আট বছর আগে ৬ এপ্রিল রাতে ব্লগার নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইনের ছাত্র ছিলেন। চার বছর তদন্ত শেষে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়াসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। পরে আরও সাড়ে তিন বছর কেটে গেলেও আসামিদের আদালতে হাজির না করায় এ মামলার বিচার শুরু হয়নি। কবে শুরু হবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। নিরাপত্তার অজুহাতে ধার্য তারিখের পর অভিযোগ গঠন ছাড়াই পার হচ্ছে এ মামলার কার্যক্রম।
বর্তমানে মামলাটি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে বিচারাধীন। সর্বশেষ গত ২৫ মার্চ অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে কারাগারে আটক আসামিদের আদালতে না পাঠিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ চিঠি পাঠায়। পরে আদালত ১৬ মে দিন ধার্য করেন।
জিয়াউল হক জিয়াসহ এ মামলার আসামিদের মধ্যে আকরাম হোসেন, মো. ওয়ালিউল্লাহ ওরফে ওলি ওরফে তাহেব ওরফে তাহসিন, সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ ওরফে কনিক ও মাওলানা জুনেদ আহাম্মেদ ওরফে সাব্বির ওরফে জুনায়েদ ওরফে তাহের পলাতক রয়েছেন। এ ছাড়া অন্য চার আসামি রশিদুন নবী ভূঁইয়া ওরফে টিপু ওরফে রাসেল ওরফে রফিক ওরফে রায়হান, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, আরাফাত রহমান ও শেখ আব্দুল্লাহ কারাগারে আটক রয়েছেন।
২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল রাতে জবির ক্লাস শেষে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার মেসে ফেরার পথে লক্ষ্মীবাজারের একরামপুর মোড়ে জঙ্গিরা কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে নাজিমুদ্দিনকে। এ ঘটনায়
পরদিন সূত্রাপুর থানার এসআই মো. নুরুল ইসলাম মামলা করেন। ২০২০ সালের ২০ আগস্ট জিয়াউল হক জিয়াসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে সিটিটিসি। ২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। পলাতক পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। একই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি পলাতক পাঁচজনের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ব্লগে লেখালেখির কারণে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা নাজিমুদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ নেতা ও সামরিক শাখার প্রধান সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর জিয়ার পরিকল্পনায় নাজিমুদ্দিনকে হত্যা করা হয়। আসামি মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মনের নেতৃত্বে একটি টিম নাজিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার অবস্থান রেকি করে। আব্দুল্লাহ এ হত্যার ভিডিও ধারণের জন্য এবং হত্যাকারীদের পালাতে সহযোগিতার জন্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। হত্যার পর জিয়াকে জানানো হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, এ মামলাটি অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য থাকলেও আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় না। যে কারণে এ মামলায় অভিযোগ গঠন শুনানি আটকে রয়েছে। এ মামলার বিষয়ে আসামিপক্ষ থেকেও এখন আর কোনো যোগাযোগ করা হয় না।
ট্রাইব্যুনালের এপিপি মো. গোলাম ছারোয়ার খান জাকির কালবেলাকে বলেন, আসামিদের আদালতে হাজির না করায় অভিযোগ গঠন শুনানি হচ্ছে না। আমরা অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য প্রস্তুত রয়েছি। আসামিদের হাজির করলে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু করতে পারব। পরে দ্রুত সাক্ষ্য নিয়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হবে।