তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, “বঙ্গবন্ধুর জীবন ও একটি জাতির জন্ম নিয়ে এক নিঃশ্বাসে দেখার মতো চলচ্চিত্র ‘মুজিব—একটি জাতির রূপকার’। অসাধারণ চলচ্চিত্রটি ইতিহাসের দলিল হয়ে থাকবে।” বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্রটির সেন্সর সনদ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ আয়োজন করা হয়।
যারা বঙ্গবন্ধুকে জানতে চায়, বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস জানতে চায়, এই সিনেমা তাদের অনেক কিছু দিতে পারবে উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘তিন ঘণ্টা সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর জীবন, বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম ও ১৯৭৫ সালের মর্মন্তুদ ঘটনাকে যেভাবে তুলে আনা হয়েছে, সেখানেই এ চলচ্চিত্রের পরিচালকের মুনশিয়ানা, অন্য পরিচালকের সঙ্গে পার্থক্য। থ্যাংকস টু শ্যাম বেনেগালজী।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার ফলেই এ চলচ্চিত্র নির্মাণের শুরু থেকে মুক্তি পর্যন্ত সঙ্গে থাকার সুযোগ হচ্ছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, অবর্ণনীয় ব্যস্ততার মধ্যেও এই চলচ্চিত্র নির্মাণে আন্তরিক সময়দানের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জানাই গভীর কৃতজ্ঞতা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার সিনেমাটি ইতোমধ্যে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। এক নিঃশ্বাসে দেখার মতো এমন সিনেমা নির্মাণের জন্য পরিচালক শ্যাম বেনেগাল ও শিল্পী, কলাকুশলী এবং নেপথ্য কারিগরদের আবারও অকুণ্ঠ ধন্যবাদ।
অনুষ্ঠানে তথ্য সচিব হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘দুই দেশের চলচ্চিত্র দলের সমন্বয়ে যে ঐতিহাসিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, তা পারস্পরিক সহযোগিতার অনন্য নজির।’ বঙ্গবন্ধু চরিত্রাভিনেতা আরিফিন শুভ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয়ের পর আর কোনো অভিনয় না-ও করি বা যদি পৃথিবী থেকে চলেও যেতে হয়, তাতেও কোনো আক্ষেপ নেই।’ খন্দকার মোশতাক চরিত্র রূপায়নকারী অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু বলেন, ‘এই খলচরিত্রে অভিনয়ের জন্য দর্শক যদি আমার দিকে জুতা ছুড়ে মারে, তবে সেটিই হবে আমার পদক।’ স্ক্রিপ্ট রাইটার ভারতের অতুল তেওয়ারি বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ যে তিনি তার পিতার জীবনের চলচ্চিত্র নির্মাণে আমাদের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রেখেছেন। আমরা ও শিল্পী-কুশলীরা এ নির্মাণকে সেরা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।’
পরে সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যান তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. হুমায়ুন কবীর এবং ভাইস চেয়ারম্যান মুহ. সাইফুল্লাহ সেন্সর সনদ চলচ্চিত্রটির বাংলাদেশ পক্ষের প্রযোজক এফডিসির এমডি নুজহাত ইয়াসমিন ও ভারতের পক্ষে আগত স্ক্রিপ্ট রাইটার অতুল তেওয়ারির হাতে তুলে দেন। গত ৩১ জুলাই এ সনদ ইস্যু করা হয়।
বাংলাদেশের ৬০ ভাগ ও ভারতের ৪০ ভাগ ব্যয়ে নির্মিত এই বায়োপিকের শুটিং ২০২১ সালের ২২ জানুয়ারি ভারতের মুম্বাই ফিল্ম সিটিতে শুরু হয়। ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে শেষ হয়। ২০২২ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে চলচ্চিত্রটির প্রথম পোস্টার, ৩ মে দ্বিতীয় পোস্টার এবং ১৯ মে ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটির ট্রেলার রিলিজ করা হয়।
প্রধান তথ্য কমিশনার ড. আবদুল মালেক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর, বায়োপিকের অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু চরিত্রাভিনেতা আরিফিন শুভ, বঙ্গমাতা চরিত্রাভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা এবং দিলারা জামান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, চঞ্চল চৌধুরী, খায়রুল আলম সবুজ, ফজলুর রহমান বাবু, শহীদুল আলম সাচ্চু, গাজী রাকায়েত, সংগীতা চৌধুরী, প্রার্থনা দীঘি, রিয়াজ আহমেদ, সাব্বির আহমেদ, জায়েদ খান, সায়েম সামাদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হিমাদ্রি বড়ুয়া, স্ক্রিপ্ট রাইটার অতুল তেওয়ারি, সহযোগী পরিচালক দয়াল নিহালানী, লাইন প্রডিউসার সতীশ শর্মা প্রমুখ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
‘মুজিব-একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রের শিল্পী, কলাকুশলী ছাড়াও আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্ত অভিনেত্রী ডলি জহুর, পরিচালক কাজী হায়াৎ, মুশফিকুর রহমান গুলজার, কামাল আহমেদ লিপু, প্রযোজক-পরিবেশক খোরশেদ আলম খসরু, রহমতুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক আবদুল লতিফ বাচ্চু, সম্পাদক আবু মুসা দেবু, চলচ্চিত্র প্রদর্শক উপদেষ্টা সুদীপ্ত দাস, প্রদর্শক আওলাদ হোসেন, আমির হামজা, চলচ্চিত্র সাংবাদিক নেতা রিমন মাহফুজ, নাট্য পরিচালক কামরুজ্জামান সাগরসহ সিনেমা ও শিল্পাঙ্গনের বিশিষ্টজন প্রাণবন্ত এ আয়োজনে অংশ নেন।
মন্তব্য করুন