

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে প্রকাশ্যে গুলি করা হত্যা মামলায় সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিমকে তৃতীয় দফায় তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া হাদি হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রসহ নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার ফয়সালেরও তিন দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) তদন্ত কর্মকর্তার পৃথক দুই আবেদনের শুনানি নিয়ে ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম রিমান্ডের আদেশ দেন।
এর আগে, গত ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের দুজনকে আটকের কথা জানায় বিজিবি। জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৮ ডিসেম্বর তাদের আদালতে হাজির করে সাত দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড দেন। এর আগে ২১ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। ২৬ ডিসেম্বর দুই দফা রিমান্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ১৬ ডিসেম্বর র্যাব-১১ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নরসিংদী জেলার সদর থানাধীন তরুয়া এলাকার মোল্লার বাড়ির সামনে তরুয়ার বিলে অভিযান চালিয়ে ফয়সালকে আটক করে। অভিযানের সময় বিলের পানিতে ফেলে দেওয়া হাদি হত্যায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
মঙ্গলবার ফয়সালকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের মতিঝিল আঞ্চলিক টিমের পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ।
আবেদনে বলা হয়, এটি একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা। মামলার এজাহারনামীয় ও পলাতক আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়ার তথ্য অনুযায়ী আসামি ফয়সালের দেখানো মতে নরসিংদী সদরের তরোয়া বিল থেকে গত ১৬ ডিসেম্বর রাত ১১টার দিকে পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করে। নরসিংদী সদর মডেল থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ধারণা করা হচ্ছে ফয়সালের দেখানো মতে উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গুলি পল্টনে চাঞ্চল্যকর ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়েছে।
অস্ত্রের উৎস ও সরবরাহকারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ, হত্যার মোটিভ উদ্ধার, ইন্ধনদাতাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
এদিকে সীমান্তে পারাপারকারী চক্রের হোতা জনৈক ফিলিপ নামক ব্যক্তির অবস্থান শনাক্ত, গ্রেপ্তার, ফিলিপ ব্যতীত আর কারো সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা, ফিলিপের সাথে কিলিং মিশনের কে বা কারা যোগাযোগ করেছে তা জানার জন্য, কিলিং মিশনের ইন্ধনদাতা এবং অর্থদাতাদের শনাক্ত করার জন্য সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিমকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। তবে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। পরে আদালত থেকে তাদের তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ আসে।
গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টা মামলাটি দায়ের করেন। হাদির মৃত্যুর পর মামলাটিতে ৩০২ ধারা যুক্ত হয়েছে। মামলার পর ১২ আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তারা হলেন- ফয়সালের বাবা মো. হুমায়ুন কবির ও মা মোসা. হাসি বেগম, ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা ও শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু, রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ী মুফতি মো. নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, ফয়সালের সহযোগী মো. কবির, ভারতে পালাতে সহযোগিতাকারী সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম, আমিনুল ইসলাম রাজু ও ফয়সাল।
এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর শরিফ ওসমান হাদিকে মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা গুলি করে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। তিন দিন পর, ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মন্তব্য করুন