অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনা পাশ কাটিয়ে নড়াইলের লোহাগড়ার ওপর দিয়ে চলে গেল স্বপ্নের ট্রেন। সেই বাহনে করে দ্রুততম সময়ে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যেতে প্রথম যাত্রায় অংশ নিতে পারার খুশিতে আত্মহারা নড়াইলবাসী।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টায় খুলনা রেলওয়ে স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনটি ছেড়ে এসে সকাল ৭টা ৩৬ মিনিটে নড়াইল রেলস্টেশনে থামে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো রেলপথ ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে এলাকাবাসী।
জানা গেছে, এই রুটে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ও রূপালী এক্সপ্রেস নামে একজোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করবে। এই প্রকল্পের ২৮ কিলোমিটার রেলপথ পড়েছে নড়াইলে। নড়াইল শহর ও লোহাগড়া উপজেলায় একটি করে রেলস্টেশনও নির্মাণ করা হয়েছে। ২০২২ সালের ২৫ জুন প্রমত্তা পদ্মার বুকে স্বপ্নের সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সেই ভোগান্তি অনেকাংশে কমে যায়। মধুমতী নদীর বুকে নির্মিত হয় দেশের প্রথম ৬ লেনবিশিষ্ট সেতু। দুই সেতু নির্মাণে পাল্টে যায় নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা।
লোহাগড়া সরকারি আদর্শ কলেজের ছাত্র ফরহাদ বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হতে ট্রেনে চড়ে লোহাগড়া থেকে ঢাকা যান। তিনি বলেন, এটা আমাদের স্বপ্নের মতো ছিল, অবশেষে তা পূরণ হয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিক মনির খান জানান, প্রথম ট্রেনের সাক্ষী হতে অনলাইনে টিকিট ক্রয় করেছিলাম, এখন স্বপ্নের ট্রেনে যাত্রা করার আলাদা একটা ঘোরের মধ্যে আছি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের সব কাজ শেষ হয়েছে।
এখন থেকে নড়াইলের মানুষ ট্রেনে মাত্র ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটে ঢাকা যেতে পারবে এবং লোহাগড়া থেকে ২ ঘণ্টায় যেতে পারবে। রেলের দেওয়া সময়সূচি অনুসারে, জাহানাবাদ এক্সপ্রেস খুলনা থেকে ছাড়বে সকাল ৬টায়। ট্রেনটির ঢাকায় পৌঁছানোর নির্ধারিত সময় সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে। ঢাকা থেকে আবার ট্রেনটি ছেড়ে যাবে রাত ৮টায়। খুলনায় পৌঁছানোর কথা ১১টা ৪০ মিনিটে। অন্যদিকে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছাড়বে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে। ট্রেনটির যশোরের বেনাপোল পৌঁছানোর কথা দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে। ফিরতি যাত্রায় যশোর থেকে ট্রেনটি ছাড়বে বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে। আর ঢাকায় পৌঁছানোর কথা সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে।
আনন্দের সঙ্গে আক্ষেপও রয়েছে এলাকাবাসীর। শিক্ষক হায়াতুজ্জামান জানান, আমরা প্রথমবারের মতো ট্রেনের সুবিধা পাচ্ছি এটা আনন্দের, তবে টিকিট বরাদ্দ অনেক কম, আমাদের জন্য টিকিট বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন রইল।
নড়াইল স্টেশন মাস্টার উজ্জ্বল কুমার বিশ্বাস জানান, দিনে দুবার ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বেনাপোল পথে চলাচল করবে ট্রেন দুটি। ট্রেন চলাচলের জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম ট্রেনে চলার সাক্ষী হতে এরই মধ্যে সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
কালবেলার বেনাপোল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু হয়ে বেনাপোল-ঢাকা নতুন রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় ওই এলাকার দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। এখন থেকে এ এলাকার মানুষ মাত্র পৌনে চার ঘণ্টায় ঢাকা-বেনাপোল যাতায়াত করতে পারবেন।
ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নতুন ট্রেন চালু হওয়ায় ফরিদপুরের ভাঙ্গাসহ একটি বড় এলাকার মানুষ এখন সহজেই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। এ কারণে তাদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। ভাঙ্গা থেকে মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেনে ঢাকায় পৌঁছানো যায়।
কালবেলার খুলনা ব্যুরো জানিয়েছে, খুলনায় অনেক আগে থেকে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলে ও পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-খুলনা যাতায়াতের ব্যবস্থা হওয়ায় এলাকাবাসী খুব খুশি। কারণ এখন থেকে মাত্র পৌনে ৪ ঘণ্টায় তারা ঢাকা-খুলনা যাতায়াত করতে পারবে। এর আগে বাসে বা যমুনা সেতু হয়ে যাতায়াতে অনেক ভোগান্তি হতো এবং সময় বেশি লাগত।
তবে যশোর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঢাকা-বেনাপোল রুটের জন্য চালু একমাত্র ট্রেন (রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস) নিয়ে যশোরবাসী খুশি না। তারা যশোর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাতায়াতের একাধিক ট্রেন চায়। এ কারণে তারা গতকাল রূপসী বাংলাকে কালো পতাকা দেখিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন।