আমজাদ হোসেন শিমুল, রাজশাহী
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৫, ০৮:২১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঋণের ফাঁদে ফেরারি জীবন

রাজশাহীতে ক্ষুদ্রঋণের বড় মাশুল
ঋণের ফাঁদে ফেরারি জীবন

বরেন্দ্র অঞ্চলখ্যাত রাজশাহীর তানোরের পাচন্দর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত জনপদ চিমনা গ্রামের আব্দুল হাই লাভলু। গত দেড় বছরে বেশ কয়েকটি এনজিও (বেসরকারি সংস্থা) থেকে স্ত্রী, মা ও বোনের নামে নেন সাড়ে ৫ লাখ টাকার ঋণ, যা দিয়ে অন্য ফসলের চেয়ে বেশি দামের আশায় ৩০ বিঘা জমিতে করেন আলুর আবাদ; কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি, উৎপাদন খরচের চেয়ে আলুর দাম পান অর্ধেকেরও কম। ফলে দফায় দফায় সময় নিয়েও এনজিওগুলোর ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। অন্যদিকে আশা, ব্র্যাক, আইডিএফ, গ্রামীণ উন্নয়ন কেন্দ্র, কারিতাস, জাগরণীসহ ঋণ দেওয়া আরও কয়েকটি এনজিওর মাঠকর্মীরা টাকা আদায়ে দিন নেই, রাত নেই হাজির হচ্ছিলেন বাড়িতে। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে দুই মাস আগে দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালান লাভলু। এখন সেই ঋণের বোঝা চেপেছে তার বিধবা মা নাসরিন বানুর কাঁধে। প্রতিদিনই এনজিও থেকে লোকজন এসে লাভলুকে না পেয়ে ঋণ পরিশোধে চাপ দিচ্ছে তার মাকে।

জানতে চাইলে বিধবা নাসরিন বানু কালবেলাকে বলেন, ‘ছেলে পালিয়েছে। এখন সেই ঋণের চাপ আমার ওপর পড়েছে। প্রতিদিন লোকজন এসে টাকা চায়। যদিও কোনো কোনো এনজিওর ৫০ শতাংশ ঋণ পরিশোধও হয়েছে; কিন্তু তারপরও তারা সুদ আরও বাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। যা দেখছি, মরণ ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

শুধু লাভলুই নন; একইভাবে উপজেলার তালোন্দ ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম মোংলা, শহিদুল ইসলাম, লুৎফর রহমান মরু, এনামুলসহ অনেকেই ঋণের বোঝা বহন করতে না পেরে পালিয়ে ঢাকায় চলে গেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই দুটি ইউনিয়ন ছাড়াও উপজেলার অন্য ইউনিয়নগুলোর গ্রামের চিত্র প্রায় একই রকম। তানোরের ৮৫-৯০ শতাংশ মানুষই চাষাবাদসহ বিভিন্ন কারণে ঋণ নিয়ে এখন অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন।

জেলার অন্যান্য উপজেলার চিত্রও ভিন্নকিছু নয়। সবমিলিয়ে রাজশাহীতে এনজিও এবং সুদের কারবারিদের থেকে ঋণ নেওয়ার যেন হিড়িক পড়েছে। ঋণের বৃত্তে আটকা পড়েছেন জেলার নিম্ন আয়ের হাজার হাজার মানুষ। উচ্চসুদে নেওয়া ঋণের অর্থ উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের কথা থাকলেও তা না করে সাংসারিক প্রয়োজনে ব্যয় করছেন। ফলে এখন সেই ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে না পেরে পড়ছেন বেকায়দায়। এনজিওগুলোর মাঠকর্মীরাও প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া তাদের টার্গেট পূরণে যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ দিচ্ছে আগ্রাসীভাবে। অন্যদিকে ঋণ পরিশোধে এনজিও এবং সুদ কারবারিদের অব্যাহত চাপের মুখে ঋণগ্রস্তরা কোনো দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে তাদের অনেকেই এখন এলাকাছাড়া। এমনকি অভাবের তাড়নায় কেউ কেউ হতাশ হয়ে বেছে নিচ্ছে আত্মহননের পথ। চক্রবৃদ্ধির ঋণের দুঃসহ এক দুষ্টচক্রে আটকা পড়ে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। চলতি মাসে শুধু রাজশাহী অঞ্চলেই মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে ঋণের চাপে অন্তত ১১ জনের আত্মহত্যার খবর প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে। আত্মহননের পথ বেছে নেওয়ার আগে অনেকেই জানিয়ে গেছেন, ঋণের বোঝা বইতে না পেরে, অপমান আর অনাহারের কষ্ট সইতে না পেরে, পৃথিবীকে বিদায় বলেছেন তারা। আবার কেউবা আত্মহত্যা মহাপাপ ভেবে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন অজানার উদ্দেশ্যে।

গত ১৫ আগস্ট রাতে জেলার পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রামের মিনারুল ইসলাম (৩৫) ঘরে বসে লেখেন জীবনের শেষ চিঠি। যাতে উল্লেখ করেন ঋণের চাপ আর পরিবারের অভাবের কথা। তারপর স্ত্রী মনিরা, ছেলে মাহিম ও দেড় বছরের ছোট্ট কন্যাসন্তান মিথিলাকে হত্যা করে নিজেও গলায় ফাঁস দেন। যে ঘটনা নাড়িয়ে দেয় পুরো দেশকে। প্রতিবেশীরা জানান, মিনারুল বিভিন্ন এনজিও থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কাজ না থাকায় শোধ করতে পারছিলেন না। নিয়মিত চাপ ছিল কিস্তি পরিশোধের। মিনারুলের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ১৮ আগস্ট সকালে মোহনপুর উপজেলার খাড়ইল গ্রামে পাওয়া যায় কৃষক আকবর শাহের ঝুলন্ত লাশ। তার বাড়িতে মিলেছে ১১টি এনজিওর পাস বই। প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হতো প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। শোধ করতে না পেরে মানসিক চাপে নিজের পানবরজে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। এর আগে গত ১৪ আগস্ট, একই উপজেলার ফজলুর রহমান নামের এক রিকশাচালককে সুদের কারবারিদের হাতে নির্যাতনের পর ঘাস মারা বিষ খাইয়ে ফেলে রাখা হয়। পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। একইভাবে ঋণের বোঝা টানতে না পেরে আত্মহুতি দেন অটোরিকশাচালক শামসুদ্দিন, কৃষক রেন্টু পাইক, নাটোরের রউফুল ইসলাম দম্পতি এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের যুবক নূর মোহাম্মদ।

ঋণের কারণে ভাঙন সমাজে: শুধু আত্মহত্যাই নয়, ঋণের চাপে অনেক পরিবার রাতারাতি বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গেছে। জানা গেছে, রাজশাহীর পুঠিয়ার নামাজগ্রাম এলাকার গাইন কালাম ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে বছর দুয়েক আগে ভিটেমাটি বিক্রি করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। আজও তার খোঁজ মেলেনি বলে জানিয়েছেন এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা।

জেলার বাগমারা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের লাউপাড়া গ্রামের রেজাউল করিম ওসেড নামে একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এ ছাড়া গ্রামের একটি সমিতি থেকেও তুলেছিলেন ২০ হাজার টাকার ঋণ। অভাবের তাড়নায় সেই ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে মাস দুয়েক আগে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পালিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোনো একটি জায়গায় আশ্রয় নিয়ে চাতালে কাজ করছেন। এই গ্রামের শরিফুল ইসলাম; তিনিও ওসেড, আশাসহ বেশ কয়েকটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হতো প্রায় ৪ হাজার টাকা; কিন্তু নিয়মিত কিস্তি দিতে না পেরে এনজিওকর্মীদের চাপে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় পালিয়েছেন। একই দশা ওই গ্রামের বাছের আলী শেখেরও। বছর খানেক আগে তিনি গ্রামের একটি সমিতি থেকে টাকা তুলে পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়েছেন। এভাবেই বাগমারা উপজেলার অর্ধশতাধিক মানুষ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে লাপাত্তা হয়েছেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, জেলার চারঘাট উপজেলার মুংলি ও কালুহাটি গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবার ঋণের চাপে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। পার্শ্ববর্তী বাঘা উপজেলার কেশবপুর গ্রামের ইউনুস আলী সুদকারবারীদের কাছে থেকে টাকা নিয়েছিলেন; কিন্তু তা শোধ করতে না পেরে কয়েক বছর থেকে বাড়িছাড়া। একইভাবে এই উপজেলার পীরগাছা, মাঝপাড়া, দিঘা ও বাউসাসহ কয়েকটি গ্রামের অন্তত ২০ জন ঋণের চাপে পরিবারের লোকজন নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। একই চিত্র রাজশাহীর বাকি কটি উপজেলারও।

কেন এই ঋণের ভয়াবহতা: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্নআয়ের মানুষদের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে। তারা যে টাকা আয় করছেন তাতে সংসার চলছে না। ফলে অন্য মাধ্যমে বাড়তি আয়ের আশায় বিভিন্ন এনজিও ও সুদ কারবারিদের থেকে ঋণ নিচ্ছেন। আবার অনেকেই এনজিওর মাঠকর্মীদের ফাঁদে পড়ে কোনো কিছু না বুঝেই ঋণ নিচ্ছেন। কেউ বা মাদক কিংবা নেশার টাকা জোগাতেও এনজিও ও সুদের কারবারিদের থেকে নিচ্ছেন ঋণ।

পবা উপজেলার দারুশা এলাকার আব্দুল হাই ব্যক্তি বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তানসহ ৬ সদস্যের পরিবার আমার। চালাই রিকশা; কিন্তু এই টাকা দিয়ে সংসার চলে না। বাধ্য হয়ে এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি গরু কিনেছিলাম; কিন্তু সেই গরু লালন-পালন করতে গিয়ে ধরা খেয়েছি। গোখাদ্যের দামও অনেক। আবার সপ্তাহে সপ্তাহে কিস্তি দিতে হচ্ছে। ফলে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাব, গরুকে খাওয়াব নাকি ঋণ পরিশোধ করব? এখন জীবন বাঁচানোই দায় হয়ে পড়েছে।’

তানোরের আলু ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এ বছর ৬০ বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছিলাম। আলুতে উৎপাদন খরচ হয়েছে কোটি টাকারও বেশি। সে হিসাবে প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কমপক্ষে ২৫ টাকা খরচ হয়েছে; কিন্তু এই আলু বিক্রির জন্য ১৩ টাকা কেজি দরে হিমাগারে রাখা হয়েছে। হিমাগারের খচর প্রতি কেজি ৫ টাকা। সব বাদ দিয়ে প্রতি কেজি আলুর কেজি দাঁড়াচ্ছে মাত্র ৬ টাকা। এভাবেই আমাকে এবার প্রায় ৯০ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। আবার ব্যাংক ঋণ তো আছেই।’

মানবাধিকার সংগঠন বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার পরিচালক ফয়জুল্লাহ চৌধুরী তৃষমূলে তার কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, ‘এ অঞ্চলে যারা ঋণ নেন, তাদের বেশিরভাগই কৃষির জন্য নেন; কিন্তু উৎপাদন শুরু হওয়ার আগেই সাপ্তাহিক কিস্তি দিতে হয়। ফলে প্রকৃত সুদের হার দাঁড়ায় ৩০ শতাংশেরও বেশি। ঋণ শোধে ব্যর্থ হলেই শুরু হয় মানসিক নিপীড়ন। একসময় অনেকেই আত্মহননের পথ বেছে নেন। আবার কেউ বা অজানার পথে পা বাড়ান।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ খান বলেন, ‘এনজিও কর্মীদের ওপর থাকে ঋণ বিতরণের চাপ। চাকরি টিকিয়ে রাখতে তারা যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ দেন। অন্যদিকে ঋণগ্রহীতারা টাকার সঠিক ব্যবহার করতে পারেন না। ফলে দুষ্টচক্রে পড়ে নিঃস্ব হন তারা।’

আবার ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম চালাতে সরকারের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির অনুমতি লাগলেও বাস্তবে অনেক প্রতিষ্ঠান সেই বাধ্যবাধকতা মানছে না। জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনিরা খাতুন বলেন, ‘রাজশাহীতে ১ হাজারেরও বেশি সংস্থা নিবন্ধিত, তবে এদের মধ্যে কোনগুলো ক্ষুদ্রঋণ চালায়, সে তথ্য আমাদের নেই।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি ও সমাজ চিন্তাবিদ আহমেদ সফিউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের সমাজে এক চরম অর্থনৈতিক বৈষম্য চলার কারণেই এই আত্মহত্যার ঘটনা মহামারি আকার ধারণ করেছে। আত্মহত্যার অনেক কারণ থাকলেও বর্তমানে ঋণের চাপ অন্যতম। অথচ এটা নিয়ে রাষ্ট্র, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাসহ কারোই কোনো মাথাব্যথা নেই। এনজিওর ঋণের কিছু ভালো দিক থাকলেও এর অন্ধকার দিকও রয়েছে। কেননা, এটার কারণে অনেক মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে ফেলছে।’

ঋণের চাপে আত্মহত্যার বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহা. এনামুল হক বলেন, ‘দেশে দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। বিশেষ করে নির্বাচিত সরকার না থাকার কারণে গত এক বছরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পরিবারের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে পারছে না। আবার, একটা শ্রেণি তাদের আখের গোছাচ্ছে; কিন্তু সাধারণ মানুষ অভাবের তাড়নায় ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কঠিন শর্ত ও পারসেন্টেন্স দেওয়ার ভয়ে ব্যাংকের পরিবর্তে উচ্চ সুদেও এনজিওর দারস্ত হচ্ছে তারা। এতে ঋণ শোধ করতে না পেরে বিপথগামী হচ্ছেন তারা।’

এনজিও থেকে ঋণ নেওয়ার যে প্রবণতা তা দীর্ঘদিনের বলে উল্লেখ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এন কে নোমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ ঋণ ভোগের জন্য নিয়ে থাকে। ফলে এখান থেকে রিটার্ন আসে না। আবার এই সুদভিত্তিক ঋণের ফলে এক সময় তা অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে। যখন সময় মতো কিস্তি দিতে না পারে তখন সেই ভোক্তা সামাজিক, মানসিকভাবে নিগৃহীত হয়। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আরেক জায়গা থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। ফলে এই ঋণ এবং সুদ চক্রবৃদ্ধিহারে তাকে ঘিরে ধরে। আমাদের দেশে যে সমস্ত এনজিও বা সংস্থার যে ঋণ ব্যবস্থা এটা এক ধরনের শোষণের জায়গা।’

তিনি আরও বলেন, ‘সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা বলে অনেকে ব্যক্তি পর্যায়েও ঋণ বা মহাজনি কারবার চালায়। এ বিষয়গুলো থেকে বেরিয়ে আসতে গোটা ব্যবস্থার সংস্কার দরকার; কিন্তু বাংলাদেশ এখন যে অবস্থায় আছে, সেখান থেকে ভোক্তা পর্যায়ে এই ব্যবস্থাগুলো সংস্কার করা বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ফলে এই যে আত্মহত্যা বা এ ধরনের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি পর্যায়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। সুদভিত্তিক ঋণ ব্যবস্থার বিকল্প খুঁজতে হবে।’

ঋণ দেওয়া ও উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে টিএমএসএস, খড়খড়ি শাখার ব্যবস্থাপক মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থার উন্নয়নের জন্য আমরা সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে থাকি। সেক্ষেত্রে ঋণ নেওয়ার কারণ জেনে কৃষিকাজ বা গবাদিপশু কেনার জন্য টাকা দেওয়া হয়। আমাদের কিস্তি সাপ্তাহিক ও মাসিক হওয়ায় তেমন চাপ কেউ অনুভব করেন না। ফলে অধিকাংশই সঠিকভাবেই তাদের কিস্তি পরিশোধ করেন; কিন্তু অন্য প্রতিষ্ঠানের মেয়াদি ঋণ যদি কেউ নিয়ে থাকেন, তাহলে হঠাৎ করে অনেক টাকার চাপ পড়ে। এতে অনেকে হতাশার মধ্যে পড়তে পারেন।’

সার্বিক বিষয়ে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াকুব হোসেন বলেন, ‘যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ দেওয়া উচিত নয়। টাকা যেন সঠিক খাতে ব্যবহৃত হয়, সে বিষয়েও এনজিওগুলোকে নজর দিতে হবে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কারাগারে সন্তান জন্ম দিলেন হত্যা মামলার আসামি

সিলেটের সাদাপাথর লুটের ঘটনায় সিআইডির অনুসন্ধান শুরু

হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন ৬ সেপ্টেম্বর

ডাকসুর ভিপি প্রার্থী জালালের বিরুদ্ধে ছুরিকাঘাতের অভিযোগ

ডাকসু নির্বাচন / ছাত্রলীগ সম্পৃক্ততার দায়ে বাদ জুলিয়াস সিজার

ধর্ষণসহ হত্যায় ফুফাতো ভাইয়ের যাবজ্জীবন

কাজী নজরুলের কবিতা দেশের মুক্তিকামী মানুষকে সাহস যুগিয়েছে : তারেক রহমান

‘রোহিতকে সরানোর জন্যই ব্রঙ্কো টেস্ট এনেছে বিসিসিআই’

অভিনেত্রী হিমুর আত্মহত্যা, প্রেমিক রাফির বিচার শুরু

ভারতে প্রয়াত ক্রিকেটারদের স্ত্রীরা পাবে অনুদান

১০

রাজধানীতে একক ব্যবস্থায় বাস চলবে : প্রেস উইং

১১

ভিনিকে বিক্রি করে দিতে বললেন রিয়াল কিংবদন্তি

১২

নতুন বিচারপতিদের মধ্যে সংখ্যালঘু নেই, ঐক্য পরিষদের ক্ষোভ

১৩

বিসিবির হাতে বিপিএলের স্পট ফিক্সিং তদন্ত প্রতিবেদন

১৪

ফেসবুকের বিরুদ্ধে জিডি করেছেন মাওলানা মামুনুল হক

১৫

চুল পড়া রোধ করবে যে জিনিস

১৬

ডাকসু নির্বাচনে সাত সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন

১৭

সাদাপাথরকাণ্ডে এবার পুলিশে বড় রদবদল

১৮

৪৫ বছর ধরে ঝুপড়ি ঘরে থাকা সেই দম্পতির পাশে ইউএনও

১৯

শুনানিতে বিএনপি-এনসিপির মারামারির ঘটনায় ইসির জিডি

২০
X