‘এ কূল ভাঙে ও কূল গড়ে/এই তো নদীর খেলা’—জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার এ পঙক্তি যেন বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। বগুড়া সারিয়াকান্দির যমুনার নদীর বুকে ভেসে ওঠা এমন বালুচরে চীনাবাদাম চাষে লাভের স্বপ্ন বুনছেন কৃষক। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চরের বুক চিরে বেড়ে ওঠা চীনাবাদামের গাছগুলোতে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন তারা।
মুখরোচক বাদামভাজা, বেকারি শিল্পসহ নানা ধরনের খাবার তৈরিতে বাদামের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এরপরও করোনার কারণে গত দুই বছর ভালো লাভ পাননি সারিয়াকান্দির যমুনা পাড়ের আট ইউনিয়নের কৃষক। তবে এ বছর চীনাবাদামের ভালো দাম রয়েছে বলে খুশি ব্যবসায়ী-কৃষক উভয়ই।
সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে জমিতে চীনাবাদাম বপন করা হয়। সার, নিড়ানি এবং সেচেরও প্রয়োজন হয় না। এপ্রিল-মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয় ফসল সংগ্রহ। তবে এ বছর বন্যা না হওয়ায় আগামভাবে নভেম্বরের প্রথমদিকে জমিতে চীনাবাদাম চাষ করা হয়েছে। সেই বাদাম এখন সংগ্রহ শুরু করেছেন কৃষক।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য বলছে, উপজেলায় গত বছর সর্বমোট ৮৫০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছিল। চলতি বছর এ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮০০ হেক্টর। আর বপন করা হয়েছে ৯৬৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে প্রায় শতকরা ৯০ ভাগই চরাঞ্চল। হেক্টর প্রতি চীনাবাদামের ফলন দেড় মেট্রিক টন। সে হিসাবে বাদাম উৎপাদন হবে ১ হাজার ৪৪৭ টন বা ১৪
লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ কেজি। বর্তমানে প্রতি কেজি বাদামের বাজার মূল্য ৮০ থেকে ১০০ টাকা। সে হিসাবে ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ কেজি বাদামের বাজারমূল্য দাঁড়াচ্ছে ১৪ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের অন্তারপাড়ার বাদামচাষি শহিদুল ইসলাম জানান, কয়েক বছর হলো বাদামের চাষ করে ভালো লাভবান হয়েছি। করোনার জন্য বিগত বছরগুলো বাজারে বাদামের দাম কম পেয়েছি। এ বছর বাদামের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। বাজারে দামও ভালো শোনা যাচ্ছে।
উপজেলার কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের ডাকাতমারা চরের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, প্রতিবছর বাদাম চাষ করেন তিনি। এ বছর তিনি আগামভাবে তার ১৬ বিঘা জমিতে চীনাবাদাম চাষ করেছেন। বাদামের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। বাদামে কোনো খরচ নেই বললেই চলে।
এদিকে চীনাবাদাম মজুদ করে গত বছর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। সারিয়াকান্দি বাজারের ব্যবসায়ী মতি মিয়া জানান, করোনার কারণে বাদামে গত বছর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তবে এ বছর কাঁচা বাদামের বাজার দর খুবই ভালো। এখন বাজারে প্রতি মণ ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর কৃষক বেশি জমিতে চীনাবাদাম চাষ করেছেন। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। আশা করছি, প্রতি বিঘা জমিতে কৃষক ৮ থেকে ১০ মণ করে চীনাবাদাম পাবেন। বাজারে ভালো দাম থাকায় তারা লাভবান হবেন।
মন্তব্য করুন