

প্রকৃত আসামি বাইরে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আর তার হয়ে সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে জেল খাটছেন আরেকজন। গাজীপুর জেলা কারাগারের এমনই এক জালিয়াতির ঘটনা জানাজানির পর বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কারাগারটিতে মাত্র ১৫ টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি ছাত্তারের হয়ে জেল খাটছেন ভাড়াটে আসামি সাইফুল।
জানা গেছে, বন বিভাগের করা মামলায় প্রকৃত আসামি ছাত্তার মিয়া বাইরে অবাধে ঘুরে বেড়ালেও তার পরিবর্তে কারাবন্দি সাইফুল ইসলাম। প্রকৃত আসামি সাত্তার মিয়া (৪৫) গাজীপুরেরই কালিয়াকৈর উপজেলার মোথাজুরী তালচালা এলাকার আলফাজ উদ্দিনের ছেলে। আর তার পরিবর্তে কারাগারে থাকা সাইফুল ইসলাম (৩০) একই এলাকার রহিম বাদশার ছেলে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া রেঞ্জ অফিসের অধীন এলাকার বন থেকে গাছ কাটার সময় গত ৯ সেপ্টেম্বর হাতেনাতে কয়েকজনকে আটক করেন বন কর্মকর্তারা। পরে দেশীয় অস্ত্রের মুখে পিছু হটলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করে বন বিভাগ। এ ঘটনার তিন মাস পর গত ৭ ডিসেম্বর আদালতে হাজিরা দেয় প্রধান আসামি সাত্তার মিয়া। অভিযোগ আমলে নিয়ে তাকে কারাগারে পাঠান বিচারক।
কালিয়াকৈর ফুলবাড়িয়া রেঞ্জের কাচিঘাটা বিট অফিসার শরিফ খান বলেন, ‘স্থানীয়দের অস্ত্রের মুখে আমরা অসহায়, তাই আলামত জব্দ করে সেদিন ফিরে এসে মামলা করি।’
কিন্তু অনুসন্ধান বলছে, যে সাত্তারের থাকার কথা কারাগারে, তিনি দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন নিজ এলাকাতেই।
এই সাত্তারের ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের তালচালা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে গতকাল তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফোনে কল করলে জানান, ব্যবসায়িক কাজে অবস্থান করছেন মাওনা এলাকায়। যদিও আদালতের নথি বলছে, এই মুহূর্তে তার থাকার কথা গাজীপুর জেলা কারাগারে। সাত্তার মিয়া যদি নিজ এলাকায় স্বাভাবিকভাবে ঘুরে বেড়ান, তাহলে কারাগারে সাত্তার নামে যে বন্দিকে রাখা হয়েছে তিনি আসলে কে? আর কীভাবে আদালত, পুলিশ, কারা কর্তৃপক্ষ সব ধাপ পেরিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ব্যক্তি বন্দি হয়ে গেলেন সাত্তার পরিচয়ে।
আশ্চর্যের বিষয়, কারাগারের নথিতেও বন্দির নাম সাত্তার; কিন্তু ছবি মেলাতে গেলেই ধরা পড়ে যায় প্রকৃত ঘটনা। সাত্তার নামে জেলে থাকা ব্যক্তির প্রকৃত পরিচয় সাইফুল ইসলাম। তাহলে সাত্তার পরিচয়ে কীভাবে কারাগারে সাইফুল? জানতে চাইলে, আদালতকে অসঙ্গতির বিষয়টি জানিয়ে চিঠি পাঠান জেল সুপার।
গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ রফিকুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আসামি এন্ট্রি করার সময় সে তার নাম সাত্তার বলেছে, তাই সন্দেহ করিনি। পরবর্তীতে জানার পর বায়োমেট্রিক পরীক্ষা করে জানতে পারি সে আসলে সাত্তার না, সাইফুল। এ বিষয়টি আমরা ইতোমধ্যে আদালতে চিঠি দিয়ে অবগত করেছি।’
এই জালিয়াতির বিষয়ে বক্তব্য জানতে বারবার যোগাযোগ করেও সাড়া মেলেনি প্রকৃত আসামি সাত্তারের আইনজীবী শ্যামল সরকারের। যদিও কারাবন্দি সাইফুলের পরিবার স্বীকার করেছে, জামিন পাইয়ে দেয়ার আশ্বাসে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রক্সি হাজিরা দেন সাইফুল।
সাত্তার পরিচয়ে কারাগারে থাকা সাইফুলের বাবা রহিম বাদশা বলেন, ‘আমার ছেলে গার্মেন্টসে চাকরি করে। আমরা জানতাম সে গার্মেন্টসে গিয়েছে; কিন্তু পরবর্তীতে জানতে পারি সে নাকি কারাগারে। আমার ছেলে টাকা নিয়ে এসব করেছে। বিষয়টির জন্য আমরাও অনুতপ্ত।’
এদিকে গাজীপুর জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে এমন প্রক্সি হাজিরা ও জেল খাটার তিনটি ঘটনা শনাক্ত হয়েছে।
মন্তব্য করুন