বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যুৎ আমদানি করতে নেপালের সঙ্গে আলোচনা করছে। প্রাথমিকভাবে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি ঠিক হলেও এখনো দাম নির্ধারণ হয়নি। দাম চূড়ান্ত করতে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে নেপালের কাঠমান্ডুতে অবস্থান করছে।
প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিদ্যুৎ বিভাগের নবায়নযোগ্য জ্বালানি অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব রায়হান আখতার। দলে রয়েছে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) একজন পরিচালক ও আইপিপি সেল-১-এর পরিচালক। বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে ওই দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বর্তমানে আমাদের প্রতিনিধিদল আলোচনা করতে নেপালে রয়েছে। তারা ফিরলে দামের বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, আগামী জুনের মধ্যে নেপালের বিদ্যুৎ আমদানি করতে চায় বাংলাদেশ। প্রাথমিকভাবে চুক্তিতে ইউনিটপ্রতি দাম ধরা হয়েছে ৯ দশমিক ৩০ নেপালি রুপি (৭ দশমিক ৬৮ টাকা)। এর মধ্যে নেপাল সরকার পাবে ৫ দশমিক ২৫ রুপি। বাকি অর্থ পাবে ভারত। কারণ ভারতের ভূখণ্ড ও সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে। ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগম লিমিটেড (এনভিভিএন) বিদ্যুৎ পাঠানো-সংক্রান্ত সার্ভিস চার্জ, হুইল চার্জ হিসেবে এই টাকা পাবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, নেপাল থেকে ২৫ বছর মেয়াদে জলবিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের সরাসরি কোনো সীমান্ত না থাকায় নেপালের বিদ্যুৎ আমদানি হবে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে। বর্তমানে দুটি সঞ্চালন লাইন দিয়ে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে নেপালের বিদ্যুৎ আনতে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার এইচভিডিসি সাব-স্টেশন ব্যবহার করা হবে। এই স্টেশনের এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির সক্ষমতা রয়েছে। তবে বর্তমানে এটির মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৯৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। সাব-স্টেশনটির অব্যবহৃত ক্ষমতা ব্যবহার করে নেপাল থেকে ভারতের সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানি করা সম্ভব। নেপালের ৯০০ মেগাওয়াট আপার কর্নালি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে এই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনতে বাংলাদেশকে সঞ্চালন লাইন ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার বিনিময়ে ভারত চায় তার উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোকে সংযুক্ত করার জন্য সঞ্চালন লাইন নির্মাণের সুবিধা দিক বাংলাদেশ। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে আরেকটি সঞ্চালন লাইন নির্মাণের বিষয়েও আলোচনা চলছে ভারতের সঙ্গে। এই সঞ্চালন লাইন নির্মাণে দুটি করিডোর প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এই সঞ্চালন লাইনের বিপরীতে নেপালের কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রে তৃতীয় কোনো পক্ষ বা দেশ বিনিয়োগ করতে পারবে না বলে শর্ত দিয়েছে। প্রতিনিধিদল এ বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করবে।
প্রাথমিকভাবে নতুন যে দুটি করিডর নির্বাচন করা হয়েছে, সেগুলো হলো নেপালের আনামারি থেকে ভারত হয়ে পঞ্চগড় (বাংলাদেশ) করিডর, যার মোট দৈর্ঘ্য ৪৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভারতের মধ্যে পড়েছে ২৪ কিলোমিটার। দ্বিতীয়টি হলো নেপালের আনামারি থেকে ভারত হয়ে ঠাকুরগাঁও পর্যন্ত। এই লাইনের দৈর্ঘ্য ৮৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভারতের মধ্যে পড়েছে ৩৩ কিলোমিটার।
গত বছরের ৬ ডিসেম্বর ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে নীতিগত অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) এ বিদ্যুৎ আমদানি হবে। এতে বছরে ব্যয় হবে ১৩০ কোটি টাকা। এরও আগে নেপালে আপার কার্নালি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনতে ২০১৯ সালে জিএমআরের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি (পিপিএ) সই করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।