ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) বাংলাদেশ লিমিটেডের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে (এডিআর) অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তদন্ত কমিটি। প্রতিষ্ঠানটির ১৫৭ কোটি টাকার ভ্যাটের পাওনা-সংক্রান্ত দুটি মামলার বিপরীতে এই এডিআর কার্যক্রম করে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ভ্যাট। এর আগে বহুজাতিক এই প্রতিষ্ঠানটির ২ হাজার কোটি টাকার ভ্যাটের পাওনা তদন্ত কমিটির মাধ্যমে অব্যাহতি দিয়েছিল এলটিইউ ভ্যাট। পরে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন তদন্ত কমিটি ভ্যাট আদায়ের নির্দেশ দেয়। একই ঘটনা ঘটেছে এডিআরেও। এ ক্ষেত্রে আইনি ফাঁক-ফোকর বের করে এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আর এই এডিআরও আইনসঙ্গত ছিল না বলে মত দিয়েছে এনবিআরের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, দেশে ব্যবসা করা বিএটি বাংলাদেশ লিমিটেডের দুটি পাওনা-সংক্রান্ত মামলা চলতি বছর এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। তবে এই বিরোধ আইনসম্মতভাবে হয়নি। জোগানদারের উৎসে ভ্যাট কর্তনের কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি তা করেনি, যার কারণে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত উৎসে ভ্যাটের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭৪ কোটি ৬১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৮৬ টাকা। আর ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত উৎসে ভ্যাটের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮২ কোটি ৫৯ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৫ টাকা। দুই ধাপে সর্বমোট ১৫৭ কোটি ২০ লাখ ৯৩ হাজার ৬৮১ টাকা আদায়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় এলটিইউ ভ্যাট। ভ্যাটের এই নোটিশের পর আদালতের দ্বারস্থ হয় বিএটি। পরে হাইকোর্টে আবেদনের মাধ্যমে মামলাটি আদালত থেকে এডিআরে নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। আর বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিষয়টি সুরাহা হয়। তবে এই এডিআর কার্যক্রম আইনসঙ্গত ছিল না বলে এনবিআরের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জোগানদারের ভ্যাট কর্তনের বিষয়টি ভ্যাট আইনের ৪১-এর গ ধারা (২) অনুযায়ী এডিআরের বিষয় না। আইনের আরেকটি ধারায় বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ থাকলেও মামলাটি বিরোধ নিষ্পত্তিতে না নেওয়া অধিকতর সমীচীন ছিল বলেও মতামত দিয়েছে কমিটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান ও এনবিআরের ভ্যাট নীতির সদস্য জাকিয়া সুলতানা প্রতিবেদনের বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি এনবিআর দেখবে। আমরা শুধু আইনি বিষয়টি দেখেছি।
এনবিআরের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএটির দুটি পাওনার মোট ১৫৭ কোটি টাকার এডিআরের বিষয়টি ভ্যাট আইনের ৪১-গ এর (১) এবং ৪১ গ-এর (২) ধারা অনুযায়ী এডিআরে নিষ্পত্তির বিষয় ছিল না। আরেকটি ধারায় অবকাশ রয়েছে। তাই বিষয়টি এডিআরে নিষ্পত্তি না করা অধিকতর সমীচীন ছিল বলে মনে করে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া এলটিউর বিরোধিতার বিষয়ে সবার স্বাক্ষরিত সিদ্ধান্ত এলটিইউ ভ্যাট দপ্তর থেকে আদালত ব্যতিত সবাইকে জানানো হয়েছে। আর আদালতকে জানানোর জন্য বিএটিকে বলেছে এলটিউ ভ্যাট কর্তৃপক্ষ, যা এডিআর অবহিতকরণ সংক্রান্ত বিধানের ব্যত্যয় ঘটেছে। অর্থাৎ ভ্যাটের ফ্যাসিলিটর বা সহায়তাকারী সংশ্লিষ্ট সবাইকে লিখিতভাবে অবহিত না করে এলটিইউ ভ্যাট অবহিত করেছে। তদন্ত কমিটির মতামতে আরও বলা হয়েছে, ক্রেতা নিজে উৎসে কর্তনকারী হওয়ায়, সংশ্লিষ্ট সরবরাহে উৎপাদনকারী হতে মূসক-১১ চালান না থাকায় বিএটির জন্য উৎসে ভ্যাট কর্তনের দায় রয়ে যায় বলেও মনে করে তদন্ত কমিটি।
এনবিআর সূত্র জানায়, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইনসম্মত হয়েছে কি না, বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ে ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে এনবিআর। সংস্থাটির ভ্যাট নীতির সদস্য জাকিয়া সুলতানাকে আহ্বায়ক করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন, ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ, ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকার (দক্ষিণ) কমিশনার শওকত আলী সাদী, ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকার (দক্ষিণ) উপ-কমিশনার মো. শহীদুজ্জামান সরকার। এই কমিটি ভ্যাট আইনের বিভিন্ন ধারা-উপধারা এবং এনবিআরের প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছে এনবিআর সূত্র।