

ধাপে ধাপে নির্বাচনী কার্যক্রম গুছিয়ে আনছে বিএনপি। এরই মধ্যে প্রায় ২৭৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। বিভিন্ন আসনে প্রার্থী পরিবর্তনও করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে যে কোনো মূল্যে ধানের শীষের বিজয় চান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ লক্ষ্যে ঘোষিত সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঢাকায় ডেকে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। যেখানে বিএনপির সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন এবং প্রার্থীদের করণীয় বিষয়ে অবহিত করেন। বিশেষ করে জনসম্পৃক্ত অতিগুরুত্বপূর্ণ আট দফা নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল শনিবার দিনব্যাপী রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৯০ জন এমপি প্রার্থীর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে। এর আগে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুদিন সম্ভাব্য প্রার্থীদের ডেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। অবশ্য বিএনপি ও এমপি প্রার্থীরা বলছেন, এই বৈঠক মূলত ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম। অর্থাৎ সব দিক সামলেই দলটি ক্ষমতার মসনদে ফেরার লড়াইয়ে নিজেদের প্রস্তুত করছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লক্ষ্য ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করা। যার অংশ হিসেবে এখন ভোট সামনে রেখে এরই মধ্যে প্রাথমিকভাবে মনোনীত দলের সংসদ সদস্য (এমপি) প্রার্থীদের ডেকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ আগামী ২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমান দেশে ফেরার আগেই নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করতে চায় বিএনপি।
জানা গেছে, গতকাল তৃতীয় দিনের মতো দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নির্বাচন সামনে রেখে দলের মনোনীত প্রার্থীদের নির্বাচনী কৌশল ও মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিতে ধারাবাহিক এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সভা শুরু হয়। সভায় সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ ছাড়াও মোট ৯০ জনের মতো প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমদ উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। এ ছাড়া দিনব্যাপী বৈঠকে নির্বাচনী প্রচারসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল এবং জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা রেহান আসাদ, জুবায়ের বাবু ও জামাল হোসেন মজুমদার। সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ থেকে শুরু করে পূরণ ও জমাদান এবং আচরণবিধির বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মো. জকরিয়া। বৈঠকে সন্ধ্যায় ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান কালবেলাকে জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ঘোষিত সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তৃতীয় দিনের মতবিনিয় সভা গতকাল শেষ হয়েছে।
জানা যায়, এর আগে ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বর ১৯০ প্রার্থীর সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়। সভায় প্রার্থীদের মনোননয়পত্র জমা দেওয়ার সময় হলফনামায় নিজেদের বিরুদ্ধে থাকা মামলার সঠিক তথ্য দিতে, মনোনয়ন ফরম পূরণের সময়ে আইনজ্ঞদের সহায়তা নেওয়া ও নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সভায় নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসন, ভোটের প্রচার কৌশল নিয়ে প্রার্থীদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারে বিএনপির প্রতিশ্রুত ফ্যামিলি কার্ড, ফারমার্স কার্ড, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জীবনমান উন্নয়নে মাসিক সম্মানী ভাতা প্রদানসহ যেসব পরিকল্পনা রয়েছে, সেগুলো তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য যে, নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রথম দফায় ২৩৭টি আসনে প্রাথমিক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে বিএনপি। পরে দ্বিতীয় দফায় আরও ৩৬টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। এখন পর্যন্ত ২৭২টি আসনে বিএনপি প্রাথমিক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এর বাইরেও বাগেরহাটের চারটি আসনে নতুন প্রার্থী মনোনয়ন এবং চট্টগ্রাম-৪ আসনে (সীতাকুণ্ড) প্রার্থিতায় পরিবর্তন এনেছে বিএনপি।
বাগেরহাটে ৪ আসনে নতুন প্রার্থী:
জানা গেছে, দীর্ঘদিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বাগেরহাট জেলার চারটি সংসদীয় আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। বাগেরহাট-১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মতুয়া সমাজ ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক কপিল কৃষ্ণ মণ্ডল, বাগেরহাট-২ (সদর ও কচুয়া) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন। অন্যদিকে, বাগেরহাট-৩ (মোংলা-রামপাল) আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন বাগেরহাট জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম। বাগেরহাট-৪ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন মতুয়া সমাজ ঐক্যজোটের সভাপতি সোমনাথ দে। এ চার প্রার্থী গতকাল গুলশানে বিএনপির প্রার্থীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
গতকালের বৈঠক প্রসঙ্গে কক্সবাজার-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী লুৎফর রহমান কাজল কালবেলাকে বলেন, বৈঠকটি মূলত ওরিয়েন্টেশন। যেখানে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার কৌশলসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতারা দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।
মন্তব্য করুন