রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রদের ১১টি আবাসিক হলে রয়েছে ৫ হাজার ৩৮৩টি সিট। এর মধ্যে পাঁচ শতাধিক সিটই চলে গেছে হল প্রশাসনের দখলের বাইরে। এসব সিটের অধিকাংশ দখল করে থাকছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, গণমাধ্যমকর্মীসহ প্রভাবশালী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। ফলে একদিকে যেমন তাদের সিট থেকে সরানো যাচ্ছে না, অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এসব সিটে উঠতে পারছেন না। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দখল হওয়া এসব সিট নিয়ে প্রভাবশালীদের হাতে শিক্ষার্থীদের মারধর ও হল থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি লাঞ্ছিত হয়েছেন শিক্ষকরাও। যেন ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের কাছে জিম্মি হল প্রশাসন।
হল প্রাধ্যক্ষ ও জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের কিছু সিট আগেও ক্ষমতাসীনদের দখলে থাকত। কিন্তু আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি সিট বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এতে হলের নিয়ন্ত্রণ হারানোর পাশাপাশি প্রতিবছর প্রায় ৬ লাখ টাকার ভাড়া হারাচ্ছে হল প্রশাসন। তবে বেদখল হওয়া এসব সিট দখলে নিতে দ্রুত অভিযান চালানোর আশ্বাস দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলে ৩১২টি আসনের বিপরীতে অনাবাসিক ছাত্র আছেন প্রায় ৫০ জন, মতিহার হলের ৫৯০টি সিটের মধ্যে অনাবাসিক ছাত্র ১৫ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৩০ জন, শাহ মখদুম হলে ৬৮, নবাব আব্দুল লতিফ হলে ৪৩, সৈয়দ আমীর আলী হলে ৫০, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ১৩৭, মাদার বখ্শ হলে ৮৪, শহীদ শামসুজ্জোহা হলে অনাবাসিক ৪১ জন রয়েছেন। তবে শহীদ জিয়াউর রহমান ও শহীদ হবিবুর রহমান হলের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের তথ্য দেয়নি প্রশাসন।
এ বিষয়ে ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রশাসন নিরুপায়। হল প্রশাসনের মাধ্যমে কাউকে বৈধ সিটে তুলে দিলে দেখা যায় পরে তাকে হুমকি দিয়ে বের করে দেওয়া, এমনকি মারধর করা হচ্ছে। এমনকি এ নিয়ে কথা বলতে গেলে বিভিন্ন সময় শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনাও ঘটেছে।
সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে আমরা অভিযান চালিয়ে অনাবাসিক ছাত্রদের বের করে আবাসিক ছাত্রদের আসন দিয়েছিলাম। আমার হলে বর্তমানে প্রায় ১৩৭টি আসনের আবাসিকতা নেই। এসব আসনের অধিকাংশই দখল করে আছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশে পাসকৃত সংরক্ষিত প্রতিবন্ধী ছাত্রদের আসনও তারা অবৈধভাবে দখল করে অবস্থান করছে।
হল প্রাধ্যক্ষ কমিটির আহ্বায়ক ডা. হাসনা হেনা বলেন, ‘হলের সিট দখল হওয়ার সমস্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে বিভিন্ন সময়ই ক্ষমতাসীনদের দখলে কিছু সিট থাকত। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা চেষ্টা করছি হলের সিটগুলো দখল করতে।
সার্বিক বিষয়ে উপ-উপাচার্য সুলতান-উল ইসলাম বলেন, আসলেই হলের বেদখল হওয়া সিট মুক্ত করা দরকার। সেটি নিয়ে হল প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে কাজ করছি। আগামীতে বিভিন্ন হলে অভিযান পরিচালনা করে হলের সমস্যা দূর করা হবে।
মন্তব্য করুন