বোরোর ভরা মৌসুমেও চালের দাম লাগামহীন। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ খাদ্যপণ্যের দাম মানভেদে কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। এতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের নাজেহাল অবস্থা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করপোরেট ও মিলাররা সিন্ডিকেট করে ধান মজুত রেখে দাম বাড়াচ্ছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু মুদি দোকানের চাল বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫০ কেজির মিনিকেটের প্রতি বস্তা চালে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। যে কারণে সরকারের হিসাবেই এখন প্রতি কেজি সরু বা চিকন চাল কিনতে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা এবং মাঝারি মানের চিকন চাল কিনতে সর্বোচ্চ ৭২ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে ভোক্তাকে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে এই বোরো মৌসুম, যেখানে দুই কোটি টনের বেশি চালের জোগান আসে। দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে বিভিন্ন ধাপের ধান ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা যেভাবে মিলেমিশে দাম বাড়ায়—এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বরং প্রতি বছর যেখানে মৌসুমের ধান ওঠার কয়েক মাস পর ধীরে ধীরে চালের দাম বাড়ে, সেখানে এবার নতুন ধানের ব্যাপক সরবরাহের মধ্যেই দাম বাড়তে শুরু করেছে।
এদিকে মিল মালিকরা বরাবরের মতোই ধানের দামবৃদ্ধিকে ‘অজুহাত’ হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন। যদিও ফড়িয়া, পাইকার, মজুতদারদের পাশাপাশি সারা দেশে বড় বড় মিল মালিকও ধানের একটা বড় অংশ মজুত করে চালের দাম বাড়িয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বোরো মৌসুমের মাঝারি মানের চিকন চালের (ব্রি ধান ২৮ ও ২৯) যৌক্তিক পাইকারি মূল্য ৫১ টাকা এবং ভালো মানের চিকন চালের যৌক্তিক পাইকারি মূল্য ৬০ টাকার বেশি হওয়ার সুযোগ নেই। অথচ খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতার হাত ঘুরে চিকন চাল কোনো ক্ষেত্রে ২৫ টাকা এবং মাঝারি মানের চিকন চাল ১৭ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ঠিক এ সময়ে সবচেয়ে ভালো মানের চিকন চালের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৭৮ টাকা, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৭ টাকা। মাঝারি মানের চিকন চালও একই সময়ের ব্যবধানে ৭ টাকা এবং মোটা চালের কেজি ৪ টাকা বেড়েছে। চালের দাম বৃদ্ধির একই চিত্র এখন ঢাকার বাইরেও।
সূত্রাপুর বাজারে চাল কিনতে আসা জাহিদুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘এ মৌসুমে সাধারণত চালের দাম বাড়ে না। এবারে শুরুতেই চালের দাম যেভাবে বাড়ল, সারা বছর এটা নিয়ে আমার মতো নিম্ন আয়ের মানুষকে চাপে থাকতে হবে।’
আমিনুল ইসলাম ইমন নামে একজন ক্রেতা বলেন, এ সময়ে চালের মূল্যবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা নেই। চালের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ খুঁজতে ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাজারে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
কারওয়ান বাজারের বিসমিল্লাহ রাইস এজেন্সির খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতা শফিউল আলম বলেন, ‘মিলগেটে চালের দাম বাড়লে আমাদের কিছু করার থাকে না। আমাদেরও বাড়াতে হয়। মৌসুমে প্রতি বছর যখন চালের দাম কম থাকে, তখন বিক্রিও বেশি হয়। এবারে দাম বৃদ্ধির কারণে বিক্রিও কমে গেছে।’
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, প্রতি বছর ধাপে ধাপে ১ থেকে ২ টাকা করে চালের দাম বাড়লেও সেটা হতো নতুন ধান আসার কয়েক মাস পর। এবার ভরা মৌসুমেই দাম বাড়তে শুরু করেছে। ঠিক এ সময়টায় কোনো বছর দাম বাড়ে না। ব্যবসায়ীরা শ্রমিক খরচসহ নানা অজুহাতে ধানের দাম বাড়াচ্ছেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও ব্যবসায়ীদের মানসিকতা বদলায়নি। তারা খোলস পরিবর্তন করেছেন মাত্র। বাজার সিন্ডিকেট একই রয়ে গেছে।
মন্তব্য করুন