তানজিম মাহমুদ, জবি
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৪, ০২:৩৯ এএম
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৪, ০৮:২১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

পুলিশি নির্যাতনের ভয়ংকর বর্ণনা দিলেন নূর নবী

নূর নবী। ছবি: সংগৃহীত
নূর নবী। ছবি: সংগৃহীত

‘আমাকে চিত করে শুইয়ে বলে, তোর এক হাত তো ছাত্রলীগ ভেঙেছে, আরেক হাত আমরা ভেঙে দেব। আমাকে নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত মারধর করে। রুটি যেভাবে বেলে, ঠিক সেভাবে আমার হাঁটু থেকে নাভি পর্যন্ত লাঠি দিয়ে চাপ দেয়। আমি কান্না করলেই বলত, তোকে মেরেই ফেলব। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাকে এভাবে মারত।’

গতকল শুক্রবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের বীভৎস নির্যাতনের বর্ণনা দেন জবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নূর নবী। তাকে গত ১৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে ডিবি আটক করে নিয়ে যায়।

নূর নবী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে তুলে নেওয়ার পর এডিসি বদরুল আমাকে ডেকে আলাদা করেন। ডিবির পাঁচটি গাড়ি এসেছিল। তারা শুধু আমাকে এখান থেকে উঠিয়ে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। গাড়িতে উঠিয়েই আমাকে মার শুরু করে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার গোলাম মোস্তফাসহ অন্যরা। যখন আমাকে ডিবি অফিসে নেওয়া হয়, তখন ভেবেছিলাম গাড়িতে যে টর্চার করা হয়েছে, এর চেয়ে বেশি টর্চার আর হতে পারে না। আমাকে হয়তো তারা ছেড়ে দেবে, না হয় গ্রেপ্তার দেখাবে। কিন্তু এর চেয়ে পাশবিক নির্যাতন যে তারা করতে পারে, তা আমার কল্পনায় ছিল না। ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আমাকে কালো কাপড়ে বেঁধে একটি চেয়ারে বসিয়ে শরীরের সব কাপড় খুলে ফেলে তারা।

নূর নবী বলেন, পুলিশ আমাকে মারছিল আর বারবার বলছিল তোর তথ্য আমরা অনেকদিন থেকে শুনেছি, ক্যাম্পাস থেকে কয়েকজন তোর কথা আগেই বলেছে। তুই জঙ্গি, তুই শিবির, তুই ছাত্রদল করিস। এসব বলতে বলতে কোমরের নিচের অংশে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছিল।

বিদ্যুৎ শকের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ আমাকে প্রস্রাব করতে বলে। প্রস্রাব করার সময় আমাকে বিদ্যুৎ শক দেয়। হাতে একটা ইনজেকশন দেয়। ওরা আমার বিশেষ জায়গায় জোরে জোরে আঘাত করে। বারবার মনে হচ্ছিল আমি মরে যাব।

একটা সময়ে বিকেলে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ এসে বলে, একে বাঁচিয়ে রাখছ কেন, ক্রসফায়ারে দেও। একপর্যায়ে আমার দুই হাঁটু হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ওরা ভেঙে ফেলে। আমি ভেবেই নিয়েছিলাম আমাকে মেরেই ফেলবে। কারাগারে আমি অনেক গার্ডকে কান্না করে বলেছি, আমাকে হাসপাতালে নেন। কিন্তু ওরা আমাকে হাসপাতালে নেয়নি। কারাগারে পানিতে মরিচ দিয়ে রাখা হতো যেন পানি খেতে না পারি, গোসল করতে না পারি।

নূর নবী বলেন, পুলিশ আমাকে বলে তোকে ক্রসফায়ার দেব, তুই রেডি হয়ে নে। আমরা ছয়জন ছিলাম মোট। রমনায় নিয়ে আমাদের চোখ খুলে দেওয়া হলো। আমার হাতে পেট্রোল বোমা ধরিয়ে দিল। ভিডিও করা শুরু করল। এভাবে তারা আমার বিরুদ্ধে মামলা সাজায়। এখন আমি বেঁচে ফিরেছি। স্বাধীন দেশে আবার ফিরতে পেরেছি। এটা আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা।

সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মাসুস রানা, সোহান, স্বর্ণা আক্তার রিয়া, মোস্তাফিজুর রহমান, ফয়সাল ছাড়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে নাইমা আক্তার রিতা, বিএম তানজীল, শাহিন আলম শান, স্বপনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাবির ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা আজ

‘খালেদা জিয়া বাংলাদেশের মানুষের আপনজন’

২০ বছরের ব্যবসা বাঁচাতে ছাড়লেন চেয়ারম্যান পদ

তাসনিম অনন্যার অনুসন্ধানে মহাবিশ্বের চাঞ্চল্যকর রহস্য উন্মোচন

২০২৬ বিশ্বকাপে কবে মুখোমুখি হতে পারে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল?

বিশ্বকাপের গ্রুপ অব ডেথে ফ্রান্স

নুরুদ্দিন অপুর হাত ধরে আ.লীগ নেতার বিএনপিতে যোগদান

২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠিত: দেখে নিন কোন গ্রুপে কোন দল

২০২৬ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ যারা

রাতে আবার হাসপাতালে গেলেন জুবাইদা রহমান

১০

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পরিধি বাড়ছে, তালিকায় ৩০টির বেশি দেশ

১১

খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি সম্পন্ন, বন্ধ হয়েছে রক্তক্ষরণ

১২

‘বাঁধের মাটি বড় বড় খণ্ড হয়ে ঝুপঝাপ শব্দে ভেঙে পড়ে’

১৩

রাজমিস্ত্রির বাড়ি থেকে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার

১৪

দেড় হাজার দৌড়বিদের অংশগ্রহণে হাফ ম্যারাথন

১৫

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ফ্রি যাত্রীসেবা

১৬

বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা, প্রতিবাদে বিক্ষোভ 

১৭

যুবদল নেতা সুমনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

১৮

দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, একজন গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০

১৯

গণতন্ত্র মঞ্চের নতুন সমন্বয়ক সাইফুল হক

২০
X