কুমিল্লা-ঢাকা, কুমিল্লা-চট্টগ্রাম, কুমিল্লা-সিলেট, কুমিল্লা-নোয়াখালী, কুমিল্লা-ফেনী, কুমিল্লা-চাঁদপুরসহ বিভিন্ন রুটে অন্তত ৩০টি পরিবহনের কয়েক হাজার বাস ও মিনিবাস চলাচল করে। এসব রুটে রুট পারমিটবিহীন ‘আইদি’ পরিবহন চলাচলের প্রতিবাদে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়। পরিবহন নেতাদের দাবি, ২০২৩ সালে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে আইদি পরিবহন চলাচল শুরু করলেও কুমিল্লা থেকে কোনো রুট পারমিট দেওয়া হয়নি। এর পরও তারা নিয়ম না মেনে বাস চালিয়ে যাচ্ছে।
ধর্মঘট চলাকালে দেখা যায়, ঢাকাগামী এশিয়া এয়ারকন, রয়েল, মায়ামি, তিশা, এশিয়া ট্রান্সপোর্ট, এশিয়া লাইনের সব বাস টার্মিনাল ও রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। চাঁদপুরগামী বোগদাদ, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরগামী উপকূল, ফেনীগামী যমুনা, চট্টগ্রামগামী সৌদিয়া, তিশা, গ্রামবাংলা, সিলেটগামী রিয়েল কোচ, কুমিল্লা ট্রান্সপোর্ট, বরুড়াগামী বলাকা, দাউদকান্দিগামী পাপিয়া, হোমনা পরিবহন, নবীনগরগামী সুগন্ধাসহ সব বাস বন্ধ। এদিকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় কর্মস্থলগামী মানুষ, শিক্ষার্থী ও দূরপাল্লার যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। এ সময় অনেককে বিকল্প যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। বেলা ১১টায় সোহানা শারমিন নামে এক যাত্রীর সঙ্গে কথা হয় শাসনগাছায়। তিনি বলেন, বাস না পেয়ে ইজিবাইকে করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আলেখারচর আসি। এরপর মহাসড়কে চলাচলকারী ঢাকার বাসে উঠি। ভাড়া আগের মতোই।
আইদি পরিবহনের চেয়ারম্যান মীর পারভেজ আলম অভিযোগ করেন, ২০২৩ সালে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে অনুমতি নিয়ে কুমিল্লা-চাঁদপুর রুটে তাদের বাস চলাচল শুরু হয়। কিন্তু শুরু থেকেই কুমিল্লা বাস মালিক গ্রুপের একটি সিন্ডিকেট চলাচলে বাধা দেয়। এ কারণে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন রুট পারমিট দেয়নি।
অন্যদিকে কুমিল্লা বাস মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, আইদি পরিবহন চাঁদপুর জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি পেলেও কুমিল্লা থেকে রুট পারমিট নেয়নি। বৃহস্পতিবার ফের বাস আনার চেষ্টা করলে সকাল থেকে নগরীর তিনটি টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাফর সাদিক বলেন, আইদি পরিবহনের কুমিল্লা থেকে কোনো রুট পারমিট নেই। তাদের একাধিকবার বাস চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশ অমান্য করায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন