বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ। এ ধরনের গাড়ি আমদানিতে ৮৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হয়। এই শুল্ক ফাঁকি দিতে আমদানি থেকে শুরু করে রেজিস্ট্রেশন পর্যায়ে ধাপে ধাপে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক আমদানিকারক নাগোয়া করপোরেশন। উৎপাদনের বছর পরিবর্তন করেছে, মডেলও পরিবর্তন করেছে। উৎপাদনকারী দেশ ছাড়া আমদানি করার সুযোগ না থাকলেও তারা তৃতীয় দেশ থেকে আমদানি করেছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অনুসন্ধানে এসব তথ্য মিলেছে।
সূত্র জানায়, জাপানের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে সেভেন সিরিজের বিএমডব্লিউ আমদানি করেছে নাগোয়া করপোরেশন। তারা এর দাম দেখিয়েছে ২০ হাজার ডলার। এই দামের ভিত্তিতে ৪৮ হাজার ডলার শুল্ক ধরা হয়। কিন্তু প্রকৃত দাম এর চেয়ে অন্তত পাঁচগুণ বেশি।
প্রতিষ্ঠানটি বিল অব এন্ট্রিতে তাদের এই বিএমডব্লিউ গাড়িটি ৫ সিরিজের মডেল বলে উল্লেখ করেছে। প্রকৃতপক্ষে গাড়িটি ৭ সিরিজের। শুল্কায়ন কর্মকর্তাও আমদানিকারকের ঘোষণা যাচাই-বাছাই ছাড়া খালাসের অনুমতি দিয়েছেন।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মুসফিকুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘মিথ্যা ঘোষণায় বিএমডব্লিউ নিয়ে এসেছে নাগোয়া করপোরেশন। শুল্ক ফাঁকি ও রেজিস্ট্রেশনে জালিয়াতির কারণে আমরা গাড়িটি জব্দ করেছি। শুল্ক আদায় করতে কাস্টম হাউস আমদানিকারককে চিঠি দেবে। পরে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
সূত্র জানায়, বিএমডব্লিউর বিভিন্ন সিরিজের গাড়ি সাধারণত ভিআইএন (ভেহিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) ও গ্লাস গাইডের মাধ্যমে যাচাই করা হয়। শুল্ক কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই করে নাগোয়ার আমদানি করা বিএমডব্লিউ গাড়িটি ৭ সিরিজের বলে নিশ্চিত হয়েছেন। এ ছাড়া গাড়িটির উৎপাদন বছর পরিবর্তন করে দেখানো হয়েছে বলেও জানতে পেরেছেন কর্মকর্তারা। বিভিন্নভাবে প্রমাণিত হয়েছে গাড়িটি রিকন্ডিশন্ড। রিকন্ডিশন্ড গাড়ি বাংলাদেশে আমদানির শর্ত হলো, উৎপাদনকারী দেশ থেকে আনতে হবে। তৃতীয় কোনো দেশ থেকে আমদানি করা যাবে না। জার্মানির গাড়ি জাপান থেকে আনার সুযোগ না থাকলেও নাগোয়া জাপান থেকে আমদানি করেছে। একজন শুল্ক কর্মকর্তা জানান, ২০২০ সালে আমদানির সময় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ডলারের গাড়ির মূল্য নাগোয়া করপোরেশন মাত্র ২০ হাজার ডলার দেখিয়েছে। এসব অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা প্রস্তুতি নিচ্ছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ।
তবে নাগোয়া করপোরেশনের প্রধান ইমন এসব জালিয়াতির কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, নিয়ম মেনেই গাড়ি আমদানি করেছি। মিথ্যা ঘোষণা এবং রেজিস্ট্রেশনে মিথ্যা তথ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা তো গাড়ির মডেল ও উৎপাদন বছর যাচাই-বাছাই করতে পারি না। জাপানের সাপ্লায়ারের কাছ থেকে এই গাড়ি নিয়ে এসেছি। এ কারণে এসব বিষয় নিয়ে কোনো ধরনের চিন্তাও করতে হয়নি। এ ছাড়া গাড়ি নিয়ম অনুযায়ী এনেছি বলে কাস্টম কর্তৃপক্ষ খালাস করার সুযোগ দিয়েছে। সরকারের শুল্ক-কর ঠিকমতো পরিশোধ করেই বিএমডব্লিউ গাড়ি খালাস করেছেন বলে দাবি এই আমদানিকারকের।