ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বর্বরতা চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। স্থল অভিযানে গিয়ে তাদের আরেক বর্বরতার দৃশ্য এবার সামনে এলো। গাজায় ধ্বংসযজ্ঞের পাশাপাশি গণহারে ফিলিস্তিনি পুরুষদের আটক করছে ইসরায়েলি সেনারা। এ সময় তাদের প্রায় নগ্ন করে সারিবদ্ধভাবে বসিয়ে রাখা হচ্ছে বা সামরিক গাড়িতে ওঠানো হচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের এভাবে গণগ্রেপ্তার ও নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। খবর সিএনএনের।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পড়েছে তাতে দেখা যায়, যেসব ফিলিস্তিনি পুরুষকে গণগ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের অন্তর্বাস পরিয়ে চোখ বেঁধে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এমনকি ছবিতে তাদের সেনাবাহিনীর গাড়ির মেঝেতে ফেলে রাখতে দেখা গেছে। এসব ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপট ও তারিখ স্পষ্ট নয়। তবে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের স্বজন ও পরিবার এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সিএনএন গ্রেপ্তার করা কয়েক ব্যক্তি ও একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছে। এসব কথোপকথনের মাধ্যমে তারা নিশ্চিত হয়েছে যে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সঙ্গে হামাসের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দ্য ইউরো-মেডিটারিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটর গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ছবি প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে। এসব লোকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে ইসরায়েলি সেনারা। পর্যবেক্ষক এ সংস্থা জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা বিক্ষিপ্তভাবে গণগ্রেপ্তার চালাচ্ছে। এ তালিকায় সাংবাদিক, চিকিৎসক, শিক্ষাবিদসহ বৃদ্ধরা রয়েছেন। সিএনএন জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসব ভিডিও বেইত লাহিয়া অঞ্চলের। বিষয়টি নিয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ফোর্সের মন্তব্য জানতে চাইলে তারা সাড়া দেয়নি।
যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদে ভোট: এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি ইস্যুতে একটি খসড়া প্রস্তাব নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গতকাল শুক্রবার ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ব সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের যুদ্ধবিরতির আহ্বানের পর নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে এ ভোটাভুটি হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভোটাভুটির পর এ সংক্রান্ত কোন সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।
জাতিসংঘের সনদের ৯৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে বুধবার গুতেরেস নিরাপত্তা পরিষদকে যুদ্ধবিরতির জন্য বৈঠকের আহ্বান জানান। এ অনুচ্ছেদ অনুসারে, নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত যে কোনো বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদকে বৈঠকের আহ্বান জানাতে পারেন জাতিসংঘ মহাসচিব। জাতিসংঘের ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা। কারণ গত কয়েক দশকের মধ্যে কোনো মহাসচিব এমন পদক্ষেপ নেয়নি। এ ছাড়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই গাজায় মানবিক বিপর্যয় রোধে সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন গুতেরেস। এদিকে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক আশা প্রকাশ করে বলেন, তিনি মনে করেন নিরাপত্তা পরিষদ গুতেরেসের আহ্বানকে গুরুত্বসহ আলোচনা করবে এবং ভোটের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতিতে একমত হবে। ডুজারিক আরও জানান, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশ নিজেদের মধ্যেও যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলের হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ১৭০ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ৪৬ হাজারের বেশি মানুষ। যার অধিকাংশই নারী ও শিশু। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন ৭ হাজারেরও বেশি মানুষ। গাজার ৬০ ভাগের বেশি বাড়িঘর মিটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।