কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৩, ০২:৫০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কর কর্মকর্তাকে অপহরণ

পরিকল্পনাকারী সাবেক স্বামী এখনো অধরা

পরিকল্পনাকারী সাবেক স্বামী এখনো অধরা

রাজধানীর বেইলি রোড এলাকা থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) যুগ্ম কমিশনার মাসুমা খাতুনকে তার সাবেক স্বামী হারুন-অর রশিদের পরিকল্পনায় অপহরণ করে বরখাস্ত গাড়িচালক মাসুদ। তাকেসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব। তবে অপহরণে জড়িত সাবেক স্বামীকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি। র্যাব বলছে, এজাহারে সাবেক স্বামীর নাম নেই। তবে তদন্ত সংস্থাকে এ তথ্য জানানো হবে। তারা ব্যবস্থা নেবে।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এর আগে শুক্রবার রাতে মাসুদসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অপহরণের মামলাটি তদন্ত করছে রমনা থানা পুলিশ। পরিকল্পনাকারী সাবেক স্বামীকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না—এ বিষয়ে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রমনা থানার ওসি আবুল হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা বলতে পারব না। আসামি তো আমরা গ্রেপ্তার করিনি। আমরা এখনো আসামি পাইনি। আগে আসামি পাই, জিজ্ঞাসাবাদ করি, তারপর…। তদন্তাধীন বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব না।’

তবে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ভুক্তভোগীর সাবেক স্বামী গ্রেড-১-এর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি নানাভাবে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন। যে কারণে এখনই তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।

গত ১৭ আগস্ট রাত সোয়া ৮টার দিকে মাসুমা খাতুনকে রাজধানীর বেইলি রোড থেকে অপহরণ করা হয়। এর ১৮ ঘণ্টা পর ১৮ আগস্ট মাদারটেক থেকে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করেন। স্থানীয়রা অপহরণের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। তবে সে সময় মাসুদসহ আরও কয়েকজন পালিয়ে যায়।

শুক্রবার রাতে মাসুম ওরফে মাসুদ, তার দুই সহযোগী আব্দুল জলিল ওরফে পনু ও হাফিজ ওরফে শাহিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাদের বরাতে র্যাব জানায়, মাসুদ ১১ জুলাই ভিকটিমের গাড়িচালক হিসেবে চাকরি নেয়। এরপর ওই নারীর সঙ্গে তার বর্তমান স্বামীর মনোমালিন্য হয়। ৩১ জুলাই মাসুদকে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়। তবে সেখানে চাকরি সূত্রে মাসুদের সঙ্গে ওই নারীর সাবেক স্বামীর পরিচয় হয়। তাকে বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করত মাসুদ। চাকরি যাওয়ায় তার কথা অনুযায়ী মাসুদ চক্রের অন্য সদস্যদের নিয়ে মাসুমাকে অপহরণ করে।

গতকালের সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন, ভিকটিমকে উচিত শিক্ষা দেওয়া এবং আগের স্বামীর কথা অনুযায়ী একটি বাসায় তাকে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল মাসুদের। যে কাজের জন্য প্রাথমিকভাবে মাসুদকে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছিল মাসুমার সাবেক স্বামী। এই ৭০ হাজার টাকার পাশাপাশি কাজ শেষ করার পর মাসুদকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সহায়তা দেওয়ারও প্রলোভন দেখান তিনি।

র্যাবকে জানিয়েছে, দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়ে নারী কর কর্মকর্তাকে অপহরণের পরই বিষয়টি প্রথম স্বামী হারুনকে জানায় মাসুদ। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মাসুমাকে হাতিরঝিলের একটি বাসায় নেওয়ার কথা ছিল; কিন্তু ওই বাসায় রাতে ঢুকতে সমস্যা হওয়ায় অন্যত্র নিয়ে রাখার জন্য মাসুদকে নির্দেশ দেন হারুন। সে অনুযায়ী রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গাড়িটি ঘুরিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। রাত ১২টার দিকে কাঁচপুর এলাকায় পরিচিত একটি গ্যারেজে নিয়ে যায়। এ সময় ওই নারীকে নির্যাতন করা হয়, প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ভুক্তভোগীর কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তার কাছে থাকা নগদ দেড় লাখ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

রাতভর ওই গ্যারেজে রাখার পর ১৮ আগস্ট সকালে মাদারটেক এলাকায় গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করে মাসুদ ও তার সঙ্গীরা। সেখানে জুমার নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার নির্দেশনা ছিল। মাদারটেকে অবস্থান করাকালীন মাসুদ ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামীর সঙ্গে ফের যোগাযোগ করে। তিনি জুমা নামাজের পর হাতিরঝিলের সেই আগের বাসায় নেওয়ার নির্দেশ দেন। দুপুরে খাবার সময় হলে মাসুদ, রাজু ও সাব্বির খাবার আনতে যায় এবং পনু, সাইফুল ও শান্ত গাড়ি বাহিরে পাহারায় থাকে। এ সময় সুযোগ বুঝে ভুক্তভোগী বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় লোকজন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে সাইফুল, সাব্বির ও রাজুকে আটক করে। মাসুদ, পনু ও শান্ত পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে ভুক্তভোগীকে হেফাজতে নেয় এবং সাইফুল, সাব্বির ও রাজুকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে ভুক্তভোগীর ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।

নারী কর কর্মকর্তাকে অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারী সাবেক স্বামী হারুনের অবস্থান সম্পর্কে মঈন বলেন, তিনি মগবাজারের বাসাতেই অবস্থান করছেন বলে জেনেছি।

অপহরণের প্রথম স্বামীর সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়নি—এ প্রসঙ্গে র্যাবের মুখপাত্র বলেন, ভুক্তভোগী যে এজাহার করেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে যারা অপহরণের সঙ্গে সরাসরি জড়িত, তাদের আমরা দ্রুততম সময়ের ভেতরে আইনের আওতায় এনেছি। তাদের বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদে আরও অনেক কিছু বের হয়ে আসতে পারে। যেটার জন্য ন্যূনতম সময়ের প্রয়োজন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মোটরযানমুক্ত আধুনিক শহর, দেখেই চোখ জুড়ায় (ভিডিও)

জিলানীর শরীরে রয়ে যাওয়া ‘পিলেট’ অপসারণ করলেন বিএনপির স্বাস্থ্য সম্পাদক রফিক

গণপরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে সরকারকে সিদ্ধান্তে আসতে হবে : আখতার 

৫ কাজ করতে পারবেন না ডাকসুর প্রার্থীরা

ধেয়ে আসছে অতি ভারী বৃষ্টিবলয় ‘স্পিড’, কবে কোথায় প্রভাব ফেলবে

এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিল ভারত সরকার

ইমিগ্রেশনের সময় যে ৭ কথা বললেই মহাবিপদ

সাগর-রুনির সন্তান মেঘের হাতে পূর্বাচলের প্লটের দলিল হস্তান্তর

৮ মামলায় ইমরান খানের জামিন

মাদ্রাসাপ্রধানদের জন্য অধিদপ্তরের জরুরি নির্দেশনা, না মানলে ব্যবস্থা

১০

বরাদ্দ পেল বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

১১

স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর দাবি ব্যবসায়ীদের

১২

কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

১৩

যে বয়সের আগেই শিশুকে ৮ শিক্ষা দেওয়া জরুরি

১৪

দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা প্রধান শিক্ষকের, তদন্তে কমিটি

১৫

চট্টগ্রাম-৩ আসনে ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী মিল্টন ভুঁইয়া

১৬

বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা নিয়ে ‘সুখবর’ পাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা

১৭

ফেসবুক পেজ জনপ্রিয় করার ৮ কৌশল

১৮

বাড়ির আঙিনায় বিষধর পদ্মগোখরা, অতঃপর...

১৯

মোবাইল দিয়েই ডিএসএলআর ক্যামেরার মতো ছবি তোলার ৫ কৌশল

২০
X