জনগণের কাছে তথ্যসেবা দ্রুত পৌঁছাতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইট থাকা বাধ্যতামূলক। ২০১৪ সালে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়। তবে সে নির্দেশনা মানছে না ক্রীড়া পরিদপ্তরের আওতাধীন শারীরিক শিক্ষা কলেজগুলো। নির্দেশনা উপেক্ষা করে ৯ বছরেও ওয়েবসাইট তৈরি করেনি তারা। এজন্য ওইসব প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশও (শোকজ) দিয়েছে ক্রীড়া পরিদপ্তর।
জানা গেছে, ক্রীড়া পরিদপ্তরের আওতায় ঢাকাসহ সারা দেশে ৬টি সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে শুধু রাজশাহী শারীরিক শিক্ষা কলেজে ওয়েবসাইট রয়েছে। ওয়েবসাইট না থাকায় কলেজগুলোতে কী ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়, সে সম্পর্কে সহজে কিছুই জানা যায় না। একইভাবে কলেজগুলোর বিভিন্ন তথ্য এবং সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের জনগণ।
২০১৪ সালে সরকারি নির্দেশনার পাশাপাশি ২০১৫ সালের মে মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা পরিপত্রেও ওয়েবসাইট থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়। তারপরও ওয়েবসাইট ব্যবহারের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করাকে দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি কলেজগুলোকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ক্রীড়া পরিদপ্তর। নোটিশে ওয়েবসাইট তৈরি না করার কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের অতীব গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রতিপালন না করার কারণ ব্যাখ্যাসহ দ্রুত ওয়েবসাইট তৈরি করে ক্রীড়া পরিদপ্তরকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে মাসের প্রথম সপ্তাহে বিভিন্ন তথ্য আপলোড ও হালনাগাদকরণের তথ্যও পরিদপ্তরকে জানাতে বলা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, জনগণের সঙ্গে যোগসূত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ওয়েবসাইট। প্রতিষ্ঠানের সব তথ্য ওয়েবসাইটে নিয়মিত আপলোডসহ হালনাগাদ করে ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে তথ্য ও সেবাগুলো সহজীকরণ এবং জনগণের দোরগোড়ায় দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ওয়েবসাইট তৈরি করে বর্তমান সরকার। তা ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৫ সালের মে মাসের পরিপত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করার নির্দেশনা থাকলেও ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়নি, যা খুবই দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত।
এ বিষয়ে ক্রীড়া পরিদপ্তরের পরিচালক আ ন ম তরিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, বর্তমান সময়ে
ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন তথ্য জনগণের কাছে তুলে ধরা হয়। জনগণের সঙ্গে যোগসূত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ওয়েবসাইট, তাই প্রতিষ্ঠানের সব তথ্য ওয়েবসাইটে নিয়মিত আপলোডসহ হালনাগাদ করে ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিতে সরকারি নির্দেশনায় উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি পরিচালকের দায়িত্ব নেওয়ার পর ক্রীড়া পরিদপ্তরের ওয়েবসাইট পরিদর্শন করে জানতে পারি সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজগুলোতে ওয়েবসাইট নেই।
তরিকুল ইসলাম বলেন, ওয়েবসাইট না থাকায় এসব তথ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ। সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও ওয়েবসাইট না থাকার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এ-সংক্রান্ত ব্যাখ্যা জানতে প্রতিষ্ঠানগুলোতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে ওয়েবসাইট তৈরি করে ক্রীড়া পরিদপ্তরকে অবহিত করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, পরিদপ্তরে নোটিশের জবাবে প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারি নির্দেশনার বিষয়টি না জানার কারণে ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়নি। এজন্য বিষয়টিকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ওয়েবসাইট না থাকার কারণ জানতে চাইলে ঢাকার মোহম্মদপুর শারীরিক শিক্ষা কলেজের অধ্যক্ষ মজিবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, আমি অধ্যক্ষ হিসেবে নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। সরকারি নির্দেশনার বিষয়টি জানা ছিল না। এ ছাড়া তৎকালীন সময়ে যারা ছিলেন, তারা কেন করেননি সেটা আমার জানা নেই।
ক্রীড়া পরিদপ্তরের শোকজের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, কারণ জানতে চাওয়ার পাশাপাশি দ্রুত ওয়েবসাইট তৈরি করতে বলা হয়েছে। এর পরই আমরা ওয়েবসাইট তৈরির কাজ শুরু করেছি। এ জন্য জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছি। আশা করি দ্রুত ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারব।
ওয়েবসাইট ব্যবহারের বিষয়ে সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং আওতাধীন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বাংলা ও ইংরেজিতে নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকতে হবে। এসব ওয়েবসাইটে তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এবং সংশ্লিষ্ট প্রবিধান অনুযায়ী তথ্য আপলোড এবং হালনাগাদ করতে হবে। এ ছাড়া তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার্থে ওয়েবসাইট গঠনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ সব ওয়েবসাইট হবে তথ্য উপস্থাপন এবং অন্যান্য দপ্তর, সংস্থা ও জনগণের সঙ্গে যোগসূত্রের মাধ্যম।