কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন রাজধানীজুড়ে চলে ভয়াবহ তাণ্ডব-নাশকতা। ভাঙচুর এবং আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা। এরই মধ্যে তদন্তে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এতে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ এসব সহিংসতার নেপথ্যে থাকা কুশীলবদের অন্যতম ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন। নাশকতা চলাকালে যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তিনি। তবে গুলি খেয়ে পালিয়ে যান এ যুবদল নেতা। তাকে গ্রেপ্তার করতে হন্যে হয়ে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নয়নকে গ্রেপ্তার করতে পারলে এসব নাশকতার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন বিষয়ে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, শুধু সাম্প্রতিক নাশকতাই নয়, গত কয়েক বছরে রাজধানীতে সংঘটিত বিএনপি-জামায়াতের সব ধরনের নাশকতার মূল পরিকল্পনাকারী রবিউল ইসলাম নয়ন। অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে অর্থ বিনিয়োগকারী ও সমন্বয়কারীসহ মাঠ পর্যায়ে মিশন বাস্তবায়নকারী সবার সঙ্গেই রয়েছে তার যোগাযোগ। আগুন দেওয়া, ভাঙচুর চালানো, পুলিশের ওপর হামলা—এসব কাজের জন্য তিনি ‘ওস্তাদ’।
রবিউল ইসলাম নয়ন গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর কাকরাইলে ‘প্রেস’ লেখা ভেস্ট পরে বাসে আগুন দিয়ে আলোচনায় আসেন। ওই ছবি ভাইরাল হয়ে গেলে গোয়েন্দারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাকে শনাক্ত করেন। শুধু তাই নয়, সেদিনের সহিংসতার মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন তিনি। পরে বিভিন্ন সময় বাসে আগুন দেওয়াসহ রাজধানীতে যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তার সমন্বয় করেন এই নয়ন।
জানা যায়, ২৮ অক্টোবরের পর ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় বোমাবাজি, যানবাহনে আগুনসহ সব ধরনের নাশকতায় এ নয়নের সম্পৃক্ততা পান গোয়েন্দারা। সব সহিংসতা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের কাজ করেন রবিউল ইসলাম নয়ন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ককটেল, গান পাউডার, হাতবোমাসহ বিভিন্ন বিস্ফোরকদ্রব্য সংগ্রহ করে সেগুলো আবার নেতাকর্মীদের কাছে বণ্টনের দায়িত্ব ছিল তার। কোন এলাকায় কতগুলো ককটেল পৌঁছানো হবে, কারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাবে, এসব বিষয়ে নির্দেশনা দেন তিনি। গাজীপুরে রেললাইন কাটার পর একজন নিহতের ঘটনাতেও রবিউল ইসলাম নয়নের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন যুবদলের এ নেতার নেতৃত্বে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক বড় নাশকতার পরিকল্পনাও করা হয়েছিল। পরে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে তা সফল হয়নি। এবার কোটা আন্দোলনকে ঘিরেও ভয়াবহ নাশকতায়ও নেতৃত্ব দেন নয়ন। বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা এবং পুলিশ হত্যার নীলনকশাকারী তিনি। তবে এত কিছুর পরও গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তিনি রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, এবার কোটা আন্দোলন ঘিরে চলমান তাণ্ডবে বিএনপি নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নীরব, রফিকুল আলম মজনু, তরিকুল আলম তেনজিংসহ মাঠ পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়া অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে নয়নকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তিনি আন্দোলনে গিয়ে গুলি খেয়ে আহত হয়ে পালিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, কোটা আন্দোলন ঘিরে নাশকতা এবং পুলিশ হত্যার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদের অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপি নেতা তানভীর আহমেদ রবিন ও যুবদলের রবিউল ইসলাম নয়নসহ আরও কিছু নেতা পলাতক রয়েছে, যারা সহিংসতায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন টিম কাজ করছে।