মুক্তিযুদ্ধের নৃশংসতার সাক্ষী চট্টগ্রামের রাউজান-রাঙ্গুনিয়া। টানা তিন দশক এই রাউজান সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিল। চট্টগ্রাম উত্তরের এসব এলাকা ঘিরেই যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে দুর্গ গড়েন যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী। এ দুই আসন থেকে বিভিন্ন মেয়াদে চারবার নির্বাচিত হয়েছিলেন সাকা চৌধুরী ও তার ভাই গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রামের উত্তরে সাকার দুর্গ গুঁড়িয়ে এবার নতুন রেকর্ড গড়েছেন ড. হাছান মাহমুদ। রাঙ্গুনিয়া থেকে চারবার নির্বাচিত ড. হাছান আগের মন্ত্রিসভায় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন; এবার তাকে দেওয়া হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত কোনো সংসদ সদস্যের পরপর দুটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ার নজির এটিই প্রথম।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসন থেকে (দ্বিতীয় সর্বোচ্চ) ১ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭৬ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। অন্যদিকে, দক্ষিণ জেলার দুটি আসন থেকে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন আবদুল মোতালেব ও মুজিবুর রহমান। তারা দুজনই বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি) খেতাবপ্রাপ্ত।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এ দুই এলাকায় ছিল সাকা পরিবারের প্রচণ্ড দাপট। রাউজান-রাঙ্গুনিয়াসহ ফটিকছড়ি আসন থেকে যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত এ বিএনপি নেতা বিভিন্ন মেয়াদে ছয়বার এমপি নির্বাচিত হন। রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া থেকে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী দুই মেয়াদে এমপি নির্বাচিত হন। এই দীর্ঘমেয়াদে রাউজান-রাঙ্গুনিয়াসহ চট্টগ্রাম উত্তর জেলার বিভিন্ন এলাকায় তারা ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তোলেন। এরপর সাকার ‘নিয়ন্ত্রিত’ এলাকাটি বদলে যেতে শুরু করে ২০০৮ সালের পর থেকে। ওই বছর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়নে রাউজান আসন থেকে সাকা চৌধুরীকে পরাজিত করেন ড. হাছান মাহমুদ। এরপর থেকে বদলে যেতে থাকে উত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি রাঙ্গুনিয়া থেকে টানা নির্বাচিত হন। সবশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে রাঙ্গুনিয়া থেকে চতুর্থ দফায় এমপি নির্বাচিত হন তিনি।
এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এমরুল করিম রাশেদ কালবেলাকে বলেন, ড. হাছান মাহমুদ টানা চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, যা রাঙ্গুনিয়ার ইতিহাসে রেকর্ড। তা ছাড়া দীর্ঘদিন তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন শেষে এবার তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন; এটিও চট্টগ্রামে নতুন রেকর্ড, চট্টগ্রামবাসীর বড় পাওয়া।
দক্ষিণে ‘সিআইপি চমক’: এবারের সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের দক্ষিণের পাঁচটি আসনের মধ্যে দুই আসনে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রতীকের দুই প্রার্থী। চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া) ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের নৌকা ডুবিয়ে উড়েছে ঈগল। সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মোতালেব এবং বাঁশখালীতে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান। আবদুল মোতালেব সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। স্বনামধন্য ‘বনফুল’ গ্রুপসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি।
অন্যদিকে, বাঁশখালী থেকে নির্বাচিত মুজিবুর রহমান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ‘স্মার্ট’ গ্রুপসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তিনি। দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য দুজনই পেয়েছেন সিআইপি খেতাব। কাকতালীয়ভাবে স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর প্রতীকই ছিল ঈগল।
নির্বাচিত হওয়ার পর ঐক্যের ভিত্তিতে নিজ নিজ এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালানোর কথা জানিয়েছেন আবদুল মোতালেব ও মুজিবুর রহমান। কালবেলাকে তারা বলেন, এ বিজয় এলাকাবাসীর। আমরা বিভক্ত হব না। সবাইকে নিয়ে ঐক্য অটুট রেখে সমৃদ্ধ এলাকা গড়ে তুলব।