

ঘুরে দাঁড়াতে সাংগঠনিক পুনর্গঠনের পাশাপাশি নতুন কর্মসূচি প্রণয়নের দিকে মনোযোগ দিয়েছে বিএনপি। নতুন করে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে সরকার ও ক্ষমতাঘনিষ্ঠদের দুর্নীতি, লুটপাট ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা ইস্যুতে শিগগির রাজপথে সোচ্চার হতে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে কর্মসূচিহীন থাকা দলটি। গত শনিবার নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যুগ্ম মহাসচিবদের সঙ্গে হাইকমান্ডের ভার্চুয়াল বৈঠকে এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা সাপেক্ষে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। সে অনুযায়ী শিগগির নতুন কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি রাজপথে সক্রিয় হতে পারে। জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, নতুন কর্মসূচির ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে যে কোনো সময় কর্মসূচি আসতে পারে।
জানা গেছে, দলীয়ভাবে কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি যুগপৎভাবেও রাজপথে সক্রিয় হওয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে শিগগির যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসতে পারে দলটি। সরকারবিরোধী আন্দোলন নতুন করে গড়ে তোলা, সেটির কর্মকৌশল নির্ধারণ এবং নতুন কর্মসূচি প্রণয়নের লক্ষ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর গত ১২ থেকে ১৬ মে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে যুগপতের শরিকদের কাছ থেকে প্রস্তাব ও মতামত নেয় বিএনপি। মিত্রদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক অব্যাহত রাখারও সিদ্ধান্ত হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনকে গতিশীল করার অংশ হিসেবে এবার তৃণমূলের কথা শোনার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। দলে এমন উদ্যোগ অতীতে কখনোই ছিল না বলে দাবি নেতাদের। তিনজন নতুনসহ পাঁচ যুগ্ম মহাসচিবকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন পর্যায়ক্রমে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসবেন। হাবিব-উন-নবী খান সোহেল শনিবার, আব্দুস সালাম আজাদ রোববার, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি সোমবার, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স মঙ্গলবার, খায়রুল কবির খোকন বুধবার এবং আব্দুস সালাম আজাদ বৃহস্পতিবার এই দায়িত্ব পালন করবেন। গত রোববার থেকে তারা দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন।
২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর সাতজনকে যুগ্ম মহাসচিব পদে পদায়ন করা হয়। তবে তাদের সেভাবে কোনো দায়িত্ব ছিল না। গত ১৩ জুন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে ৪৫ জনের বড় রদবদলে পাঁচজন যুগ্ম মহাসচিবকে পদোন্নতি দিয়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে দুজন সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রচার সম্পাদককে পদোন্নতি দিয়ে যুগ্ম মহাসচিব করা হয়।
জানা গেছে, আগামীর আন্দোলন সামনে রেখে সংগঠনকে গতিশীল করতে যুগ্ম মহাসচিবদের সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। বিএনপির তৃণমূল নেতাদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, তারা তাদের সুখ-দুঃখ, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক সমস্যা আমলাতান্ত্রিক সাংগঠনিক জটিলতায় যথাসময়ে দলের কাছে পৌঁছাতে পারেন না। ঢাকায় গেলেও যথাযথ চ্যানেলে এসব সমস্যার কথা জানাতে তাদের দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। বিষয়টি হাইকমান্ডের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় তা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে দলীয় কার্যালয়ে বসে যুগ্ম মহাসচিবরা তৃণমূল থেকে আসা যে কোনো অভিযোগ, সমস্যার কথা শুনবেন এবং সম্ভব হলে সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে পরামর্শক্রমে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান দেবেন। অন্যথায় তারা বিষয়টি দলের ঊর্ধ্বতনদের নজরে আনবেন এবং দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করবেন। এর মধ্য দিয়ে তৃণমূলে সংগঠন আরও গতিশীল হবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের কেউ কিংবা কোনো গণমাধ্যমে বিএনপি ও দলের কাউকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর কোনো বক্তব্য এলে সেগুলো দলের নজরে আনা এবং প্রয়োজনে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
দলীয় কার্যালয়ে গতকাল দায়িত্ব পালন করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। তিনি বলেন, দলের সাংগঠনিক কাজের অংশ হিসেবে বিএনপি কার্যালয়ে প্রতিদিন যুগ্ম মহাসচিবরা ধারাবাহিকভাবে বসবেন। তারা সাংগঠনিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সব বিষয়েই নজর রাখবেন। বিভিন্ন জেলাসহ সাংগঠনিক বিভিন্ন ইউনিট থেকে যারা আসবেন, তাদের কোনো অভিযোগ-সমস্যা থাকলে তা শুনবেন, নোট করবেন এবং সে অনুযায়ী পরামর্শ দেবেন। এই কার্যক্রম দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে প্রত্যাশা তার।
জানা গেছে, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতি আনতে আগামীতে বিভাগভিত্তিক সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে একজন করে যুগ্ম মহাসচিবকে সম্পৃক্ত করা হতে পারে, যারা তৃণমূলের বিভিন্ন বিষয়ে সাংগঠনিক সম্পাদকদের পরামর্শ দেবেন। সে আলোকে আগামীতে দলে যুগ্ম মহাসচিবদের সংখ্যা ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ জন করা হতে পারে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শিগগির নতুন কর্মসূচি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। হাইকমান্ডের সঙ্গে যুগ্ম মহাসচিবদের ভার্চুয়াল বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ, সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ এবং ছেলের ছাগলকাণ্ডে আলোচিত রাজস্ব বোর্ডের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানসহ সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ও ক্ষমতাঘনিষ্ঠদের দুর্নীতি-লুটপাট, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিসহ নানা বিষয়ে কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তাব করেন যুগ্ম মহাসচিবরা। বৈঠকে সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত নানা চুক্তি নিয়েও আলোচনা হয়। এসব চুক্তি এখন খতিয়ে দেখছে বিএনপি। সেখানে দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু থাকলে তার প্রতিবাদে কর্মসূচি দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়।