কালোবাজারি ঠেকাতে গত বছরের মার্চে ট্রেনের টিকিট কাটায় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু তারপরও ঠেকানো যাচ্ছিল না অসাধু চক্রের দৌরাত্ম্য। কালোবাজারিদের মাধ্যমে রেলের টিকিট বিক্রি রোধে সরকার কঠোর মনোভাব প্রকাশ করলেও বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছিল না। টিকিট না পেয়ে দ্বিগুণ-তিন গুণ দামে ব্ল্যাকে নিতে বাধ্য হচ্ছিলেন সাধারণ যাত্রীরা। পরে দেখা যায়, আসলে শর্ষের মধ্যেই ভূত। কারণ, টিকিট কালোবাজারিতে জড়িত খোদ রেল ও সহজ ডটকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই।
গত ২৫ জানুয়ারি টিকিট কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ঢাকার কমলাপুর ও বিমানবন্দর এলাকা থেকে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৩। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে টিকিট কালোবাজারিতে রেলস্টেশনের কাউন্টারম্যান থেকে শুরু করে সহজ ডটকমের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয়টি। র্যাব জানিয়েছে, রেলের এবং সহজের যারা জড়িত, তাদের মধ্যে বেশিরভাগকে শনাক্ত করা হয়েছে। তারা র্যাবের নজরদারিতে আছে।
র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, যাদের এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা মূলত টিকিট সংগ্রহ এবং বিক্রিতে জড়িত। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন রুটের পাঁচ শতাধিক টিকিট কালোবাজারে বিক্রি করত তারা। কাউন্টারম্যানরা তাদের এসব টিকিট কেটে দেয়। সাধারণত একজন একবার টিকিট কাটলেই তার এনআইডির তথ্য সার্ভারে সেভ হয়ে যায়। ওই এনআইডি দিয়েই এসব টিকিট কেটে নেওয়া হয়। এটা এনআইডির প্রকৃত মালিক জানতেও পারেন না। একজনের এনআইডি দিয়ে পাশাপাশি বিভিন্ন তারিখে অনেক টিকিট কাটা হয়।
র্যাব জানায়, কালোবাজারিরা জানিয়েছে এসব টিকিট অনলাইনে আসার পর সেগুলো কিনতে সাধারণ জনগণের অনেক বেগ পেতে হয়। অনেকেই টিকিট কাটতে পারেন না। কারণ, সহজ ডটকমের যারা সার্ভারের দায়িত্বে থাকে, তারা সার্ভার ডাউন করে রাখে। এজন্য টিকিট কালোবাজারির টাকার একটা অংশ সহজের কর্মকর্তারাও পান। রেলের কিছু কর্মকর্তাও এতে জড়িত।
টিকিট কালোবাজারি নিয়ে তদন্ত করে র্যাব জানায়, অনলাইনে টিকিট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সহজ ডটকমের সফটওয়্যারে টিকিটগুলো বুকড দেখানো হয়। একটা ট্রেনে প্রায় ১ হাজার টিকিট থাকে। ১০ দিন আগে একটা ট্রেনের টিকিট অনলাইনে ছাড়া হয়। টিকিট ছাড়ার দিন সকাল ৮টা বাজার কয়েক মিনিট পরই সব টিকিট বুকড দেখায়। আসলে সহজ ডটকম কারসাজি করে বুকড দেখায়। তখন সাধারণ মানুষ যেসব টিকিট কাটতে পারেন না, আর এই সুযোগে কাউন্টারম্যানরা সেগুলো কেটে নিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করে।
র্যাব-৩-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক আরিফুর রহমান কালবেলাকে বলেন, পরবর্তী কার্যক্রম হচ্ছে কাউন্টারের লোক এবং সহজ ডটকম ও রেলের যেসব কর্মকর্তা জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা। কয়েকজনকে শনাক্ত করে তাদের পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।
টিকিট কালোবাজারির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহজ ডটকমের চিফ অপারেটিং অফিসার সন্দীপ দেবনাথ বলেন, মনে হয় না আমাদের কোনো কর্মকর্তা কালোবাজারিদের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু আমরা র্যাবের এ অভিযানের প্রশংসা করি। অনেকদিন ধরেই টিকিট কালোবাজারি নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা অস্থিরতা ছিল। কিন্তু কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছিল না। আমরাও চাই বিষয়টি একেবারে নির্মূল হোক। র্যাব আমাদের কাছে কোনো সহযোগিতা চাইলে অবশ্যই করব।
তবে এ বিষয়ে জানতে কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।