আয়কর আইন অনুযায়ী রেফারেন্স মামলার আবেদন করতে হলে নির্ধারিত কর পরিশোধ করে আবেদন করতে হয়। গ্রামীণ কল্যাণের আয়কর-সংক্রান্ত এ জটিলতা নিরসনে নির্ধারিত কর দাবি ও পরিশোধের মধ্যকার করের ২৫ শতাংশ রাজস্ব পরিশোধ সাপেক্ষে উচ্চ আদালতে রেফারেন্স মামলার আবেদন করেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ কল্যাণ। আর রেফারেন্সের শর্ত হিসেবে প্রায় ১২৩ কোটি টাকা আয়কর পরিশোধ করেছে গ্রামীণ কল্যাণ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গ্রামীণ কল্যাণ গ্রামীণ টেলিকমের মাধ্যমে গ্রামীণফোনের শেয়ারে ৫৩ কোটি ২৫ লাখ ৬২ হাজার ৯৪১ টাকা চুক্তি অনুযায়ী বিনিয়োগ করে। দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী, এ বিনিয়োগের ৪২ দশমিক ৬৫ শতাংশ পাবে গ্রামীণ কল্যাণ আর ৫৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ গ্রামীণ টেলিকম। এ বিনিয়োগের বিষয়টি তাদের রিটার্নে উল্লেখ থাকলেও আয়কর নিয়ে একটা জটিলতা ছিল। যেহেতু এটি গ্রামীণ টেলিকমের শেয়ার; তাই আয়কর আইন অনুযায়ী, এ লভ্যাংশের মালিকও প্রতিষ্ঠানটি। এ কারণে গ্রামীণ কল্যাণের অডিটে এ বিনিয়োগকে রিটার্ন অব ইনভেস্ট হিসেবে শনাক্ত করেছে আয়কর বিভাগ। আর তা অন্যান্য উৎস থেকে আয় হিসেবে আদেশ দিয়েছে আয়কর বিভাগ। যার কারণে এ বিনিয়োগের আয় থেকে কর দিতে হবে গ্রামীণ কল্যাণকে। কর অঞ্চল-১৪-এর এ আদেশের বিপরীতে আয়করের আপিল ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হয় গ্রামীণ কল্যাণ। এতে বিচারিক আদেশে বিষয়টি বহাল থাকে। আর আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রেফারেন্স মামলার আবেদন করেছে গ্রামীণ কল্যাণ। আয়কর আইন অনুযায়ী, রেফারেন্স মামলা করতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে করের পার্থক্যের ২৫ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। আর সেই অনুযায়ী, ২০১৯-২০ করবর্ষের ৫৩ কোটি ৭৩ লাখ ২৯ হাজার ৬২৪ টাকা, ২০২০-২১ করবর্ষের ২৪ কোটি ৪৯ লাখ ৪৭ হাজার ৮৭২, ২০২১-২২ করবর্ষের ৪৫ কোটি ১৭ লাখ ৬৯ হাজার ৬১৪ টাকা পরিশোধ করেছে। সব মিলে মোট ১২৩ কোটি টাকা আয়কর পরিশোধ করে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে গ্রামীণ কল্যাণ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর অঞ্চল-১৪-এর সংশ্লিষ্ট এক আয়কর কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালবেলাকে বলেন, মূলত গ্রামীণফোনের শেয়ারে বিনিয়োগের বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। অডিটে গ্রামীণ কল্যাণ উল্লেখ করলেও আয়করের আওতায় ছিল না। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি সামনে এলে আয়কর রিটার্নে অন্যান্য উৎস থেকে আয় হিসাবে দেখানোর আদেশ দিয়েছে আয়কর বিভাগ। এ আদেশের বিপরীতে আয়কর ট্রাইব্যুনালে গিয়েছিল গ্রামীণ কল্যাণ। ট্রাইব্যুনালেও বিষয়টি বহাল রয়েছে। তাই এবার উচ্চ আদালতে রেফারেন্স মামলার আবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
আপিল ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ করবর্ষে গ্রামীণ কল্যাণের দেখানো আয় অনুযায়ী আয়কর নির্ধারণ হয়েছে ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ৩৪ হাজার ৫১৭ টাকা; আর ট্রাইব্যুনালের রায় অনুযায়ী আয়কর হবে ১৯৩ কোটি ৪৩ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪৬ টাকা। আর ২০২০-২১ করবর্ষে গ্রামীণ কল্যাণের আয়কর ছিল ৪৬ কোটি ৭৯ হাজার ৭০৮ টাকা। ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় কর হবে ৮৬ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার ৬৯৬ টাকা। এ ছাড়া ২০২১-২২ করবর্ষে প্রতিষ্ঠানটির রিটার্নে দেখানো আয়কর ছিল ৩৮ কোটি ৩২ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ টাকা। ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রদেয় কর নির্ধারিত হয়েছে ১৬১ কোটি ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৩১ টাকা। শুধু ২০২১-২২ করবর্ষে আয়করের পার্থক্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২২ কোটি ৮২ লাখ ৩১ হাজার ১৯৬ টাকা।