জাকির হোসেন লিটন
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২২ এএম
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মন্ত্রী-এমপিদের আচরণবিধি মানাতে কঠোর হচ্ছে ইসি

উপজেলা নির্বাচন
মন্ত্রী-এমপিদের আচরণবিধি মানাতে কঠোর হচ্ছে ইসি

জাতীয় সংসদের মতো উপজেলা নির্বাচনেও মন্ত্রী-এমপিদের আচরণবিধি মানাতে কঠোর হচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আচরণবিধির গুরুতর লঙ্ঘনে শোকজ, তলব ও মামলা করা হবে তাদের বিরুদ্ধে। এমনকি সুষ্ঠু ভোট বাধাগ্রস্ত হলে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতাও বাতিল হতে পারে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সরকারবিরোধী দলগুলোর বর্জনের মুখে নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও আশঙ্কার পরও বড় ধরনের সহিংসতা এবং বিতর্ক ছাড়াই জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন। ওই নির্বাচনে সরকারের হেভিওয়েট প্রার্থীদেরও ছাড় দেয়নি ইসি। শোকজ, তলব, তিরস্কার ও মামলা করা হয় অনেকের বিরুদ্ধে। কঠোর পদক্ষেপের পরও বাগে আনতে না পারা প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের মতো সর্বোচ্চ সিদ্ধান্তও দেয় কমিশন। এত কিছুর পরও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশ জোরালোভাবে আলোচনায় আসছে। গোয়েন্দা রিপোর্টেও উঠে আসছে মাঠের সেসব তথ্য। ফলে বেপরোয়া মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ন্ত্রণে জাতীয় নির্বাচনের সেই ফর্মুলাই বেছে নিচ্ছে কমিশন।

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে মন্ত্রী, এমপি ও সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে শোকজ, তলব, তিরস্কার এবং সর্বশেষ সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গত বৃহস্পতিবার ডিসি-এসপিসহ মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কমিশনের বৈঠকের পর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাটি।

চার ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তিন ধাপের তপশিল এরই মধ্যে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপের তপশিল অনুযায়ী ১৫০টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে ৮ মে। নির্বাচন-পূর্ব সব আনুষ্ঠানিকতায় এসব উপজেলায় প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন প্রার্থীরা। ২১ এপ্রিল দ্বিতীয় ধাপের ১৬১টি উপজেলার মনোনয়নপত্র দাখিল শেষ হয়। আজ (সোমবার) আপিল নিষ্পত্তি শেষ হচ্ছে। এসব উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে ২১ মে।

তৃতীয় ধাপের তপশিল অনুযায়ী, মনোনয়ন ফরম জমার শেষ তারিখ ২ মে, মনোনয়ন যাচাই-বাছাই ৫ মে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ৬ থেকে ৮ মে। আপিল নিষ্পত্তি ৯ থেকে ১১ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১২ মে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ ১৩ মে এবং ভোট ২৯ মে। এই ধাপে ১১২ উপজেলায় ভোট হবে। আর চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলার তপশিল অনুযায়ী, ৫ জুন এসব উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৯ মে, বাছাই ১২ মে, বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১৩ থেকে ১৫ মে, আপিল নিষ্পত্তি ১৬ থেকে ১৮ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৯ মে, প্রতীক বরাদ্দ ২০ মে।

আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বৃহস্পতিবারের ওই বৈঠকে ডিসি-এসপিসহ অংশগ্রহণকারী কয়েকজন নির্বাচনী মাঠের চিত্র তুলে ধরেন। এ সময় বেশিরভাগেরই বক্তব্য ছিল মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণের ফর্মুলা কী হবে, সে সম্পর্কে। এ সময় মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন অনেকেই। কারণ, মন্ত্রী-এমপিরা বিভিন্ন উপজেলায় তাদের পছন্দের প্রার্থী দিয়েছে। প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকায় সেখানে দলের আবার অন্য প্রার্থীও রয়েছেন। কিন্তু মন্ত্রী-এমপিরা পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে তারা নানাভাবে তৎপর রয়েছেন। লক্ষ্যে পৌঁছাতে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন তারা। এমন পরিস্থিতি রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলে কমিশন পাশে থাকবে কি না, নাকি উল্টো দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়ে বদলি হতে হয়। বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে শঙ্কিত মাঠ প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তাদের আশ্বস্ত করা হয়। তাদরে উদ্দেশে কমিশন বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নেওয়া যে কোনো পদক্ষেপের পাশে থাকবে তারা। উপজেলা পরিষদে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন দেখতে চায় কমিশন। বদলির ভয়ে কারও কাছে অবস্থান বিকিয়ে না দিয়ে প্রশাসন ও পুলিশকে নীতিতে অটল থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

ইসির সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা জানান, মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে কমিশনের বৈঠকে ডিসি-এসপিদের দেওয়া বক্তব্য খুব গুরুত্বসহকারে নিয়েছে কমিশন। সেজন্য বৈঠকের পর কমিশনের অনির্ধারিত আলোচনায় ডিসি-এসপিদের বিষয়টি উঠে আসে। এ সময় মাঠ প্রশাসনের মনোবল চাঙ্গা রাখতে এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে বেপরোয়া মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে জাতীয় নির্বাচনের মতো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। গত শনিবার গাইবান্ধায় এক মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীরা সংসদীয় আসনে থাকতে পারবেন। যেহেতু তারা ভোট দিবেন সেক্ষেত্রে তাদের তো থাকতে হবে। তবে কোনো প্রার্থীর পক্ষেই প্রভাব কিংবা প্রচার-প্রচারণায় তারা উপস্থিত থাকতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রার্থী প্রমাণসহ অভিযোগ দিলে ওই এমপি ও প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন চায় সহিংসতামুক্ত একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। এর বাইরে গেলেই শাস্তি পেতে হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আরেক নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর কালবেলাকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিরুদ্ধে কেউ যদি কাজ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো প্রার্থীও যদি অন্যায় কিছু করেন বা আইন না মেনে চলেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে তার প্রার্থিতাও বাতিল হতে পারে। এ ধরনের কঠোর অবস্থানে আমরা জাতীয় নির্বাচনেও ছিলাম। এই নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আমরা একই অবস্থানে থাকব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ধর্মীয় সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে খুলনার রাজনীতিতে পারভেজ মল্লিক

শিক্ষার ভবিষ্যৎ ও আমাদের অদূরদর্শিতা

গাজামুখী শেষ নৌযান ম্যারিনেটও আটক

বাংলাদেশসহ যে ১৭ দলের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিশ্চিত

জুবিনের শেষ মুহূর্তের ভিডিও করা সহশিল্পী গ্রেপ্তার

যে কারণে রাজধানীতে বাস থামিয়ে গুলি-আগুন

‘আজাদ কাশ্মীর’ মন্তব্যে বিতর্ক, মুখ খুললেন সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক

গুগল ম্যাপের গোপন বৈশিষ্ট্য, যা জানেন না অনেকেই

বিশ্বকাপ বাছাইয়ের জন্য চমক রেখে জার্মানির দল ঘোষণা

নদী ইজারা দিল মসজিদ কমিটি

১০

চালু হচ্ছে ভারত-চীন সরাসরি ফ্লাইট

১১

বড় ধাক্কার সামনে লিভারপুল

১২

মেটা কি ফোনের মাইক্রোফোন দিয়ে আপনার কথা শোনে? যা বলছেন ইনস্টাগ্রাম প্রধান

১৩

তারা যে ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে সেটা দারুণ ব্যাপার: সাকিব

১৪

সপ্তাহের সেরা চাকরির বিজ্ঞপ্তি, পদ সংখ্যা ৯৬৩

১৫

ফুটবলে প্রথমবার দেখা গেল ‘গ্রিন কার্ড’, কীভাবে কাজ করবে?

১৬

ডাম্প ট্রাকচাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত

১৭

‘আকাশে মেঘ দেখলেই সবজির দাম বাড়ে’

১৮

রাজধানীতে বাস থামিয়ে গুলি, এরপর দিল আগুন

১৯

ইসলামী ব্যাংকের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ হ্যাকড

২০
X