নির্বাচিত হলেও মিথ্যা তথ্য দেওয়া প্রার্থী হবেন আজীবন অযোগ্য। এ ছাড়া একই ব্যক্তি একাধিক আসনে প্রার্থী হতে পারবেন না। পাশাপাশি তরুণ, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য শতকরা ১০ ভাগ মনোনয়নের সুযোগ থাকতে হবে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে এসব সুপরিশ করা হয়েছে। কমিশন গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে নিজেদের সুপারিশ সংবলিত এ প্রতিবেদন জমা দেয়। সেসব সুপারিশের সার সংক্ষেপ পর্যালোচনায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে সুপারিশের সার সংক্ষেপ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারে ১১টি কমিশন গঠন করে। এর মধ্যে নির্ধারিত সময়সীমা মেনে বুধবার চারটি কমিশন তাদের সুপারিশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করে। ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনও প্রতিবেদন জমা দেয়। তাদের সুপারিশে নির্বাচন কমিশনের জনবল নিয়োগের জন্য আলাদা নির্বাচন সার্ভিস গঠন, সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে এবং শপথ ভঙ্গ করলে তদন্ত সাপেক্ষে কমিশনারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহারের আইন বাতিল, কোনো নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনরায় সেই নির্বাচন করাসহ একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে।
প্রতিবেদনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশে প্রার্থীদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা সম্পর্কে ঋণ-বিল খেলাপিদের প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। বিরত রাখতে হবে আদালত থেকে ফেরারি আসামি হিসেবে ঘোষিত ব্যক্তিদেরও। বেসরকারি সংস্থার কার্যনির্বাহী পদে আসীন ব্যক্তিদের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ওই পদ থেকে তিন বছর আগে অবসর গ্রহণ সংক্রান্ত আরপিওর ধারাটি বাতিল করে তাদের নির্বাচনে সুযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে সুপারিশে।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৬(২) (ঘ)-এর অধীনে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে বিচারিক আদালতে দোষীসাব্যস্ত ব্যক্তিকে দোষীসাব্যস্ত হওয়ার শুরু থেকেই সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য ঘোষণার সুপারিশ করা হয়েছে ইসি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে। আইসিটি আইনে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে) দোষীসাব্যস্ত ব্যক্তিকে দোষীসাব্যস্ত হওয়ার শুরু থেকেই সংসদ নির্বাচনে অযোগ্য করার পরামর্শ দিয়েছে তারা। এ ছাড়া গুরুতর মানবাধিকার (বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অমানবিক নির্যাতন, সাংবাদিকদের/মানবাধিকারকর্মীর ওপর হামলা, ইত্যাদি) এবং গুরুতর দুর্নীতি, অর্থ পাচারের অভিযোগে গুম কমিশন বা দুর্নীতি দমন কমিশন বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযুক্ত হলে তাদের সংবিধানের ৬৬(২) (ছ) অনুচ্ছেদের অধীনে একটি বিশেষ আইন প্রণয়ন করে সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য করার সুপারিশ এসেছে।।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পদত্যাগ না করে সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য করা, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দেওয়ার বিধানের পরিবর্তে ৫০০ ভোটারের সম্মতির বিধান করা এবং এক্ষেত্রে একক কিংবা যৌথ হলফনামার মাধ্যমে ভোটারদের সম্মতি জ্ঞাপনের বিধান করা এবং হাইকোর্ট বিভাগে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের প্রেক্ষাপটে আপিল প্রক্রিয়ায় অনুচ্ছেদ ১২৫(গ) বহাল রাখার উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশও করেছে কমিশন।
জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের যোগ্যতা সম্পর্কে করা সুপারিশ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসি সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার কালবেলাকে বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনপ্রতিনিধি হওয়া জনগণের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। তারা নিজেদের স্বার্থে জনবিরোধী যে কোনো পদক্ষেপই নিতে পারে। সেজন্য যারা এরকম ভয়াবহ অপরাধ করে প্রার্থিতা হারাবে তাদের আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছি। আশা করি, সরকার এমন প্রস্তাব কার্যকর করবে। এ ছাড়া অনেকেই একাধিক আসনে নির্বাচন করে থাকেন। জনগণ তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলেও একপর্যায়ে তারা আসন ছেড়ে দিয়ে ওই এলাকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেন। সেজন্য একজন ব্যক্তিকে একাধিক আসনে নির্বাচনের সুযোগ না দেওয়ার কথা বলেছি।