বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২
মাহমুদুল হাসান
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৩, ০১:১৪ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

জনসংখ্যা কমাতে আগ্রহ নেই

সূচক স্থিতিশীল
পুরোনো ছবি
পুরোনো ছবি

দীর্ঘদিন ধরে দেশের জনসংখ্যা সূচক স্থিতিশীল। এক যুগ ধরে সন্তান জন্মদান হার ২ দশমিক ৩ শতাংশের ঘরে। এখন পর্যন্ত সূচকে কোনো উন্নতি হয়নি। অথচ সরকারের লক্ষ্য ২ দশমিক ১ শতাংশে নামিয়ে আনা। স্বাধীনতার পর ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত পরিবার পরিকল্পনা সেবা ছিল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রিক। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি অধিকার ভিত্তিক প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় উত্তরণ বিষয়ে কাজ করছে। তবুও নিয়ন্ত্রণে আসেনি জনসংখ্যা। উচ্চ জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ জনসংখ্যা নীতি প্রণয়ন করা হয়। যার লক্ষ্য ছিল জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী করা। সংশোধিত রূপে ২০১২ সালের জনসংখ্যা নীতিতে একটি কর্মপরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়। তিন বছরের মধ্যে সন্তান জন্মদান হার ২ শতাংশে নামিয়ে আনার। এরপর কেটে গেছে এক দশক; কিন্তু লক্ষ্য অর্জন আজও অধরা। নীতি অনুসারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও ১ দশমিক ৩৭ শতাংশের ঘরে স্থির রয়েছে। অথচ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় ১ শতাংশে নামিয়ে আনার। এমন প্রেক্ষাপটে এ বছরও দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘জেন্ডার সমতাই শক্তি: নারী ও কন্যাশিশুর মুক্ত উচ্চারণে হোক পৃথিবীর অবারিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন’।

জনসংখ্যা নীতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১২ সালের জনসংখ্যা নীতিতে ২০১৫ সালের মধ্যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির ব্যবহার ৭২ শতাংশে উন্নীত করা। মোট প্রজনন হার ২ দশমিক ১ শতাংশে কমানো এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ শতাংশে কমিয়ে আনার। এক দশক পরও এসব লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভের সর্বশেষ তথ্যমতে, দেশে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে গর্ভনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহারের হার ৬৪ শতাংশ। লক্ষ্য অর্জনে এখনো ৮ শতাংশ অধরা। সন্তান জন্মদান হার ২ দশমিক ৩ শতাংশ। আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। নীতির এসব লক্ষ্য অর্জনে অন্যতম বাধা বাল্যবিয়ে ও কিশোরীদের সন্তান জন্মদান। বিডিএইচএস সর্বশেষ রিপোর্ট মতে, দেশে এখনো বাল্যবিয়ের হার ৫০ শতাংশ। তাদের মধ্যে সন্তান জন্ম দিচ্ছে অন্তত ২৪ শতাংশ। বিডিএইচএসের তথ্য বলছে, ১৯৭৪ সালে শূন্য থেকে ১৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠী ছিল ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২১ সালে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশে। আগামী ২০৬১ সালে কমে পৌঁছাবে ১৯ দশমিক ৯ শতাংশে। অন্যদিকে ১৯৭৪ সালে ৬০ বছর ও তার অধিক বয়সী জনসংখ্যা ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশে। আগামী ২০৬১ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ২২ দশমিক ২ শতাংশে। বয়সের এই কাঠামো পরিবর্তনের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশ নির্ভরশীল আর ৬৫ দশমিক ৩ শতাংশ কর্মক্ষম।

বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে ২০২২ প্রতিবেদন আরও বলছে, বিভাগীয় হিসেবে প্রজন্ম হার সবচেয়ে কম রাজশাহীতে। আর সবচেয়ে বেশি ময়মনসিংহে। রাজশাহীতে প্রজনন হার ২ শতাংশ। ঢাকা ও খুলনায় ২ দশমিক ২ শতাংশ। সিলেটে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। রংপুর ও বরিশালে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। চট্টগ্রামে ২ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ময়মনসিংহে ২ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া আধুনিক গর্ভনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহারের হিসেবে রাজশাহী ও রংপুরে সবচেয়ে বেশি। আর সবচেয়ে কম সিলেটে। রংপুর ও রাজশাহীতে ৬১ শতাংশ। এরপর ময়মনসিংহে ৫৯ শতাংশ। খুলনায় ৫৬ শতাংশ। বরিশালে ৫৪ শতাংশ, ঢাকায় ৫৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৪৯ শতাংশ এবং সিলেটে ৪৪ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে প্রজনন হার একই জায়গায় স্থিতিশীল থাকার কারণে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিম্নমুখী গতিকে বাধাগ্রস্ত করবে। তাই প্রচলিত জনসংখ্যা নীতিকে পরিবর্তন করে নতুন একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। নয়তো জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের প্রধান অধ্যাপক বেলাল হোসেন বলেন, জনসংখ্যা নীতি ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে দম্পতিদের সন্তুষ্টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের ক্ষেত্রে অধিকার নিশ্চিত করে জনসংখ্যা নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। দম্পতির সংশোধিত জনসংখ্যা নীতিতে শিক্ষাকে যুক্ত করতে হবে। কর্মক্ষম জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। কিশোর ও যুবকদের কর্মক্ষম নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে দেশের শ্রমশক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নারী শিক্ষা, নারী ক্ষমতায়ন ও বাল্যবিয়ে রোধ করতে হবে। তাহলেই আমরা লাভবান হবো। তিনি বলেন, একদিকে যেমন গড় আয়ু বাড়ছে। অন্যদিকে তাদের সুস্থতার সঙ্গে কর্মক্ষম হিসেবে ধরে রাখা যায় সে বিষয়েও জোর দিতে হবে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু বলেন, বিদ্যমান জনসংখ্যা নীতি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা থেকেই পরিমার্জনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সংশোধিত নীতিতে কিশোর-কিশোরীদের কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যশিক্ষার সঙ্গে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার কর্মপরিকল্পনাও গ্রহণ করতে হবে। দেশের প্রয়োজনও মিটবে আবার দক্ষ জনশক্তি বিদেশে পাঠাতে পারলে জনসংখ্যা সমস্যাও কমে আসবে। তিনি বলেন, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো দম্পতিকে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। তাদের সক্ষমতার মধ্যে সেবা পৌঁছে দিতে হবে। এরপর তার পছন্দকে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের কাজ হবে তাদের কাউন্সিলিং কিংবা সচেতনতা তৈরি করা

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব অপরিহার্য: উপদেষ্টা

কনভেনশন হলে গেরিলা বৈঠকে গ্রেপ্তার শিমুল ৪ দিনের রিমান্ডে

শাহবাগে এসে ডিএমপি কমিশনারের ‘দুঃখ প্রকাশ’

ইনকিলাব সম্পাদককে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাল ছাত্রশিবির

বিএনপি নেতাকে কোপাল যুবলীগ নেতা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী হাটহাজারী বিমানবন্দর

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ডাকসু নির্বাচন / ১৩২ শিক্ষার্থীকে খাওয়ালেন প্রার্থী, রিটার্নিং কর্মকর্তা বললেন আচরণবিধি লঙ্ঘন

সাদাপাথর লুটপাট নিয়ে সিলেটে গণশুনানি

একাধিক উপকারিতা কাঠবাদামের, যাদের জন্য ক্ষতিকর

১০

একই দিনে দুইবার পরিবর্তন, রাকসু নির্বাচনের নতুন তারিখ নির্ধারণ

১১

পারকি সৈকতের কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ

১২

জয়পুরহাটে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুর্ধর্ষ চুরি

১৩

হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের নামে প্রতারণা, সতর্ক থাকার নির্দেশ

১৪

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের প্রচারণার ভিডিওতে থাকায় বিপাকে শেবাগ

১৫

ভারতের ছাড়া পানি থেকে বাঁচতেই বাঁধ উড়িয়ে দিল পাকিস্তান!

১৬

সিলেটে পানির জন্য হাহাকার, সড়ক অবরোধ

১৭

অপারেশনের পর জ্ঞান না ফেরায় রোগীর মৃত্যু

১৮

শাহপরাণ (রহ.)-এর মাজারে ওরস বৃহস্পতিবার

১৯

অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য পুলিশ ‘ক্ষমা’ চাইবে, জানালেন ফাওজুল কবির

২০
X