মামি মিজুতোরি বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলায় কতটুকু সক্ষম, সেটা দেখতে এসেছি। বিশেষ করে সাইক্লোন কীভাবে মোকাবিলা করে। কারণ প্রতিনিয়ত জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। ১৯৭০ সাল থেকে বাংলাদেশ এসব দুর্যোগ মোকাবিলা করে মৃত্যুহার কমিয়েছে, যা বিশ্বের জন্য বড় উদাহরণ। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে জলবায়ু পরিবর্তন দিনে দিনে ঝুঁকির পর্যায়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর এসব মোকাবিলা করতে হচ্ছে। জাতিসংঘ বাংলাদেশের দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়াতে আরও সহযোগিতা করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, বিশ্বের দুর্যোগ ঝুঁকিতে থাকা ৩০টি দেশ নির্বাচিত করে তাদের আগাম দুর্যোগের বার্তা কীভাবে পাওয়া যায়, সে ধরনের প্রকল্পের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। এ তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম। দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় আগাম বার্তা কীভাবে দেওয়া যায়, তা নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেসের নির্দেশনা আছে। বাংলাদেশে কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, কিন্তু সেগুলো পুরোনো। সেজন্য নতুন পদ্ধতি ব্যবহারে দেশটিকে কীভাবে সহায়তা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বাংলাদেশের অনেক প্রকল্পেই জাতিসংঘ সহায়তা করে আসছে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় মানুষের সহায়তার জন্য কাজ করছে জাতিসংঘ, বিশেষ করে এসব এলাকায় নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রতি বছরই বন্যায় প্লাবিত হয়। সরকার বন্যা মোকাবিলায় বেশ কিছু প্রকল্প নিয়েছে বলে জেনেছি। দরিদ্র ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে জাতিসংঘ।
এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ বহুজাতিক সংস্থা হিসেবে আমাদের নানা ধরনের সহায়তা করে থাকে। দেশে ঝড়, ভূমিকম্প ও আবহাওয়া সম্পর্কিত দুর্যোগ আসার আগে আগাম বার্তা নিয়ে কীভাবে দুর্যোগটি প্রশমন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা বলেছেন, এক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তুতি খুবই ভালো। ৩০টি দেশ তারা আগাম বার্তার প্রকল্পের জন্য বেছে নিয়েছে। আগাম বার্তার পদ্ধতিকে কীভাবে আরও শক্তিশালী করা যায়, তা নিয়ে মামি মিজুতোরির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিভিন্ন দুর্যোগ কীভাবে প্রশমন করা যায়, এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনি। মন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি বা মানবসৃষ্ট যে কোনো ঝুঁকি মোকাবিলায় জাতিসংঘ আমাদের সহায়তা দেবে। এসব বিষয়ে আমাদের সক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী নারী সংগঠন যুব মহিলা লীগের দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। গেল বছরের ডিসেম্বরে সম্মেলনের মাধ্যমে আলেয়া সারওয়ার ডেইজিকে সভাপতি এবং শারমিন সুলতানা লিলিকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। এরপরই সংগঠনের কর্মসূচি ও সিটি নির্বাচনে সফরকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া দূরত্ব প্রকাশ্য বিরোধের রূপ নেয়। এর ফলে দায়িত্ব পাওয়ার পর সংগঠনের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ছিলেন না সংগঠনের সভাপতি ডেইজি ও তার অনুসারী নেতাকর্মীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক লিলির নেতৃত্বে ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে সংগঠনটি। পরে সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটেন এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের করেন। এর আগে সকাল ৭টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তারা।
ডেইজিপন্থি নেতাকর্মীদের দাবি, অসুস্থ থাকায় সংগঠনের সভাপতি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে থাকতে পারেননি। তবে দলের অপর অংশের দাবি, তিনি অসুস্থ না থাকলেও সভাপতি নির্বাচিত হবার পর বেশ কয়েকবার বিদেশে গিয়েছেন এবং সপ্তাহের পর সপ্তাহ অবস্থান করেছেন। ফলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ছেদ পড়েছে, তৈরি হয়েছে দূরত্ব।
এ বিষয়ে যুব মহিলা লীগের সভাপতি ডেইজির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
আর সংগঠনের সভাপতির সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব বা দূরত্ব নেই দাবি করে সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি কালবেলাকে বলেন, তিনি (ডেইজি) অসুস্থ, তাই কর্মসূচিতে ছিলেন না। এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না।
জানা গেছে, যুব মহিলা লীগের সভাপতির স্বামী-সন্তান আমেরিকায় বসবাস করেন। ফলে অসুস্থ হলে তার পরিচর্যা করার তেমন কেউ নেই ঢাকায়। তাই তিনি শ্বশুরবাড়ি চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন। সিলেট সিটি নির্বাচনের সময় শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর থেকে দলের কর্মকাণ্ডে অনুপস্থিত রয়েছেন।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য নিলুফা ইয়াসমিন নিলু কালবেলাকে বলেন, আমাদের সভাপতি (ডেইজি) শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে আজকের (প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী) অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। তবে তিনি ফিরলে আমরা আবার দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান পালন করব।
সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান পালন নিয়ে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রধান আলোচ্য বিষয়। এ প্রসঙ্গে গত বুধবারের আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বৈঠকেও আলোচনা হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে দ্বিধাবিভক্ত মতামত দিলেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছোট পরিসরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান পালনের নির্দেশনা দেন।
জানা গেছে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এ দ্বন্দ্বে বিভক্ত হয়ে পড়েছে যুব মহিলা লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা ও পদপ্রত্যাশী অন্তত ১৫ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যুব মহিলা লীগ দুই ধারায় বিভক্ত। এক অংশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে। অন্য অংশ পালন করেনি। এদের অনেকে অসুস্থ কিংবা ঢাকার বাইরে অবস্থান করছে বলেও এড়িয়ে যান।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার কমিটি ঘোষণা করা হয়। সে কমিটিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুব মহিলা লীগে ফারজানা ইয়াসমিন সভাপতি, নিলুফা রহমান সাধারণ সম্পাদক, উত্তর যুব মহিলা লীগে তাহেরা খাতুন লুৎফা সভাপতি, শামীমা রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
এর মধ্যে উত্তরের সভাপতি অসুস্থতার কারণে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন, অন্য তিনজনের মধ্য দক্ষিণের সভাপতি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন, অন্য দুজন সাধারণ সম্পাদক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে বিরত ছিলেন।
অসুস্থ থাকায় কর্মসূচিতে অংশ নেননি দাবি করে দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক নিলুফা কালবেলাকে বলেন, দলের দ্বন্দ্বের কিছু নেই। ডেইজি আপা সুস্থ হলেও কর্মসূচি পালন করা হবে। নিলুফার সঙ্গে সুর মিলিয়ে দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শামীমা বলেন, স্বামী ও ছেলে-মেয়ে আমেরিকা থাকায় সভাপতি অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন, অন্য কোনো বিষয় নয়।
মন্তব্য করুন