এক মাসে পরপর দুটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটল নরসিংদীতে। এ ছাড়া পৃথক ঘটনায় আরও চারজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে নরসিংদী সদর উপজেলার মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হাসানকে (৪০) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন তার সঙ্গে থাকা দুজন। একের পর এক জনপ্রতিনিধি হত্যার ঘটনায় উদ্বিগ্ন এখানকার সাধারণ মানুষ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত মাহবুবুলের স্বজনরা জানান, মঙ্গলবার রাতে ভগিরথপুর মাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে ১০ থেকে ১২ জন দলীয় নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন মাহবুবুল হাসান। পথে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আজহার অমিত প্রান্তের মালিকানাধীন ওবায়দুল্লাহ টেক্সটাইলের সামনে এলে সাত-আটজন অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে তারা মাহবুবুল হাসানকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়। এ সময় তার সঙ্গে থাকা সাঈদ হাসান পাপ্পু (৩৮) ও ফরহাদ মিয়া (৪০) গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহবুবুল হাসানকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত দুজনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
নিহত মাহবুবুল হাসানের ছোট ভাই হাফেজ মোহাম্মদ অলিউল্লাহ বলেন, ‘সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমার ভাই যে পক্ষে কাজ করেছেন, তারা বিজয়ী হয়েছেন। এ হিংসার জেরে পরাজিত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে হত্যা করেছে।’
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো থানায় মামলা হয়নি।
এদিকে গত ২৩ মে সদর উপজেলার আলোকবালীতে সরকারি প্রকল্পের বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় তিনজন গুলি ও টেঁটাবিদ্ধসহ উভয় গ্রুপের অন্তত ২০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে দুদিন পর ২৫ মে রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলোকবালী ইউনিয়নের খোদাদিল্লা গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে রেদন মিয়া (৪৮) মারা যান।
গত ২২ মে বিকেলে রায়পুরায় উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুমন মিয়াকে (৪০) উপজেলার পাড়াতলী ইউনিয়নের মামদেরকান্দি গ্রামে নির্বাচনী প্রচারকালে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ২৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪০ থেকে ৪৫ জনকে আসামি করে নিহত সুমনের বাবা চরসুবুদ্ধি ইউপি চেয়ারম্যান হাজী নাসির উদ্দিন রায়পুরা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। অন্যদিকে দ্রুতবিচার আইনে আরও একটি মামলা করেন রায়পুরার সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ছেলে রাজীব আহমেদ প্রার্থ। দুই মামলাতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে চশমা প্রতীকের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবিদ হাসান ওরফে রুবেল মিয়াকে।
এর আগে গত ২০ মে সন্ধ্যায় নরসিংদী শহরতলির হাজীপুর বৌবাজার এলাকায় যাত্রীর ছুরিকাঘাতে ইউনুছ মিয়া (৩৭) নামে এক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক নিহত হন। ১০ মে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল এলাকায় রেললাইনের পাশ থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গত ৬ মে শিবপুর উপজেলার আইয়ুবপুর ইউনিয়নের বংশিরদিয়া এলাকায় সোনিয়া আক্তার (২৫) নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ব্যাপারে নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হত্যাকাণ্ডটি একটা টার্গেট কিলিং। এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। আমরা এগুলো যাচাই-বাছাই করছি। এ ছাড়া অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামিদের গ্রেপ্তারসহ হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ কাজ করছে।