

বাংলাদেশে শীতকাল সাধারণত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এ সময়ে ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়, ফলে নানা ধরনের সংক্রমণ ও শ্বাসযন্ত্রের রোগ বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এসব রোগ বেশি দেখা যায়। শীতকালে সাধারণত সর্দি-কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ দেখা দেয়।
ভাইরাসজনিত রোগ যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, রাইনোভাইরাস আক্রান্ত হলে নাক দিয়ে পানি পড়া, গলাব্যথা, হাঁচি, কাশি, জ্বর, মাথাব্যথা হয়। এ থেকে নিরাময় পেতে চাইলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম, গরম পানি পান, প্যারাসিটামল এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ সেবন করতে হবে।
শীতকালীন নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিস ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত সংক্রমণের ফলে হয়। শিশু, বয়স্ক ও ক্রনিক ফুসফুসের রোগীদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ। এর লক্ষণগুলো হলো জ্বর, কাশি, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট। গরম কাপড় ব্যবহার, টিকা, ঠান্ডা বাতাস এড়িয়ে চলার মাধ্যমে প্রতিরোধ তৈরি করা সম্ভব।
শীতকালীন অ্যাজমা ও অ্যালার্জিক কাশির কারণ ঠান্ডা বাতাস, ধুলো, ধোঁয়া ও পরাগরেণুতে সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি। লক্ষণগুলো হলো শ্বাসকষ্ট, কাশি, হুইজিং। প্রতিরোধ গড়তে ইনহেলার ব্যবহার, অ্যালার্জি ট্রিগার এড়ানো, মুখ ও নাক ঢেকে রাখতে হবে।
শীতকালীন চর্মরোগের কারণ হলো শীতকালে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় ত্বক শুষ্ক হয়। ত্বক ফেটে যাওয়া, চুলকানি, খুশকি এর লক্ষণ। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার, গরম পানি দিয়ে গোসল না করা, পর্যাপ্ত পানি পান করা এর প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
ডায়রিয়া: শীতকালে শিশুদের মধ্যে রোটাভাইরাসের সংক্রমণে ডায়রিয়া সাধারণ সমস্যায় পরিণত হয়। লক্ষণ হিসেবে পাতলা পায়খানা, বমি, ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়। চিকিৎসা হলো— ওরস্যালাইন, পানি, হালকা খাবার, প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ।
সাইনুসাইটিস ও টনসিলাইটিসের কারণ: ঠান্ডা লাগা বা ভাইরাসের সংক্রমণ। এর ফলে মাথাব্যথা, মুখে চাপ অনুভব, গলাব্যথা, গিলতে কষ্ট হয়। প্রতিরোধ হিসেবে ঠান্ডা পানীয় পরিহার, গরম পানির বাষ্প গ্রহণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রয়োজন।
জয়েন্ট পেইন: ঠান্ডা আবহাওয়ায় জয়েন্টে রক্তসঞ্চালন কমে ব্যথা বাড়ে। ফলে উষ্ণ কাপড় পরা, হালকা ব্যায়াম, উষ্ণ সেক দিতে হবে। গরম কাপড় পরিধান করা, নিয়মিত হাত ধোয়া ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, পর্যাপ্ত ঘুম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত পানি পান করা (শীতকালেও), ভ্যাকসিন গ্রহণ, বন্ধ জায়গায় ভিড় এড়ানো ও জানালা খোলা রাখলে নিরাময়ের সুযোগ তৈরি হয়।
চিকিৎসা পরামর্শ: ঘরোয়া উপায়ে জ্বর বা ঠান্ডা না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে সামান্য উপসর্গও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা প্রয়োজন। অ্যান্টিবায়োটিক নিজে থেকে খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
ডা. নাজমুন নাহার
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
চেম্বার: আলোক হাসপাতাল, মিরপুর-৬
মন্তব্য করুন