

টানা লোকসানের মুখে রাজশাহীর পদ্মার চরে প্রায় দেড় হাজার পরিবারের জন্য স্থাপিত সৌরবিদ্যুৎ প্লান্টটি হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে বৃহস্পতিবার থেকে অন্ধকারে রয়েছেন চরের বাসিন্দারা। বিদ্যুৎহীন অবস্থায় কয়েক হাজার মানুষ পড়েছেন দুর্ভোগে।
২০১৫ সালে সরকারের ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড’-ইডকলের কারিগরি সহযোগিতায় গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহে সৌরবিদ্যুতের প্লান্ট স্থাপন করেছিল বেসরকারি সংস্থা আভা। প্লান্টটির নাম দেওয়া হয়েছিল আভা মিনি-গ্রিড প্রজেক্ট।
জানা গেছে, দুর্গম চরাঞ্চলের ঘরে ঘরে সৌর বিদ্যুৎ দিতে ২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর এ প্লান্ট স্থাপন করা হয়। এরপর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের আষাড়িয়াদহ, পানিপার, ভুবনপাড়া, কানপাড়া, হনুমন্তনগর ও নওশেরা গ্রামের প্রায় ১ হাজার ৩০০ পরিবারকে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। প্রি-পেইড মিটারে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য গ্রাহককে দিতে হতো ৩০ টাকা। এরপরও লোকসানের মধ্যেই চলছিল।
চর কানাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, প্রথম দিকে প্লান্ট থেকে ২৪ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। বছর দু-এক ধরে শুধু দুপুরে জোহরের নামাজের সময় ১ ঘণ্টা, আসরের নামাজের সময় ৩০ মিনিট, মাগরিবের নামাজের সময় থেকে রাত ১০টা, রাত ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ দেওয়া হতো। বৃহস্পতিবার থেকে একেবারেই বিদ্যুৎ বন্ধ।
আভার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারের ‘টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ (স্রেডা) এই প্লান্ট স্থাপনে প্রণোদনা দেয়। কারিগরি সহায়তা করে সরকারের আরেক সংস্থা ইডকল। এই সংস্থাটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সমীক্ষাও করেছিল। সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, প্লান্টটি চালালে প্রতি মাসে ১৫ লাখ টাকা করে লাভ করতে পারবে আভা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত লাভের মুখ দেখা যায়নি। সবমিলিয়ে লোকসান হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। এই প্লান্টে ৫৯৪টি সৌর বিদ্যুতের প্যানেল স্থাপন করা আছে। এগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বলা হয়েছিল ১৪৮ দশমিক ৫০ কিলোওয়াট। প্যানেলের কার্যক্ষমতা কমে বর্তমানে মাত্র ৬০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছিল। এই বিদ্যুতে প্রায় ১ হাজার ৩০০ গ্রাহকের মিটারে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছিল না। এ কারণে বৃহস্পতিবার গ্রিডটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিদ্দিকুর রহমান বলেন, হঠাৎ করে ঈদের পর এভাবে বিদ্যুতের প্লান্ট বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হয়নি। ফ্রিজের কোরবানির মাংস বের করে রান্না করতে হচ্ছে। চরের বেশিরভাগ মোবাইল ফোন চার্জের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ফ্রিজ-টিভিগুলোর এখন কী হবে কেউ জানে না। প্রায় ৫ হাজার টাকা দিয়ে বাড়িতে বাড়িতে মিটার নিতে হয়েছে। সেটিও এখন লস।
আভা মিনি-গ্রিড প্রজেক্টের প্লান্ট ব্যবস্থাপক মিল্লাত হোসেন বলেন, চরে বিদ্যুতের চাহিদা ১২০ কিলোওয়াটের। আমরা সরবরাহ করতে পারছিলাম মাত্র ৬০ কিলোওয়াট। টানা লোকসান হচ্ছিল। সে কারণে প্লান্ট বন্ধ করে চলে এসেছি।