বাড়ির চারদিকে ৬ ফুট উঁচু দেয়াল। এই দেয়ালেই বন্দি মুক্তিযোদ্ধা ও হিন্দু সম্প্রদায়সহ আটটি পরিবার। মই দিয়ে সেই লম্বা দেয়াল টপকে চলাচল করতে হয় বাড়ির বাসিন্দাদের। কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পশ্চিম পাশে এই আটটি পরিবার এভাবে দেয়ালবন্দি হয়ে আছে ২৪ বছর ধরে।
গতকাল সোমবার সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, দেবিদ্বার সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পশ্চিমে দুই পাশে লম্বা দেয়াল এবং দুই পাশে ঘরবাড়ি। ২৪ বছর ধরে মই ও বালির বস্তার ওপর দিয়ে পারাপার করলেও ১৫ দিন আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বালির বস্তা ও মই সরিয়ে ফেলে। এতে দেয়ালবন্দি হয়ে পড়েছে আট পরিবারের সবাই। বাইরে যাতায়াত ও হাটবাজারে যেতে পারছেন না তারা।
দেয়ালবন্দি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হারুনুর রশিদ মৃধা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের দেয়াল টপকে পারাপার হচ্ছি। একটা বন্দি জীবন পার করছি। বাড়ির ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। আমি নামাজ পড়তে মসজিদে যেতে পারি না। এ বয়সে দেয়াল টপকে আসা-যাওয়া কষ্ট হচ্ছে। আমরা আটটি পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছি।
অপর বাসিন্দা বদিউল আলম বাবুল ও অমূল্য চন্দ্র সূত্রধর বলেন, আমাদের বাড়ির কারও মৃত্যু হলে লাশ বাইরে নিতে হয় হাসপাতালটির দেয়াল টপকে। এখন সেটাও আর পারব না। জেলা সিভিল সার্জন থেকে লিখিত অনুমতি নিয়ে এতদিন বালুর বস্তা ও মই দিয়ে দেয়াল টপকে পারাপার করছিলাম। কিন্তু বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা এসে দেয়ালের পাশের মই ও বালির বস্তা সরিয়ে ফেলায় আমরা এখন ঘরবন্দি অবস্থায় আছি।
তারা আরও বলেন, সাবেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আহম্মদ কবীর পৌরসভা থেকে হাসপাতালের পশ্চিম পাশ হয়ে এসএ সরকারি কলেজ রোড পর্যন্ত একটি ড্রেন নির্মাণের আবেদন করেছিলেন। ওই ড্রেন নির্মাণ হলে আমরা এর ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারব। ড্রেনটি নির্মাণ হলে হাসপাতালের ভেতরেও পানি জমবে না। আমরা এ বন্দিদশা থেকে মুক্তি চাই।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. আলী এহসান বলেন, হাসপাতালের দেয়াল টপকে আসা-যাওয়া নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটে। এখানে বাইরের লোকজন হাসপাতালের ভেতরে এসে আড্ডা দেয়। আইনশৃঙ্খলা সভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাই হাসপাতালের দেয়াল টপকে আসা-যাওয়া বন্ধ করা হয়েছে।