

দোহা যেন শ্বাস ধরে তাকিয়ে ছিল শেষ বল পর্যন্ত। ২০ ওভারের লড়াই শেষে দু’দল সমান সমান, শেষ ওভারের শেষ বলে রান–সমতা, আর এরপর সুপার ওভারের স্মরণীয় রোমাঞ্চ—এশিয়া কাপ রাইজিং স্টার্স ফাইনালে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দিল পাকিস্তান শাহিন্স। মাত্র ৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ট্রফি উঠল পাকিস্তানের হাতে।
ওয়েস্ট এন্ড পার্ক ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রোববার রাতটা হতে পারত লাল-সবুজের। শেষ ওভারে ৭ রান দরকার ছিল, হাতে মাত্র এক উইকেট। আবদুল গাফফার সাকলাইন–রিপন মণ্ডলের ঝড়ো তিন ছক্কায় সম্ভব হয়েছিল অসম্ভবকে ছোঁয়া। কিন্তু শেষ বলে দুই রান চাই, পাওয়া গেল মাত্র এক। ম্যাচ গড়াল সুপার ওভারে, আর সেখানে আরেকবার ভাগ্যের কাছে হার মানল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ বেছে নেয় ব্যাটিং। কিন্তু আহমেদ সানিয়ালের প্রথম বলেই সাকলাইন ফিরলেন শূন্য রানে—অভিশপ্ত সূচনা। পরের বল ওয়াইড হয়ে চার গেলেও এরপর ড্যানিয়াল মাত্র ছয় রানই দেন। মাত্র ৬ রানে থামে বাংলাদেশের সুপার ওভার।
৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম বলে লেগ-বাই, এরপর সাদাকাতের সিঙ্গেল—চাপ একদমই নেই। সাদ মাসুদের তৃতীয় বলের চারেই ম্যাচ প্রায় শেষ, আর শেষ দিকে ইনসাইড–এজে আসে জয়সূচক রান।
এর আগে মূল ম্যাচেই বাংলােদশ নাটকীয় এক গল্প রচনা করেছিল। পাকিস্তানের ১২৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথমদিকে দুর্দান্ত গতি ছিল—হাবিবুর রহমান সোহণ (২৬ বলে ১৭) ও জিশান আলম (৬) দ্রুত রান তোলেন।
কিন্তু শুরু হওয়া পতন আর থামেনি। তৃতীয় ওভারেই আরাফাত মিনহাস জিশানকে ফেরান, পরের ওভারেই হাবিবুরকে ফেরান সাদ মাসুদ। একের পর এক উইকেট হারিয়ে ১০ ওভারে ৫৩–৭—ম্যাচ তখন পাকিস্তানের ঘরে।
সেখানে থেকে রাকিবুল হাসান–এসএম মেহরবের অসাধারণ ৩৭ রানের জুটি দলকে ৮৮ পর্যন্ত ওঠায়। ১৭তম ওভারে ড্যানিয়াল ভেঙে দেন প্রতিরোধ—মেহরব (১৯)–রাকিবুল (২৪) ফিরলে প্রয়োজন পড়ে নীচের সারির অলৌকিক কিছু।
আর তা প্রায় অসম্ভবকেও বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন সাকলাইন–রিপন। শাহিদ আজিজের ওভারে তিন ছক্কা—স্টেডিয়াম তখন দুলছিল। ১৯তম ওভারে দল পৌঁছায় ১১৮–৯। শেষ ওভারে ৭ রানে ফিনিশ করার সুযোগ ছিল, কিন্তু হয়নি—হয়েছে রুদ্ধশ্বাস টাই।
শাহিন্সের ইনিংসও শুরু হয়েছিল ধস দিয়ে—প্রথম বলেই ইয়াসির রানআউট, দ্বিতীয় ওভারে ফাইক আউট হয়ে ২–২। এরপর ঘোরি–সাদাকাতের ২৩ রানের জুটি ভাঙেন রাকিবুল, জিশান ফেরান সাদাকাতকে (২৩)।
আরাফাত (২৫)–ইরফান (৯) লড়াই করলেও সাকলাইন–রাকিবুল দুজনকেই ফেরান। সবচেয়ে বড় লড়াই দেন সাদ মাসুদ—২৬ বলে ৩৮, তিন চার–তিন ছয়ে দলকে ১০০ পের করান।
শেষাংশে রিপন মণ্ডলের দারুণ স্পেল (৩ উইকেট) ও সাকলাইনের ধারাবাহিক আঘাতে পাকিস্তান থামে ১২৫–৯।
এই দলটাই প্রমাণ করে দিল—সংকটে পড়েও শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার সাহসই তাদের শক্তি। সুপার ওভারে হারলেও ম্যাচজুড়ে যে মানসিকতা দেখিয়েছে, তা ভবিষ্যতের জন্য বড় আশার আলো।
দোহা রাতটা শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের হলেও, বাংলাদেশের ক্রিকেটের উঠতি তারকারা জানিয়ে দিল—মঞ্চটা খুব শিগগিরই তাদের হয়ে উঠবে।
মন্তব্য করুন