সময়ের প্রবাহে অনেক কিছুই বিলীন হয়ে গেছে, কিন্তু ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নেত্রকোনার আটপাড়ার স্বরমুশিয়া খাঁ বাড়ি ৩ গম্বুজ জামে মসজিদ। ২২৯ বছর আগে নির্মিত এই মসজিদ শুধু ধর্মীয় উপাসনার স্থান নয়, বরং ইসলামী স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন।
নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার স্বরমুশিয়া ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে ১২১৭ হিজরিতে বাংলার বারো ভূঁইয়া সর্দারদের অন্যতম ঈসা খাঁর পুত্র মুসা খাঁ মসজিদটি নির্মাণ করেন। ৬-৮ ফুট পুরু দেয়ালবিশিষ্ট এই মসজিদ তখনকার সময়ের তুলনায় ব্যতিক্রমী ও সুদৃঢ় নির্মাণশৈলীর উদাহরণ। সাধারণত এমন মজবুত কাঠামো রাজপ্রাসাদ কিংবা দুর্গে দেখা যায়, যা এই মসজিদে এক রাজকীয় বৈশিষ্ট্য যোগ করেছে।
প্রথমদিকে মসজিদে এক কাতারে ১৮ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারতেন। প্রায় ৩০ বছর আগে বারান্দা সম্প্রসারণের ফলে এখন ৭০ জন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। আধুনিকতার ছোঁয়া দিতে মসজিদের ফ্লোর সংস্কার ও টাইলস সংযোজন করা হয়েছে, যা এর নান্দনিকতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। মসজিদটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো এর তিনটি গম্বুজ। মসজিদ কমিটির সভাপতি কাজী ফজলুর রহমান খান বলেন, ‘অনেকে মনে করেন, এই তিন গম্বুজ ইসলামের প্রথম তিন খলিফা হজরত আবু বকর (রা.), হজরত উমর (রা.) এবং হজরত ওসমান (রা.)-এর প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক। যদিও এ ব্যাপারে নিশ্চিত প্রমাণ নেই, তবে এটি স্থানীয়দের কাছে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।’ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে স্বরমুশিয়া খাঁ বাড়ি ৩ গম্বুজ জামে মসজিদ কেবল একটি উপাসনালয় নয়, বরং ইসলামী ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। মুসা খাঁর বংশধর মোতাহার হোসেন খান মোতালিব বলেন, এই প্রাচীন মসজিদ শুধু অতীতের স্মারক নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও ইতিহাসের এক মূল্যবান সম্পদ। স্থানীয়রা মসজিদের সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কাজ করে চলেছেন, যাতে এটি আরও বহু শতাব্দী ধরে ইসলামের আলো ছড়িয়ে যেতে পারে।
এই মসজিদ শুধু স্থাপত্যের নিদর্শন নয়, বরং এটি ধর্মীয় বিশ্বাস, ঐতিহ্য ও ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সবার মনে শ্রদ্ধা ও গর্বের জায়গা তৈরি করে রেখেছে।
মন্তব্য করুন