ঈদে নতুন জামা-জুতা কেনা প্রায় শেষ। মানুষ এবার ছুটছে আতর-টুপির দোকানে। দেশি-বিদেশি বাহারি সব আতর-টুপির পাশাপাশি কিনে নিচ্ছেন তসবি আর জায়নামাজ। গতকাল শুক্রবার দুপুরের পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জুমাতুলবিদার দিন গুলিস্তানের খদ্দর মার্কেট, বায়তুল মার্কেট ও ফুটপাতের দোকানগুলোয় ক্রেতার ভিড়। বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটের মাঝের রাস্তায় বসেছে টুপি ও জায়নামাজের দোকান। সেখানেও প্রচুর ক্রেতা সমাগম। তবে দোকানিরা বলছেন, গত বছরের মতো এবার বেচাবিক্রি তেমন নেই।
মুসলমানদের ধর্মীয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পাইকারি ও খুচরা বিক্রির জন্য বিখ্যাত গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের খদ্দর মার্কেট। ভেতরে প্রবেশ করতেই নিচতলায় ‘টপ ইজি ইসলামিক আইটেম’ নামের এক আতর-টুপির দোকান চোখে পড়ে। দোকানটির বিক্রেতা আনাস বলেন, প্রতি বছর ঈদকে ঘিরে এই সময় বেচাবিক্রি থাকলেও এ বছর একদম কম বললেই চলে। দ্বিতীয় তলায় আরবিএস এন্টারপ্রাইজের দোকানি মো. ইমরান বলেন, প্রতি বছরের মতো রমজানকে কেন্দ্র করে আমরা নতুন নতুন আতর-টুপির বড় সংগ্রহ রাখি। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু এ বছর আমাদের তেমন বিক্রি নেই।
মার্কেটটির তৃতীয় তলায় ‘ব্যতিক্রম এন্টারপ্রাইজ’ থেকে খুচরা আতর ব্যবসায়ী মাহমুদুল হাসান আতর দেখছিলেন। মহাখালীতে তার একটি ছোট দোকান আছে। তিনি বলেন, ইমানের একটি অঙ্গ হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। রমজানের মতো পবিত্র এই মাসে যেমন আল্লাহ্পাকের ইবাদত করে, তেমনি এই মাসে মুসলিম উম্মাহ চেষ্টা করে নিজেদের পাক-পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখতে। তাই নামাজের টুপি, আতর, তসবি, জায়নামাজের চাহিদা থাকে এই সময়; কিন্তু এ বছর মানুষের হাতে তেমন টাকা-পয়সা নেই। তাই হয়তো বিক্রি কম। তিনি বলেন, আমি নিজে আতর নিলাম। গত বছর একই আতর যে দামে কিনেছি, এবার সেই আতর প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনলাম।
খদ্দর মার্কেট ছাড়াও বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে টুপি-জায়নামাজ-আতর খুচরা বিক্রি হচ্ছে। এখানে খুচরা টুপি ব্যবসায়ী মোতালেব ইসলাম বলেন, সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাই দোকানটা খুলেছি; কিন্তু বিক্রি নেই। আমাদের সারা বছর যা বিক্রি হয়, তার অর্ধেকের বেশি হয় ঈদে; কিন্তু এবার মার্কেট খোলা থাকলেও নেই সেরকম খদ্দের। এমন টুকটাক বিক্রি দিয়ে তো ঈদের সিজন চলে না।
একই অবস্থা রাজধানীর নিউমার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজা, ইস্টার্ন মল্লিকা, মৌচাক মার্কেট, কাকরাইল মসজিদ, কাঁটাবন, এলিফ্যান্ট রোডসহ বিভিন্ন এলাকার। এসব এলাকার একাধিক টুপি-জায়নামাজ বিক্রেতা জানান, ঈদের আগে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বিক্রি করতেন তারা। আর স্থায়ী দোকানগুলোতে তার সাত-আট গুণ বেশি বিক্রি হতো। এ বছর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য ১০ শতাংশও বিক্রি হয়নি।
কয়েকজন দোকানির সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এমন বেশি যে, ঈদকে কেন্দ্র করে যে লাভের আশা করেছিলাম, তা মনে হচ্ছে হবে না। তারা বলছেন, এসব হলো শৌখিন পণ্য। মানুষের কাছে অতিরিক্ত টাকা থাকলে এসব পণ্য কিনতে আসে; কিন্তু এবার সেটা হয়নি। এবার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেশি। মানুষ আগে তার প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজন মিটিয়ে তারপর এসব জিনিসপত্র কেনেন।