রাশেদ রাব্বি
প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩২ এএম
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

গাড়িচালকদের দাপটে নাজেহাল কর্মকর্তারা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
গাড়িচালকদের দাপটে নাজেহাল কর্মকর্তারা
ছবি: সংগৃহিত

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় নানা তৎপরতা শুরু করেছেন গাড়িচালকরা। কর্মকর্তাদের জিম্মি করে টাকা দাবি, লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটছে। এরই মধ্যে অধিদপ্তরে কর্মরত গাড়িচালকরা একটি কমিটি গঠন করেছেন। তার আদলে বিভিন্ন শাখা কমিটিও গঠন শুরু হয়েছে। কমিটির সদস্যরা বদলি বাণিজ্য ও নানামুখী তদবিরে মেতে উঠেছেন। এই গ্রুপটি ইতোপূর্বে বর্তমান সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে অপদস্থ করেছে। এমনকি বিগত সময়ে অধিদপ্তরে কাজ করেছেন—এমন কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত ও জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এর আগে আব্দুল মালেক নামের এক গাড়িচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অঘোষিত মহাপরিচালকে পরিণত হন। মালেক বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে চারজন মহাপরিচালকের গাড়িচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের সময় তিনি সবচেয়ে ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন। ওই সময়ে অধিদপ্তরের গাড়িচালকদের দায়িত্ব বণ্টন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বদলি, পদায়ন সবই ছিল মালেকের নিয়ন্ত্রণে। এ ছাড়া অধিদপ্তরের একমাত্র ক্যান্টিনের ঠিকাদার ছিলেন মালেক। পাশাপাশি অধিদপ্তরের পেছনে আরও দুটি রেস্তোরাঁ পরিচালনা করতেন তিনি। মালেক এতটাই প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন যে, অধ্যাপক আজাদ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি (বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, শোক দিবস) পরিচালনার দায়িত্ব দিতেন মালেককে। এতে চিকিৎসক কর্মকর্তারা আপত্তি জানিয়েও ফল পাননি। পরে কভিডকালীন দুর্নীতির দায়ে অধ্যাপক আজাদকে মহাপরিচালকের পদ থেকে অপসারণ করা হলে মালেককেও গ্রেপ্তার করা হয়।

অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি আবার সেই সংস্কৃতি শুরু হয়েছে। গত ২২ নভেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক ক্যালন সমিতির নতুন কমিটি অনুমোদন হয়। এতে মো. শহীদ মোল্লা সভাপতি এবং মো. হানিফ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন। এই গ্রুপে আছেন পরিচালকের (প্রশাসন) গাড়িচালক মো. ইউসুফ। এই গ্রুপটি গত ১৯ আগস্ট ডিএনসিসি হাসপাতালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের সামনে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এমনকি অধিদপ্তরের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবীরসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করেন।

এরপর গত ১৮ ডিসেম্বর অধিদপ্তরের প্রাক্তন জনসংযোগ কর্মকর্তা আক্কাস আলী শেখকে জিম্মি ও লাঞ্ছিত করেন এই গাড়িচালকরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দাপ্তরিক কাজে আক্কাস আলী শেখ অধিদপ্তরে এলে পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবু হানিফের গাড়িচালক ইউসুফ তাকে দেখেই অশালীন ভাষায় গালাগাল শুরু করেন। এরপর কয়েকজন গাড়িচালক আক্কাস আলী শেখের পথ রোধ করে পার্কিং এরিয়ায় গাড়িচালকদের রুমে নিয়ে আটকে রেখে বিপুল অঙ্কের টাকা দাবি করেন। এ সময় তিনি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ইউসুফ তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। বাকিরা তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান। সাড়ে ৩ লাখ টাকা না দিলে ছাড়া হবে না বলেও হুমকি দেন। একপর্যায়ে অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের কক্ষে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে অবসরে যাওয়া উচ্চমান সহকারী মো. শাহাবুদ্দিন এবং বরখাস্তকৃত অফিস সহকারী মশিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাদের মধ্যস্ততায় পরিচালক প্রশাসনের একজন গাড়িচালককে আগামী ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ১ লাখ টাকা প্রদানের স্বীকারোক্তি আদায় করে আক্কাস আলীকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে ছাড়া হয়। এ ছাড়া অধিদপ্তরের স্টোর অফিসার মাহবুবকেও তিনি লাঞ্ছিত করেন।

অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার কর্মকর্তারা জানান, ইতোপূর্বে শেখ সেলিম স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তার গাড়ি চালাতেন একজন চালক। সে সময় থেকেই ওই চালক মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। একটি প্রকল্পে তার নিয়োগ দেখানো হলেও তিনি মূলত অন্য একজনের স্থলাভিষিক্ত। তবে বর্তমানে তিনি সংস্কারপন্থি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া চালক তৌহিদের বর্তমানে টাঙ্গাইলে পদায়িত থাকলেও তিনি নিয়মিত অধিদপ্তরে তদবির বাণিজ্য সিন্ডিকেটে কাজ করছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গাড়িচালক ইউসুফ বলেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে কর্মরত অবস্থায় ২০১৩ সালে তাকে বোমা হামলার মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। এ মামলায় তাকে আট বছর কারাভোগ করতে হয়েছে। জেল থেকে ফিরে তিনি বকেয়া বেতন-ভাতাদির জন্য আক্কাস সাহেবের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন এবং কিছু টাকা দেন। কিন্তু আক্কাস সাহেব কোনো সহযোগিতা করেননি। উল্টো রাষ্ট্রীয় সংস্থা দিয়ে তাকে হেনস্তা করান। তাই তিনি আক্কাস সাহেবের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। অন্যদিকে অধিদপ্তরের স্টোর অফিসার মাহবুব গত ১২ বছর তাকে কোনো পোশাক দেননি। তাই মাহবুব সাহেবের সঙ্গেও তিনি অসদাচরণ করেন। ড্রাইভার শহীদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ড্রাইভার শহীদ মূলত বিএনপিপন্থি। তবে নিরাপদে থাকতে এতদিন আওয়ামী লীগের সব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।

তবে ইউসুফের বক্তব্য অস্বীকার করেছেন আক্কাস আলী শেখ। তিনি বলেন, কারও কাছ থেকে তিনি টাকা নেননি। রাষ্ট্রীয় সংস্থায় অভিযোগের বিষয়টিও সত্য নয়। নিজ দায়িত্বের বাইরে অধিদপ্তরের কোনো বিষয়ে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন না।

এ প্রসঙ্গে জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবু হানিফকে রোব ও সোমবার কয়েকবার ফোন করলেও তিনি লাইন কেটে দেন। সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, ‘অধিদপ্তরে এ ধরনের ঘটনা সম্পর্কে আমাকে কেউ অবহিত করেনি। তবে আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘পরিবেশ সংরক্ষণ করেই মাছ উৎপাদন করতে হবে’

সমাজের বরণীয়দের সব সময় স্মরণে রাখতে হবে : অপর্ণা রায়

পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান বাংলাদেশের

রাহুল গান্ধীকে চুমু যুবকের, অতঃপর...

৩৮ বছর পুরোনো যে রেকর্ড ভাঙলেন অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার

জুলাই যোদ্ধা ফারুকের গাল থেকে গুলি অপসারণ

ক্যানসারের চতুর্থ পর্যায়ে অভিনেত্রী তন্নিষ্ঠা

পানি পানে এই ৪ ভুল করছেন? হতে পারে ভয়াবহ বিপদ

রাবিতে নিয়োগ বোর্ড বাতিলের দাবিতে উপাচার্যের বাস ভবনের সামনে বিক্ষোভ

ভিকারুননিসায় হিজাব পরায় ২২ শিক্ষার্থীকে বের করে দিলেন শিক্ষিকা

১০

দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ, নিহত দুই

১১

মানুষ যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করে, অথচ কুকুরদের খাওয়ালেই যত দোষ: শ্রীলেখা

১২

টানা ৬ ঘণ্টা ধরে জবি ভিসি ট্রেজারার প্রক্টরসহ কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ 

১৩

৫০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেবে পাকিস্তান

১৪

সাতক্ষীরায় প্রথমবারের মতো মেরুদণ্ডের জটিল অপারেশন সম্পন্ন

১৫

ফজলুর রহমানকে নিয়ে ছাত্রশিবিরের বিবৃতি, বিএনপির প্রতি আহ্বান

১৬

মিয়ানমারে ঐতিহাসিক রেলসেতু ভেঙে দিল বিদ্রোহীরা

১৭

রিল বানাতে গিয়ে স্রোতে ভেসে গেলেন ইউটিউবার

১৮

দেশজুড়ে টানা বৃষ্টি আর কদিন চলবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

১৯

নেপালকে হারিয়ে জয়ের পথে ফিরল বাংলাদেশের মেয়েরা

২০
X